Basics of making first Blackwater Tank – Part 1
ব্ল্যাক ওয়াটার ট্যাঙ্ক সেটাপের সহজ পাঠ (প্রথম পর্ব) :
“কালো জলের ট্যাঙ্ক” কথাটা শুনলেই অনেকেরই ভ্রূ কিছুটা কুঁচকে যায়! কষ্ট করে ট্যাঙ্ক করবো,তাতে কি আর কালো পচা জল ভালো লাগবে?! কিন্তু একটু খেয়াল করে দেখলে দেখতে পাবেন যে আমাদের চারপাশের জমা বিল, নয়ানজুলি এসব জায়গায় যে জল জমে থাকে সেগুলোর রঙ কালচেই হয়৷ এই প্রাকৃতিক ট্যানড কালচে জলকে আমাদের কাঁচের ঘরে তৈরী করাই হলো কালো জলের ট্যাঙ্কের মূল মন্ত্র৷ আমাদের এই বিনা রকেট সায়েন্সের একোরিয়াম সেগমেন্টে এর আগে খুব সুন্দর এবং মনোগ্রাহী ভাবে বেসিক ট্যাঙ্ক সেট আপ এবং প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের প্রাথমিক চাহিদাগুলো আলোচনা করা হয়েছে৷ এবার আমরা নজর দেব কিছুটা অন্যরকম কিন্তু বর্তমানে অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্ল্যাক ওয়াটার ট্যাঙ্ক বা কালো জলের ট্যাঙ্কের বেসিক সেট আপের দিকে৷ তার আগে আমাদের একটু ধারণা করে নিতে হবে যে এই ব্ল্যাক ওয়াটার জিনিসটা ঠিক কি বস্তু!
১) হ্যাঁ,হ্যাঁ, ঠিক কথা৷ কালো জলটা ঠিক কি বলুন তো মশাই!
সহজ কথায় বলতে প্রধানতঃ ক্রান্তীয় অঞ্চলের ধীর গতির নদী অথবা স্থির জলের ছোটখাটো বদ্ধ জলাশয়ে চারপাশের গাছপালা থেকে পাতা,ফুল,ফল,ডালপালা জলে পড়ে পচে জৈব এসিড বা ট্যানিন বেরোয় সেটাই জলকে কালচে করে তোলে আর সেটাকেই বলা হয় ব্ল্যাক ওয়াটার৷ এইরকম জায়গায় চারপাশের ঝুলে থাকা গাছপালার জন্য আলোও কম ঢোকে,যাকে বিদেশী ভাষায় পেনসিল লাইট বলে আর কি; আর জলও বেশ আম্লিক হয়ে যায়,মানে পোশাকি ভাষায় আমরা যাকে পি এইচ বলি সেটাও বেশ নিচের দিকেই থাকে৷ এবার একটা ছোট্ট টার্ম এই ব্ল্যাক ওয়াটারের আলোচনার ক্ষেত্রে চলেই আসে,সেটা হলো ‘বায়োটোপ’৷ সহজ কথায় কিছুটা আন্দাজ দিতে গেলে বলতে হয় যে আপনি যদি কোন একটা ভৌগলিক পরিবেশের জলাশয়ের,সেটা মছলন্দপুরের এঁদো পুকুরই হোক বা আমাজনের রিভার বেসিনই হোক,সেখানের কালো জলের পরিবেশকে হুবহু নকল করেন,সেইরকম ডাল,পাতা দিয়ে, জলের প্যারামিটারকে সেই অঞ্চলের মতো ধরে রাখতে পারেন এবং সেই অঞ্চলের আঞ্চলিক মাছকে রাখেন তাহলে সেটাকে বলে ওই নির্দিষ্ট ভৌগলিক অঞ্চলের কালো জলের বায়োটোপ৷ এই বেসিক সেট আপের আলোচনায় এর বেশী গভীরে আর যাচ্ছি না কারণ এই জিনিসটা শুনতে যতোটা সহজ,করাটা ততোটাই কঠিন৷ ফলে আমরা আপাততঃ একটা প্রাথমিক কালো জলের ট্যাঙ্কের পরিবেশের কথাই ভাবি,তারপর তো আপনার অভিজ্ঞতা চলেই আসবে সেই ট্যাঙ্ককে আস্তে আস্তে কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের বায়োটোপে পরিণত করার৷ এখন প্রথম ধাপে আপনি একটা ওই “এনাকোন্ডা” টাইপ সিনেমার পরিবেশ কল্পনা করে নিন মনে মনে,তাহলেই অনেকটা ধারণা চলে আসবে৷ আর আপনার কল্পনাশক্তিকে আরএকটু উস্কে দেওয়ার জন্য লেখার শেষে কয়েকটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কালো জলের প্রাকৃতিক জলাশয়ের ছবি দিলাম৷
২)সে না হয় ধারণা করলাম,কিন্তু তা বলে কি এনাকোন্ডা পুষতে হবে? এরম পচা জায়গায় মাছ থাকে নাকি?!
