Basics of Fish Keeping / How to Start a Fish Tank Episode 3

fishkeeping simplified

Basics of Fish Keeping / How to Start a Fish Tank Episode 3

অ্যাকোয়ারিয়াম কেন করবেন? কিভাবে করবেন?

তৃতীয় পর্ব

নতুন মেছোদের জন্য সহজ সরল মাছ পোষার গাইডলাইন, আজ তৃতীয় পর্ব।
•• ১১) ট্যাঙ্ক ব্যালেন্স কি?
ধরুন আপনি একটি সুন্দর বাড়ি বানালেন, কিন্তু ভালো বাথরুম তৈরি করলেন না, বা বাথরুম যদিও তৈরি হলো বাড়ির বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিকমতো হলো না, তবে কি আপনি সেই বাড়িতে বেশিদিন থাকতে পারবেন? পারবেন না, ঐ বাড়ির পরিবেশ খুব দ্রুত দূষিত হয়ে নানান রোগের আখড়া হয়ে উঠবে। ঠিক তেমনিই অ্যাকোয়ারিয়াম হচ্ছে সুন্দর বাড়ি, ফিল্টার হচ্ছে বাথরুম, এবং ঐ ফিল্টারের মধ্যে বাসা বাঁধা বেনিফিশিয়াল ব্যাক্টেরিয়া যাঁরা ফিল্টারের মধ্যে জমা হওয়া মাছের বর্জ্য পদার্থ বিয়োজিত করে তাঁরা সাফাইকর্মী। সাফাইকর্মীদের ছাড়া যেমন সমাজ চলে না, তেমনি বেনিফিশিয়াল ব্যাক্টেরিয়াদের ছাড়া অ্যাকোয়ারিয়াম চলে না।
এবার ধরুন শহরের জনসংখ্যা ও জনঘনত্বের কথা। যদি শহরের জনসংখ্যার পরিমাণ কম থাকে, এবং শহরের আয়তন বেশি হয় এবং উপযুক্ত সংখ্যক সাফাইকর্মী থাকেন তবে সেই শহর আবর্জনা মুক্ত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে। কিন্তু যদি শহরের জনসংখ্যার তুলনায় শৌচাগার এবং সাফাইকর্মী দুইই কম থাকে সেক্ষেত্রে শহরের পরিবেশ দ্রুত নোংরা হতে থাকে। এবং নানান রোগের কবলে পড়ে শহরের মানুষের গড় আয়ু কমতে থাকে।
এবার আপনার ট্যাঙ্কের কথাটা ভাবুন যদি আপনি আপনার ট্যাঙ্কের ধারণ ক্ষমতার তুলনায় কম মাছ রাখেন, ফিল্টারের সংখ্যা বেশি থাকে এবং সেখানে বেনিফিশিয়াল ব্যাক্টেরিয়াদের কলোনি উপযুক্ত মাত্রায় থাকে তবে সহজেই কিন্তু আপনার ট্যাঙ্ক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রোগহীন সুস্থ মাছের আবাসস্থল হয়ে উঠবে। এই পরিবেশটাই হচ্ছে এক কথায় ট্যাঙ্ক ব্যালেন্স।
••১২) ট্যাঙ্ক সাইকেল কি?
ট্যাঙ্ক ব্যালেন্স একটি ভারসাম্য অবস্থা, সেই ভারসাম্য অবস্থায় পৌঁছানোর রাস্তাটাই ট্যাঙ্ক সাইকেল।
ধরুন আপনি একটি নতুন অ্যাকোয়ারিয়াম তৈরি করে, নতুন জল ঢেলে নতুন ফিল্টার চালিয়ে সাথে সাথে মাছ রাখতে শুরু করলেন, মাছটি কি বাঁচবে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর হচ্ছে না। কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া মাছটির সুস্থ সবলভাবে বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ ঐ যে বাড়ি আছে, বাথরুম আছে সাফাইকর্মী নেই। অর্থাৎ ট্যাঙ্কে মাছ ছাড়ার আগে সাফাইকর্মী নিয়োগ করতে হবে এবং তাঁদের সংখ্যা এতো বাড়াতে হবে যাতে মাছ ছাড়লে ওদের বর্জ্য পদার্থ সহজেই বিয়োজিত হয়ে যায়, এবং অ্যামোনিয়া বা নাইট্রেটের মতো ক্ষতিকারক পদার্থ বেশি মাত্রায় ট্যাঙ্কে না থাকতে পারে। এজন্য সবার আগে দরকার বেনিফিশিয়াল ব্যাক্টেরিয়াদের। যাঁদের আপনি পেয়ে যাবেন পুরোনো কোন অ্যাকোয়ারিয়ামের ফিল্টার প্যাডে। পুরোনো নোংরা ফিল্টার প্যাড যোগাড় করে চালিয়ে দিন আপনার নতুন ট্যাঙ্কে। ২৪×৭ ফিল্টার চালান, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আপনার ট্যাঙ্কে ভর্তি হয়ে যাবে বেনিফিশিয়াল ব্যাক্টেরিয়া, তারপর ধীরেসুস্থে, খুব অল্প অল্প করে মাছ ছাড়ুন, যাতে দুম করে মাছের সংখ্যা (পড়ুন বায়োলোড) বেড়ে না গিয়ে অ্যাকোয়ারিয়ামের ব্যালেন্স নষ্ট না হয়। অল্প কিছু মাছ ছেড়ে তাঁরা সুস্থ সবল থাকলে আবার দু একটা করে মাছ ছাড়তে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন সেই সংখ্যা যেন কখনোই অ্যাকোয়ারিয়ামের ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশি না হয়ে যায়।
