
Basics of Fish Keeping / How to Start a Fish Tank Episode 2
অ্যাকোয়ারিয়াম কেন করবেন? কিভাবে করবেন?
দ্বিতীয় পর্ব
নতুন মেছোদের জন্য সহজ সরল গাইডলাইন। কিভাবে সহজে মাছ পুষবো সেই নিয়ে আমার দ্বিতীয় পর্বের লেখা।
চলুন তাহলে শুরু করা যাক দ্বিতীয় পর্ব। জেনে নেওয়া যাক আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর।
••(৬) অ্যাকোয়ারিয়ামে কিছু কষ্টসহিষ্ণু গাছপালা কি উচ্চ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বাঁচানো যেতে পারে?
নিশ্চয়ই পারে, ভ্যালিসনেরিয়া, কাবম্বা, ইলোডিয়া, হাইগ্রোফিলা, লিলি, অ্যাপোনোগেটন, রোটালা, ফ্রগবিট জাতীয় গাছপালা সহজেই বাঁচিয়ে রাখা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে কতগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে যেমন –
(ক) তীব্র আলো দরকার। নূন্যতম T5 LED Tube বা বাল্ব দরকার হবে। উদাহরণ হিসেবে একটি ২×১×১ ফুটের ট্যাঙ্কের জন্য নূন্যতম দুটি T5 লাইট দরকার পড়বে।
(খ) যদি ধরে নেওয়া হয় আলাদা করে কোন ফার্টিলাইজার বা কার্বন ডাই অক্সাইড দেওয়া হবে না, সেক্ষেত্রে গাছপালা প্রাথমিকভাবে অ্যাকোয়ারিয়ামের জল ও সাবস্ট্রেট থেকে খাদ্য সংগ্রহ করবে। সেক্ষেত্রে সপ্তাহে একদিন অন্ততঃ ৫০% জল পরিবর্তন দরকার হবে। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো মাছের বর্জ্য গাছ খায় জাতীয় concept মাথায় না রেখে চলাই ভালো।
(গ) গাছপালা একবার লাগানোর পর গোড়া উপড়ে তোলা যাবে না।
(ঘ) গাছপালা লাগানোর জজন্য অবশ্যই বালি বা তারচেয়ে সুক্ষ কোন সাবস্ট্রেট ব্যবহার করতে হবে।
(ঙ) গাছ পুঁতেই পরদিন থেকে মাছ ছাড়া যাবে না, নূন্যতম তিন থেকে চার সপ্তাহ গাছ লেগে যাওয়ার অপেক্ষা করতে হবে ।
(চ) ট্যাঙ্কের সাইজ অনুযায়ী স্রোতযুক্ত ফিল্টারের ব্যবস্থা করতে হবে। (এতটাও স্রোত নয় যে গাছপালা উপড়ে চলে আসে)
(ছ) দিনে নূন্যতম ৭-৮ ঘন্টা একটানা আলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে।
•• (৭) অ্যাকোয়ারিয়ামের জল কিভাবে তৈরি করবো?
অ্যাকোয়ারিয়ামে জল থাকে, আর জলেই মাছ থাকে, জলের উপরেই মাছের জীবন-মৃত্যু অনেকটাই নির্ভর করে। অ্যাকোয়ারিয়াম করার আগে কেমন মাছ করবো, তাঁরা কেমন ধরনের জলে থাকে এই বিষয়টিকে তাই গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন। কথায় বলতে সবই মিষ্টি জল কিন্তু তাদের মধ্যে আসলে বিস্তর পার্থক্য। কোন জলে দ্রবীভূত পদার্থের পরিমাণ কম, কোথাও বেশি, কোথাও জলের আম্লিকতা বেশি তো কোথাও ক্ষারত্ব বেশি। কেউ স্বচ্ছ জলের বাসিন্দা, আবার কেউ কালচে বাদামী রঙের জলে থাকতে পছন্দ করে । এসবের উপর নির্ভর করে প্রতিটি অ্যাকোয়ারিয়ামে আলাদা আলাদা ধরনের মাছের জন্য আলাদা আলাদা রকমের জলের প্রয়োজন হয়। ধরুন কেউ আফ্রিকান হ্রদের সিকলিড মাছ পুষতে চান, তবে তাকে ঐ মাছ রাখতে হলে ঐ হ্রদের মতো জল তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ জলে TDS (Total Dissolve Solid) এর মাত্রা বেশি রাখতে হবে, এবং সেইসাথে pH এর মাত্রাও বেশি রাখতে হবে। আবার যদি কেউ মনে করেন ঐ ট্যাঙ্কেই অস্কার বা সেভেরাম পুষবেন তবে কিন্তু হবে না, কারণ অস্কার, সেভেরাম বা অধিকাংশ দক্ষিণ আমেরিকার মাছেরা যে জলে থাকতে পছন্দ করে তাঁর pH এর মান ৬.৫ এর নীচে এবং TDS ১৫০ এর কম।
অর্থাৎ উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম pH যা জলের অম্লতা ও ক্ষারকীয়তা নির্দেশ করে এবং TDS যা জলের দ্রবীভূত কঠিন পদার্থের মাত্রা নির্দেশ করে তা জল তৈরি করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়াও আরো বড় কতগুলি factor হচ্ছে জলে দ্রবীভূত অ্যামোনিয়া, ক্লোরিন, নাইট্রেট, দ্রবীভূত অক্সিজেন (DO) ইত্যাদির পরিমাণ। তবে সেগুলো নির্ধারণের জন্য বাজারে টেস্টিং কিট কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করে জলে উপরিউক্ত জৈব রাসায়নিকের উপস্থিতি নির্নয় করে নেওয়া যায়।
••( ৮) অ্যাকোয়ারিয়ামে জল ভরলেই কি মাছ রাখা যাবে?
