Basics of making first Blackwater Tank – Part 2
ব্ল্যাক ওয়াটার ট্যাঙ্ক সেটাপের সহজ পাঠ (দ্বিতীয় পর্ব) :
এক সপ্তাহ তো কেটে গেছে, ইতিমধ্যে কালো জলকে ভালোবেসে নতুন ট্যাঙ্ক করে ফেলেছেন নিশ্চই৷ বাড়িতেও আশা করি এতোদিনে বুঝে গেছে যে আপনাকে অত্তো সহজে দমানো যাবে না! তাহলে এবার বরং আসা যাক এই সেট আপের পরের ধাপগুলোর দিকে৷
৪) ট্যাঙ্ক তো হলো,এবারে সাবস্ট্রেট কি দেব?
কালো জলের ক্ষেত্রে সাবস্ট্রেট বেশ ইন্টারেস্টিং ভুমিকা নেয়৷ কালো জলে কিন্তু আপনার স্বাধীনতা আছে গাছপালা দেওয়ার এবং না দেওয়ার দুটোরই! আপনি যদি প্ল্যান্টেড ব্ল্যাকওয়াটার করতে চান তাহলে বেসিক, মাথায় রাখবেন, বেসিক প্ল্যান্টেড সেটাপের মতো গার্ডেন সয়েল অথবা প্যাকেটজাত উর্বর মাটি দিয়ে তার ওপর বালি পাথরের ক্যাপিঙ দিতে পারেন৷ (গাছের বিষয়ে আমরা না হয় পরে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো৷) আর তা না চাইলে সাধারণ কনস্ট্রাকশন বা নদীর বালি ও পাথর দিয়ে সাবস্ট্রেট করা যায়৷ তবে যেরমই সাবস্ট্রেট করুন না কেন, সবথেকে ভালো হয় যে মাছ রাখবেন সেই মাছের কথা মাথায় রেখে সাবস্ট্রেট বাছা, যদি আপনার বাছাই করা মাছ কিছুটা গাছপালার ঝোপজঙ্গল চায় তাহলে প্ল্যান্টেডের প্রয়োজনীয় সাবস্ট্রেট আর যদি তার পছন্দ হয় বালি পাথর গুহা কাঠকুটোর সেট আপ তাহলে সেই অনুযায়ী সাবস্ট্রেট৷ আর কালো জলের সাবস্ট্রেটের ক্ষেত্রে সাদা বা রঙিন চিনি দানা বালি বা রঙ বেরঙের পাথর দেওয়াটা কাম্য নয় দুটো কারণে৷ এক, আপনার কালো জলের ট্যাঙ্কটা হবে প্রকৃতির একপ্রকার বদ্ধ জলাশয়কে অনুকরণ আর সেখানে থাকে না রঙিন পাথর আর না রঙিন চিনিদানা বালি৷ আর দ্বিতীয় কারণ হল জল কালো করার জন্য দেওয়া পাতার অবশিষ্টাংশ পড়ে আপনার ট্যাঙ্কের সাবস্ট্রেটের ওপর একটা কালচে আস্তরণ পড়েই যাবে,ফলে রঙিন পাথর বা বালি আরোই অস্বাভাবিক লাগবে৷ তাই অতি সহজেই সাধারণ বালি দিয়ে জলদি করে ফেলুন আপনার সদ্য তৈরী করা ট্যাঙ্কের সাবস্ট্রেট রেডি৷
৫) বাঃ! বেশ৷ সাবস্ট্রেট না হয় রেডি করলাম৷ এবার এই যে শুরু থেকে ‘কালো জল’, ‘কালো জল’ শুনে আসছি,সেই ব্যাপারটা একটু খোলসা করুন তো! কালো জল ট্যাঙ্কে হবে কিভাবে??