••১৩) মাছ ছাড়ার পর ট্যাঙ্ক মেইনটেন্যান্স কিভাবে করবো?
যে কোন প্রাণীর পোষার ক্ষেত্রে পরিচর্যা যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মাছের অ্যাকোয়ারিয়ামের ক্ষেত্রেও তাই। সময় পাচ্ছি না বা ইচ্ছা করছে না-র অজুহাতে সেই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া যায় না। অ্যাকোয়ারিয়ামের দেখভাল পক্রিয়াটি আমরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে করতে পারি, এতে যেমন সময় বাঁচে, তেমনি মাছেরাও সুস্থ থাকতে পারে।
* দৈনিক পরিচর্যা :
ক) দিনে একবার বা দুইবার (সকাল এবং বিকাল, রাত্রি নয়) খেতে দেওয়া।
খ) লাইক জ্বালানো এবং বন্ধ রাখা, অন্যান্য ইলেক্ট্রিক দ্রব্য যেমন পাম্প, ফিল্টার ইত্যাদি ঠিকঠাক চলছে কি না পর্যবেক্ষণ করা।
গ) দিনের কিছুটা সময় মাছকে দেখা, যাতে কোন মাছের কোন সুবিধা অসুবিধা হচ্ছে কি না বোঝা যায়।
** সাপ্তাহিক পরিচর্যা :
ঘ) অ্যাকোয়ারিয়ামে সাইফন করে সাবস্ট্রেট থেকে অতিরিক্ত ময়লা আবর্জনা তুলে ফেলা , এবং সেভাবে ৩০% পর্যন্ত জল পরিবর্তন করে দেওয়া।
ঙ) অ্যাকোয়ারিয়ামের কাঁচের গা থেকে অ্যালগি পরিস্কার করে দেওয়া।
*** মাসিক পরিচর্যা:
চ) একাধিক ফিল্টারের ক্ষেত্রে একটা একটা করে ফিল্টার প্রতি মাসে একবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরিস্কার করা। তবে কখনোই সব ফিল্টার একসাথে পরিস্কার করবেন না, তাহলে বিপুল পরিমাণ বেনিফিশিয়াল ব্যাক্টেরিয়াদের কলোনি নষ্ট হয়ে ট্যাঙ্কের ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যাবে।
ছ) স্কেপ, সাজসজ্জার ছোটখাটো পরিবর্তন ইত্যাদি মাসে একবার করা যেতে পারে।
••১৪) শীতকালে মাছের পরিচর্যা কি হবে?
শীতকাল মানেই বেশিরভাগ ট্রপিক্যাল মাছের ক্ষেত্রে বিশেষ পরিচর্যা নেওয়ার মরশুম। এই মরশুম যেন অনেকটা প্রাকৃতিক এলিমিনেটর। প্রকৃতিতে দূর্বল মাছেরা শীতকালীন আবহাওয়া পরিবর্তন সহ্য না করতে পেরে মারা যায়, শক্তিশালী ও সবল মাছেরা শীত অতিক্রম করে আবার প্রজননের সুযোগ পায়। অর্থাৎ অনেকটা যেন প্রকৃতিই পরীক্ষা নেয় । তবে পয়সা খরচ করে পোষা আদরের মাছ প্রকৃতির এই নির্মম পরীক্ষায় বসুক এটা যেহেতু আমাদের ভালো লাগবে না তাই আমাদের কতগুলো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে
অ) শীতকালে মাছের জন্য হিটার বা থার্মোস্ট্যাটের ব্যবস্থা করে জল গরম রাখা। জলের তাপমাত্রা ২৬-২৮° সেঃ বেশির ট্রপিক্যাল মাছের পছন্দ। সেই অনুযায়ী পুরো মরশুমে এই তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা করা।
আ) মাছেরা শীতল রক্তের প্রাণী, সেকারণেই শীতকালে তাপমাত্রা কমলে এদের চঞ্চলতা কমে যায়, কিছু কিছু মাছ শীতঘুমেও যেতে পারে। সেই কারণেই শীতকালে এদের খাওয়া দাওয়ার অনিহা তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে মাছ খেতে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া। কতটা কমাবেন সেটা সেটা আপনাকেই আপনার মাছের আচরণ দেখে বুঝতে হবে।
