Basics of Fish Keeping / How to Start a Fish Tank Episode 4
অ্যাকোয়ারিয়াম কেন করবেন? কিভাবে করবেন?
চতুর্থ পর্ব
নতুন মেছোদের জন্য সহজ সরলভাবে মাছ পোষার গাইডলাইন, আজ চতুর্থ এবং শেষ পর্ব ।
বেশ তাহলে শুরু করা যাক আজকের লেখালিখি …
১৬) মাছ কেনার সময় কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার?
রঙিন মাছের দোকানে গেলে মনে হয় পুরো দোকানের সব মাছগুলোই কনে নিই, মনে হয় বাড়িতে একটা বড় অ্যাকোয়ারিয়াম থাকলেই সব মাছ পোষা যাবে, কিন্তু বাস্তবে সেটা তো সম্ভব নয়, তাই অফুরন্ত মাছের ভান্ডার থেকে কয়েকটি মাছকেই আমাদের বেছে নিতে হয়। তবে কোন মাছ কিনবো? কটা কিনবো, এসব সম্পর্কে আমাদের মাছ পোষার শুরুতেই ধারণা তৈরি হয় না, সেক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দোকানদারের উপর নির্ভর করি। সেক্ষেত্রে উভয় পক্ষে ভুলবোঝাবুঝি অনেক সময় বিপদ ডেকে আনতেই পারে।
কোন মাছ কেনার আগে জানা দরকার,
(অ)সেই মাছ কোন কোন মাছের সাথে থাকতে পারে, আপনার অ্যাকোয়ারিয়ামে আগে থেকেই যেসব মাছেরা আছে, তাদের সাথে আদৌ থাকবে কি না, যদি থাকে নির্দ্ধিধায় কিনতে পারেন।
(আ) কোন মাছ কি অনুপতে রাখতে হয়, অর্থাৎ পুরুষ ও স্ত্রী অনুপাত কি? সেটা না জেনে একাধিক পুরুষ বা স্ত্রী মাছ কিনলেই মুশকিল, মারামারি আর চুলোচুলি তো লেগে থাকবেই, অকাল পঞ্চত্ব প্রাপ্তিও খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তবে হ্যাঁ মাছ মাছেরা কিন্তু Made for each other ও হয় না, একটা পুরুষ এবং একটা স্ত্রী মাছ কিনে আনলেন আর জোড়া বেঁধে সুখে শান্তিতে ঘর সংসার করলো এতটাই দুয়ে দুয়ে চার হয় না।
(ই) এরপর মাছ কেনার সময় খেয়াল করুন যে মাছটি আপনি কিনতে চান সে অসুস্থ, দূর্বল বা কোন অস্বাভাবিকতা আছে কি না । বা অসুস্থ মাছেদের সাথে আছে কি না। যদি না থাকে তবেই কিনুন। সুস্থ সবল মাছ বুঝে কেনা আপনার নিজের দায়িত্ব।
(ঈ) মাছটি যে অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখা সেই অ্যাকোয়ারিয়ামের জলই প্লাস্টিকে ভরে মাছ নিন। এতে মাছের স্ট্রেস তুলনামূলক ভাবে কম হয়। মাছটি পরিবহনের সময় অত্যাধিক ঝাঁকুনি না খায়, সেদিকেও নজর রাখুন।
১৭) অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ কিভাবে ছাড়বো?