না, যাবে না। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। যতদিন না ট্যাঙ্ক সাইকেল হচ্ছে। অর্থাৎ ট্যাঙ্কে উৎপাদিত জৈব রাসায়নিক পদার্থ ( ট্যাঙ্কে দেওয়া কাঠ-বালি-পাথর ইত্যাদি থেকে লিচিং এর ফলে জলে মিশতে থাকা) বিয়োজিত করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ উপকারী ব্যাক্টেরিয়া কলোনি ট্যাঙ্কের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে ততদিন অপেক্ষা করতে হবে। এই সময় আপনাকে ফিল্টার আলো ইত্যাদি চালিয়ে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে ফিল্টার কখনো বন্ধ করা যায় না, ২৪×৭ ফিল্টার চালাতে হয়। এতে যেমন ট্যাঙ্কের জলের দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ সুষম অবস্থায় থাকে তেমনি ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা বায়োলজিক্যাল ফিল্ট্রেশনও নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে। এর ফলে ট্যাঙ্কের পরিবেশে হঠাৎ কোন বড়সড় পরিবর্তন হয় না। এভাবে দিন পনেরো থেকে একমাস চলার পর ট্যাঙ্কটি মাছের বসবাসের উপযুক্ত হয়ে ওঠে। খেয়াল করলে দেখা যায় এই সময় থেকে ট্যাঙ্কে অ্যালগি জন্মাতে শুরু করে, ট্যাঙ্কের জল একেবারে স্বচ্ছ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে মাছ রাখতে শুরু করা যায়।
••(৯) কি মাছ রাখতে পারি? কতগুলো রাখতে পারি?
শুরুতে আমাদের সবার মনে হয় কি মাছ রাখতে পারি না, যে মাছ দেখি সেটাই ভালো লাগে এবং রাখতে ইচ্ছা করে। কিন্তু বাস্তব হচ্ছে সব মাছ একসাথে রাখা যায় না, একসাথে পোষা যায় না। অ্যাকোয়ারিয়ামের দোকানে একসাথে বিক্রি হচ্ছে মানেই একসাথে রাখা যাবে এরকম কোন কথা নেই। ফলে মাছ ভালো লাগতেই পারে, মনে হতেই পারে এই মাছটা না পুষতে পারলে আমার জীবন বৃথা তবুও লোভ সংবরণ করতেই হবে। কারণ কোন মাছ পোষার আগে তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেওয়া ভালো। পড়াশোনা করে নেওয়া ভালো। কারণ আপনি পয়সা খরচ করে ভালো অ্যাকোয়ারিয়াম, ভালো ফিল্টার, পছন্দসই মাছ কিনতেই পারেন কিন্তু সেই মাছটা আপনি পুষতে পারবেন কি না, বাঁচাতে পারবেন কি না, সেগুলো নির্ভর করবে আপনার ঐ মাছ সম্পর্কে জ্ঞানের উপরে। তাই মাছ কেনার আগে পড়ুন, জানুন, হোম ওয়ার্ক করুন এবং দোকানদারের ২-৪ মিনিটের উপদেশের উপর নির্ভর না করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে মাছ কিনুন। এবং এক্ষেত্রে সঠিক পর্যায়ক্রম হচ্ছে আগে মাছ পছন্দ করুন, সেই মাছ কিভাবে কত সংখ্যায় রাখা যায় জানুন, তারপর তাঁদের রাখার জায়গা হিসেবে করে প্রয়োজন মতো ট্যাঙ্ক বানান, ট্যাঙ্কের সাইজ অনুযায়ী ফিল্ট্রেশন লাগিয়ে ট্যাঙ্ক সাইকেল করে তারপর শেষ ধাপে মাছ কিনে সেই মাছ রাখুন।
স্থলভাগে যেমন বিভিন্ন জীবের খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক তেমনি জলের নীচেও। বিভিন্ন মাংশাসী মাছেরা ছোট বড় শাকাহারী মাছেদের খেয়ে বেঁচে থাকে। এরাও জলের নিচে বাসা বানায়, ডিম-বাচ্চা প্রতিপালন করে, বাচ্চাদের রক্ষা করে, মিলনের ঋতুতে মারামারি করে। ফলে এই বিষয়গুলো চিন্তা ভাবনা না করে মাছ রাখলেই বিপদ। যেমন ধরুন আপনি রঙে মুগ্ধ হয়ে কোন শাকাহারী মাছ কিনে আনলেন কিন্তু তাদের খাবার সম্পর্কে বা কাদের সাথে রাখা যায় সে সম্পর্কে যথেষ্ট খোঁজ নিলেন না, এক্ষেত্রে কিন্তু মাছটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।