ঠিক কথা৷ কালো জলের ট্যাঙ্কে নিঃসন্দেহে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল জল এবং তার কালো হওয়া৷ আগে না হয় সাধারণত জল কালো হয় কিভাবে একটু জেনে নি আমরা৷ জলকে কালচে ভাব দেয় যে পদার্থটি সেটি হল ট্যানিন৷ এবার এই ট্যানিন আসে কোথা থেকে? সহজ কথায় বলতে গেলে গাছের পাতা ডাল শিকড় ডিকম্পোজ হয়ে গিয়ে৷ জল কালো করার সাথে সাথে এটা আরো দুটো কাজ করে দেয়৷ জলের পিএইচ কমিয়ে দেয়, মানে জলকে আম্লিক করে দেয় আর জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে দেয়৷ তাহলে আপনার ট্যাঙ্কে জল কালো করতে হলে কি করতে হবে? দুটো উপায় আছে৷ প্রথমটা প্রাকৃতিক, মানে জলের মধ্যে আপনাকে গাছের ডালপালা,পাতা ইত্যাদি দিয়ে ট্যানিন ছাড়ার অপেক্ষা করতে হবে৷ আঠাযুক্ত গাছের ডাল পাতা ছাড়া বেশীরভাগ গাছের ডাল পাতাই এর জন্য উপযুক্ত৷ পেয়ারা, মেহগিনি, কাঠবাদাম, বাঁশ, কদম, সাইকাস, তুলসী ইত্যাদির ডাল ও পাতা বহুল ব্যবহৃত এক্ষেত্রে৷ এছাড়া বাজার থেকে কেনা বগউড তো আছেই৷ এসব এনে আগে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিয়ে তারপর জলে চুবিয়ে রেখে পুরো ডুবে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে, যাকে ভালো কথায় ‘সিজন’ করা বলে আর কি! এরপর জলে ডুবে গেলে সেগুলো ট্যাঙ্কে মনমতো করে সাজিয়ে নিন৷ দিয়ে ট্যানিন ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করুন৷ আর দ্বিতীয় উপায় হল বাজার থেকে ব্ল্যাকওয়াটার এক্সট্র্যাক্ট কিনে এনে পরিমাণমতো ট্যাঙ্কের জলে মিশিয়ে দেওয়া৷ এতে চটজলদি জল কালচে হয়ে যাবে৷ এর মধ্যে যে উপায়ই হোক না কেন, এই যে কালো জলটা আপনি করলেন তাতে সঙ্গে সঙ্গে পিএইচ যে খুব কমবে তা নয়,ওই ৬ থেকে ৭ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করবে৷ জলের স্রোত বিশেষ থাকবে না৷ আর জল পরিবর্তনের নিয়মটা প্রথম দিকে মাসে দুবার ২০% করে মোটামুটি হলেও একবার ট্যাঙ্ক স্টেবল হয়ে গেলে বছরে একবার করলেও অসুবিধা হয় না৷ বরং কালো জলের ট্যাঙ্কে বেশী জল পরিবর্তনই অসুবিধাজনক কারণ তাতে জলের প্যারামিটার পালটে যেতে পারে৷ শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর জল ফিলআপ করে দিলেই চলবে৷ সাথে সাথে আপনি যদি কোন পাতা জলে ফেলে জল কালো করেন তাহলে সেই পাতাও মোটামুটি নির্দিষ্ট পরিমাণে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর জলে ফেলতে হবে৷ তারপর যতো দিন যাবে,যতো আপনার ট্যাঙ্ক ম্যাচিওর হবে, দেখবেন জলের প্যারামিটার আস্তে আস্তে আপনার চাহিদামতো জায়গায় চলে আসছে৷ শুধু ধৈর্য্য হারালে চলবে না বন্ধু৷
৬) জলে হিটার দিতে হবে কিনা সেটা তো ঠিক…
দেখুন কালো বদ্ধ বা অল্প স্রোতযুক্ত জলাশয়ে কিন্তু স্রোত না থাকা বা খুব অল্প থাকার কারণে জলের ফ্লো এর স্বাভাবিক উষ্ণতা থাকে না৷ ফলে আমাদের মতো গরমের দেশে শীতকালে জল ঠান্ডা হলেও ম্যাচিওর ও স্টেবল ট্যাঙ্কে হিটার ছাড়াও খুব একটা অসুবিধা হয় না৷ তবে অবশ্যই মাছ বিশেষে এটা ভ্যারি করে৷ যেমন নিয়ন টেট্রা, ডিসকাস রাখলে আপনাকে হিটার দিয়ে জলের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে হবে৷ তাই কালো জলের ট্যাঙ্কে হিটারের ব্যাপারটা ট্যাঙ্কের স্টেবিলিটি আর মাছের চাহিদার ওপর নির্ভর করে৷ তবে প্রথমদিকে হিটার দিয়ে রাখলে নিশ্চিন্ত থাকা যায় কিছুটা,এটুকুই৷ বাকিটা আপনার অভিজ্ঞতাই আপনাকে আস্তে আস্তে বলে দেবে৷ আসলে জানেন তো, আমাদের হবিটা অনেকটা সেহবাগের ব্যাটিং বা বুমরাহ এর বোলিং এর মতো! রান করা বা উইকেট নেওয়ার মতো আমাদেরও প্রাথমিক ও আসল উদ্দেশ্য হল মাছকে তার মতো পরিবেশ দিয়ে ভালো রাখা, তার জন্য আমরা বেসিক জিনিসটা ঠিক রেখে নিজেদের মতো মাছ রাখার ব্যকরণে কিছুটা অদল বদল আনতেই পারি, আর সেটা আমাদের সবথেকে ভালো শেখায় ধৈর্য্য,অভিজ্ঞতা আর মাছকে ভালোবাসা৷
এই হল আজকের সপ্তাহের সহজপাঠ৷ এক সপ্তাহে সাবস্ট্রেট দিয়ে জল ঢেলে ফেলুন দিকি৷ পরের সপ্তাহে আবার আসছি নাহয় ফিল্ট্রেশন, আলো, গাছের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে৷ ভালো থাকুন, সাবধানে থাকুন৷
Image – Tathyapriya Das