সাধারণত আমরা যখন দোকান থেকে মাছ কিনি তখন সাধারণত পলিথিনের প্যাকেটে মাছ ভরে আমাদের দেওয়া হয়। এই সময় মাছটি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে বলাই বাহুল্য। বাড়িতে এনে তাকে ধীরে ধীরে আপনার অ্যাকোয়ারিয়ামে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিতে হয় । সেই সুযোগ করে দেওয়ার প্রথম পর্যায় মাছ “সিজন” করা এবং তারপর নতুন অ্যাকোয়ারিয়ামে ছাড়া।
মনে রাখতে হবে যে অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে মাছটি এসেছে সেই অ্যাকোয়ারিয়াম এবং আপনার নিজস্ব অ্যাকোয়ারিয়ামের জলের পরিবেশের মধ্যে কিছুটা ফারাক থাকাই স্বাভাবিক। সেটুকু ফারাক দূর করার জন্য নিম্নলিখিত পর্যায়গুলো মেনে চলা উচিৎ।
ক) মাছটি আনার পর মাছের প্যাকেট খুলে মাছটি মাছটিকে ঐ প্যাকেটের অন্য একটি পাত্রে রাখুন।
খ) যে অ্যাকোয়ারিয়ামে আপনি মাছটি ছাড়তে চান সেখান থেকে একটি সরু এয়ারলাইন পাইপের মাধ্যমে অ্যাকোয়ারিয়ামের জল সাইফন করে ফোঁটা ফোঁটা করে মাছের পাত্রে ফেলুন।
গ) মাছের পাত্রে যতটুকু প্যাকেটের জল ছিল, ফোঁটা ফোঁটা করে তার দ্বিগুণ পরিমাণ নতুন জল ঐ মাছের পাত্রে ঢালুন। এরপর আধ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। প্রয়োজনে মাছের পাত্রে একটু এয়ারেশনের ব্যবস্থা করতে পারেন। এভাবে মাছটি ধাতস্থ হয়ে গেলে তবেই মূল অ্যাকোয়ারিয়ামের ছাড়তে পারেন ।
তবে এটা গেল নতুন অ্যাকোয়ারিয়ামে প্রথম মাছ ছাড়ার পদ্ধতি। তবে প্রতিষ্ঠিত ট্যাঙ্কে পুরোনো মাছের সাথে নতুন মাছ ছাড়তে হলে অথবা কোন মাছের কোন অসুখ-বিসুখের সন্দেহ হলে নতুন কিনে আনা মাছকে প্রথমেই অ্যাকোয়ারিয়ামে পুরোনো মাছের সাথে না ছেড়ে দিন পনেরো কোরান্টাইন ট্যাঙ্কে আইসোলেশনে রাখুন। প্রয়োজনে সেখানে স্ট্রেস রিমুভ করুন। মেডিকেশন দিন, তারপর মাছ একেবারে সুস্থ বুঝলে তবেই মূল ট্যাঙ্কেই ছাড়ুন। তবে ট্যাঙ্ক থেকে ট্যাঙ্ক নিয়ে যাওয়া মানেই কিছু সেই ড্রিপিং পদ্ধতি (ফোঁটা ফোঁটা জল ফেলে সিজন করা) অবলম্বন করা উচিত। এতে যেমন টেম্পারেচার, পিএইচ এবং টিডিএস শক এড়ানো যায় তেমনি মাছের অপমৃত্যু অনেক বেশি পরিমাণে আটকানো যায়।
(১৮) একজন অ্যাকুয়ারিস্টের কি কি সরঞ্জাম দরকার?
অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ পুষতে হলে, অ্যাকোয়ারিয়াম, ফিল্টার, ঢাকনা, পাম্প, হিটার আলো ইত্যাদি বেসিক সরঞ্জাম ছাড়াও কতগুলো অত্যবস্যকীয় সামগ্রী হাতের কাছে রাখা দরকার। যেমন-
•২টি মাছ ধরার জাল (একটি ছোট একটি বড়)
• পি এইচ মিটার
•টিডিএমস মিটার
•কাঁচি
•চিমটা
•টেস্টার (যেহেতু অ্যাকোয়ারিয়ামে জলের কাছেই বিদ্যুৎ থাকে, তাই এটি আপনাকে বড় বিপদ থেকে বাঁচতে পারে)
•ওয়াটার টেস্টিং কিট (রাখলে অবশ্যই ভালো)
•মাছের কিছু সাধারণ ওষুধপত্র
•স্ক্রাবার
• বালতি,গামলা, মগ
•অতিরিক্ত একটি পাম্প, এয়ারলাইন পাইপ, রেগুলেটর, ডিভাইডার
•থার্মোমিটার
•এয়ার স্টোন ইত্যাদি
এই পর্যন্ত লিখে আমরা আমাদের মাছ পোষার সাধারণ গাইড লাইন শেষ করছি। মাছ পুষতে হলে যেমন কিছুটা সাধারণ নিয়মাবলী অনুসরণ করা দরকার, তেমনি এটাও ঠিক অনেক কিছুই আপনাকে নিজেকেই করে করে শিখতে হবে। ভুল ভ্রান্তি হবে, মাছ মরবে, অ্যাকোয়ারিয়াম করার প্রতি হয়তো কখনো কখনো বিতৃষ্ণাও চলে আসবে তবে শেষ পর্যন্ত মাছ আমি করবোই, এই ইচ্ছাশক্তিটাও বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। ভূল থেকে শিক্ষা নিতে হবে, অভিজ্ঞতা তৈরি হবে। সেটাই হবে আপনার আসল গাইডলাইন। ততদিন পর্যন্ত এই সিরিজটাই নতুনদের জন্য একটা পথপ্রদর্শক হয়ে থাক।