ই) শীতকালে ট্যাঙ্কের বেনিফিশিয়াল ব্যাক্টেরিয়াদের কার্যক্রম কমতে থাকে, ফলে এই সময় বিভিন্ন রোগের সম্ভবনা তৈরি হয়। যদি আপনি ট্যাঙ্ক সাইকেল, ট্যাঙ্ক ব্যালেন্স, মিনিমাম বায়োলোড, কোরান্টাইন ইত্যাদি শব্দগুলিকে ভালোবেসে ফেলতে পারেন তবে আপনি আপনার অ্যাকোয়ারিয়াম নিয়ে নিশ্চিন্তেই থাকতে পারেন। নচেৎ মাছের রোগভোগ হলে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
••১৫) মাছ যদি মরে যায়?
শরীর থাকলে যেমন রোগ হবেই, এবং নশ্বর শরীরের শেষ পরিনতিও মৃত্যু। ঠেকানোর উপায় নেই। সেক্ষেত্রে অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ মরবেই, তবুও আমি মাছ করবো এই মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামা ভালো। তবে বার্ধক্যজনিত মৃত্যু আটকানো না গেলেও মাছের অকালমৃত্যু আটকানো যায়। এবং সেটির সবচেয়ে উপযুক্ত পদ্ধতি হচ্ছে “Precautions are better than cure”, এই পনেরো নম্বর পয়েন্টটি লেখার আগে যে ১৪ টা পয়েন্ট লিখেছি, কমবেশি সেটাই precaution, রোগ এড়াতে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন, মাছের অপমৃত্যু আক্ষরিকভাবেই অনেক অনেক কমবে। তবুও যদি রোগ হয় কি করবেন?
i) মাছকে খেয়াল করুন, দেখুন সাঁতার কাটতে অসুবিধা, পেট চুপসে যাওয়া, খাবার অনিহা, পাখনা বা লেজ চুপসে যাওয়া, শরীরে কোন ক্ষত, চুপচাপ বসে থাকা ইত্যাদির মতো এক বা একাধিক Symptoms দেখা যাচ্ছে কি না। যদি দেখা যায় তৎক্ষণাৎ আক্রান্ত মাছকে আলাদা করুন। আলাদা করে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করুন।
ii) যদি রোগ নির্ণয় নিজে না করতে পারেন তবে অভিজ্ঞ কারোর সহায়তা নিন। সঠিক রোগ নির্ণয় না হলে কখনোই চিকিৎসা শুরু করবেন না। মনে রাখবেন মাছের অসুখ মানেই সৈন্ধব লবণ আর পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে ঠিক করা যায় না। আর পাঁচটা জীবের মতো বিশেষ রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ চিকিৎসা লাগে। সেটা মেনে নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ।
iii) লাল ওষুধ, নীল ওষুধ জাতীয় ওষুধের কার্যকারিতা না জেনে দুমদাম অ্যাকোয়ারিয়ামে ফোঁটা ফোঁটা ফেলা থেকে বিরত থাকা, এতে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হয়। আজকাল মাছের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে একটু খোঁজাখুঁজি করলেই অনলাইনে বিস্তর পড়াশোনার সুযোগ আছে। সেগুলো পড়ুন, জানুন এবং তারপর চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু করুন। সামাজিক মাধ্যমে সবাই এক্সপার্ট, মাছের রোগ নিয়ে সমস্যায় পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেল্প পোস্ট দিয়ে আপনি যে উপদেশগুলি পাবেন সেগুলোর শতকরা আশি ভাগ ভুলেভরা থাকার সম্ভাবনা, তাই সে পথ পরিত্যাগ করে নিজে পড়াশোনা বা জানার উপর বেশি গুরুত্ব দিন। একান্ত যদি রোগকে কাবু করতে না পারেন তবে অবশ্যই বিষেশজ্ঞের পরামর্শ নিন।
আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি । আগামী পর্বে আরো কিছু বিশেষ তথ্য নিয়ে হাজির হবো। ধন্যবাদ ।

We are accepting the entries for IBAC

X