তাছাড়াও অ্যাকোয়ারিয়ামের দোকানে আমরা যে সব মাছকে বিক্রি হতে দেখি সেগুলো অধিকাংশই ছোট মাছ বা মাছের বাচ্চা। চারাগাছ দেখে না চিনলে যেমন আপনি বুঝতে পারবেন না চারটি বড় হয়ে কত বড় মহীরুহ হবে মাছের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। দোকানে বিক্রি হওয়া বহু ছোট মাছই প্রাপ্তবয়স্ক হলে দানবীয় চেহারা নিতে পারে। সেক্ষেত্রে ঐ মাছ সম্পর্কে আগে থেকে খোঁজ খবর নিয়ে বড় হলে কতটা জায়গা লাগতে পারে সেই বুঝে বড় ট্যাঙ্ক তৈরি করে তারপর ছোট মাছ কেনা ভালো। অনেকেই হয়তো ভাবেন এখন মাছটা ছোট ছোট জায়গায় রাখি, বড় হলে দেখা যাবে, এটা অত্যন্ত ভুল পদ্ধতি। ছোট জায়গায় মাছের বৃদ্ধি বিকাশ ব্যাহত হয়ে মাছটির নানান ধরনের শারিরীক সমস্যা যেমন হতে পারে, তেমনি অকালমৃত্যুও কোন অস্বাভাবিক কিছু নয় । তাই বন্ধু একটু ভেবে পা ফেলুন।
••(১০) মাছের খাবার কি হবে? কতবার খেতে দেবো?
মাছেরা মুলত তিন প্রকার শাকাহারী, মাংশাসী ও সর্বভূক। অ্যাকোয়ারিয়ামের দোকানে আমরা যাঁদের বিক্রি হতে দেখি তাদের সিংহভাগই হয় মাংশাসী নয় সর্বভূক। ফলে খাওয়া দাওয়া নিয়ে খুব একটা সমস্যা হয় না। বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাছের জন্য ভালো মানের ভাসমান ও ডোবা খাবার পাওয়া যায় । প্যালেট, ফ্লেক, স্টিক ইত্যাদি ধরনের খাবার তো আছেই সাথে ফ্রোজেন এবং লাইভ খাবারও খুব সহজলভ্য। ফলে আজকাল মাছকে কি খাওয়াবো সেটা নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে হয় না । একটু দাম দিয়ে ভালো ব্রান্ডের কোন খাবার খাওয়ালে সহজেই মাছকে ভালো রাখা যায় ।
তবে মূল বিষয়টা হচ্ছে কতোটা খাওয়াবো। মাছ দেখলেই আদর করতে ইচ্ছা করে, আদর করতে পারি না বলে যখনই অ্যাকোয়ারিয়াম দেখি খেতে দিতে ইচ্ছা করে ভাবলে মাছ টিকিয়ে রাখা মুশকিল, কারণ যত মাছ না খেতে পেয়ে মরে তারচেয়ে বেশি মাছ অধিক খেয়ে মরে। তাই খাবার দিতে হবে খুব সাবধানে পরিমাণে বেশি-কম কোনটাই হলে চলবে না, হতে হবে যথাযথ । যাতে মাছের পেট ভরে, বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয় এবং অতিরিক্ত খাবার পড়ে না থাকে। অ্যাকোয়ারিয়ামে অতিরিক্ত খাবার মানেই অ্যাকোয়ারিয়ামের পরিবেশ দূষিত হওয়া , যা কালক্রমে নানান ধরনের রোগ এবং মাছের মৃত্যু ডেকে আনে । তাই সচেতনভাবেই মাছের খাবার দেওয়া বাঞ্ছনীয়। সাধারণত দিনে দুইবার (সকাল ও বিকাল বেলা) খেতে দেওয়া উচিত। এবং মোটামুটিভাবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব খাবার খেয়ে নিতে পারে এরকম পরিমান খেতে দেওয়া উচিত। পাঁচ মিনিটের অনেক আগেই খেয়ে নিচ্ছে দেখলে বুঝতে হবে খাবারের পরিমাণ বাড়ানো দরকার, পাঁচ মিনিটের অতিরিক্ত সময় নিচ্ছে মানেই খাবারের পরিমাণ কমাতে হবে। তবে খাবার কখনোই যেন অ্যাকোয়ারিয়ামে পড়ে না থাকে সেটা বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত খাবার থাকলেই দ্রুত তুলে ফেলতে হবে।
আজকের পর্বে এখানেই থামছি । এই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা ও অভিজ্ঞতা আদান প্রদানের জন্য কমেন্ট বক্স খোলা রইল। আগামী পর্বে দেখা হবে আরও অনেক খুঁটিনাটি নিয়ে। ধন্যবাদ।