হুঁ হুঁ বাওয়া,সব থাকে,জানতি পারো না! আমাদের পরিচিত অনেক উজ্জ্বল রঙের মাছেরই কিন্তু বাড়ি কালো জলে কারণ এই রঙ কালো জলে ওদের নিজেদের খুঁজে পেতে ও চেনাতে সাহায্য করে৷ উদাহরণের লিস্টিটা খালি শুনুন,তাহলেই বুঝবেন এই কালো জলের মাহাত্ম্য; নিয়ন টেট্রা, রামিনোজ টেট্রা, কার্ডিনাল টেট্রা, রেমিরেজি, রসবোরা, এপিস্টোগ্রামা এইসব! ডিসকাস, এন্জেলরাও কিন্তু কালো জলে বেশ স্বচ্ছন্দ৷ এবার দেশী মাছের কথায় আসি৷ চ্যাঙ,মাগুর,ল্যাটা,শোল,শাল,বেডিস ইত্যাদি কালো জলের স্বাভাবিক বাসিন্দা৷ আর হ্যাঁ,ওই যে ছোট জারে বন্দী থাকা অসহায় ল্যাজঝোলা বেট্টা,তারাও কিন্তু আদতে কালো জলেরই মাছ!
৩) বটে?! তাহলে তো জিনিসটাকে কালটিভেট করতে হচ্ছে মশাই! তা এসবের জন্য কিরম ট্যাঙ্ক লাগবে??
এই হলো গিয়ে কাজের প্রশ্ন,মানে আপনার সুখের সংসারে অশান্তি লাগানোর প্রথম পদক্ষেপ আর কি! যাই হোক, প্রথমে কি আর করবেন, কাঁচ কাটিয়ে আঠা দিয়ে আটকে অথবা দোকানে বলে একটা নতুন ট্যাঙ্ককে বাড়িতে জায়গা করে দিন৷ ট্যাঙ্কের সাইজটা একটু ট্রিকি৷ খুব ছোট, মানে ওই ১ ফুটের ট্যাঙ্কে কিন্তু কালো জলের প্যারমিটার মেনটেইন করা বেশ চাপের৷ তাই প্রথম দিকে ২/১/১ ফুট অথবা ৩/১.৫/১.৫ ফুট অথবা ৪/২/২ ফুট করাটাই সবথেকে বেশী ভালো (সেক্ষেত্রে কাঁচে টানা দেওয়াটা বাঞ্ছনীয়৷)৷ যতো বড়ো ট্যাঙ্ক হবে ততো তুলনায় ট্যাঙ্কের কালো জলের প্যারামিটারটা স্টেবল রাখতে সুবিধা হবে৷ আর একটা প্রশ্ন আসে মাঝেমধ্যেই,সেটা হল ভিনাইল৷ কালো জলের ট্যাঙ্ক ভিনাইল ছাড়াও করতে পারেন,পিছনে হালকা রঙের দেওয়াল থাকলে জলের কালচে রঙটা বেশ সুন্দর ফুটে ওঠে৷ আর তাছাড়া কালো ভিনাইলও ব্ল্যাক ওয়াটারের ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয়,তার কারন জলের ভিতরের অন্ধকার ভাবটাকে এটা বেশ ধরে রাখতে পারে৷
তাহলে আর কি! যোগাড়যান্তি শুরু করে দিন,সব কিনে-টিনে আনুন,ট্যাঙ্ক তৈরী করে এমন জায়গায় রাখুন যেখানে সরাসরি প্রচুর সূর্য্যের আলো, হট্টোগোল এসব নেই৷ বাড়ির লোকেদের ম্যানেজ করুন৷ এইসব করতে করতেই দেখবেন এক সপ্তাহ চলে গেছে৷ পরের সপ্তাহেই আবার আসবো প্রথম কালো জলের ট্যাঙ্ক তৈরী করার প্রাথমিক বাকী ধাপগুলোয়৷