Basics of making first Blackwater Tank – Part 3
ব্ল্যাক ওয়াটার ট্যাঙ্ক সেটাপের সহজ পাঠ (তৃতীয় ও শেষ পর্ব):
ইতিমধ্যে নিশ্চই আপনারা ট্যাঙ্ক বানিয়ে তাতে পছন্দমতো সাবস্ট্রেট দিয়ে জল কালো করার জন্য দরকারী কাঠকুটো দিয়ে আপনার ট্যাঙ্ককে সাজিয়ে নিয়েছেন! এবার এই শেষ পর্বে আমরা চোখ রাখবো কালো জলের তথা যে কোনো ট্যাঙ্কের অন্যতম গুরুত্ত্বপূর্ণ ধাপগুলোয়৷
৭) ট্যাঙ্ক রেডি,জল ঢেলে দিয়েছি, এবার ফিল্ট্রেশন কি দেব বলুন তো?
খুব দামী প্রশ্ন৷ ব্ল্যাকওয়াটারের ফিল্ট্রেশন বাছার আগে আমাদের একটু ভাবতে হবে যে আমরা ট্যাঙ্কের মধ্যে যে পরিবেশটা রিক্রিয়েট করার চেষ্টা করছি সেখানে জলের স্রোত কিরম! প্রথম পর্বেই বলা হয়েছে যে কালো জলে সাধারণত জলের স্রোত কম থাকে বা প্রায় থাকেই না৷ তাই ফিল্ট্রেশনের ক্ষেত্রে সেই ব্যাপারটা একটু মাথায় রাখতে হবে৷ তাই এক্ষেত্রে ইন্টারনাল পাওয়ার ফিল্টার না দেওয়াই ভালো৷ সাম্প বা ক্যানিস্টার তো যে কোন ট্যাঙ্কের ক্ষেত্রেই ভালো৷ আর কালো জলে স্পন্জ ফিল্টারও ভালো কাজ করে৷ তবে কালো জলের ট্যাঙ্কে সবথেকে জনপ্রিয় ফিল্টার বোধহয় HOB (হ্যাঙ অন ব্যাক) ফিল্টার৷ এটা জলে হালকা ফ্লো এর পাশাপাশি ওই ন্যাচারাল লুক টা বজায় রাখতে সাহায্য করে যেটা স্পন্জ ফিল্টারের আয়তন বা কৃত্রিম বুদবুদ অনেক সময় নষ্ট করে দেয়৷ যে ফিল্টারই দিন না কেন এটা খেয়াল রাখতে হবে যে তা যেন সবসময় ট্যাঙ্কের জলের পরিমাণের পাঁচগুন জল প্রতিঘন্টায় ফিল্টার করতে পারে৷ তবে এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যে অন্য ট্যাঙ্কদের মতো প্রতি সপ্তাহ অন্তর ফিল্টার পরিষ্কার করা কিন্তু খুব একটা কাজের কথা নয়,কারণ তাতে জলের ব্যালান্স একটু ঘেঁটে যেতে পারে৷ প্রথমদিকে নিয়মিত ভাবে পরিষ্কার করতে হলেও ট্যাঙ্ক ব্যালান্স হয়ে গেলে ফিল্টার পরিষ্কার বেশী না করাই ভালো৷ মনে রাখবেন,প্রকৃতিতে কিন্তু কৃত্রিম কোনো ফিল্টার থাকে না৷ বেনিফিসিয়াল ব্যাকটিরিয়াই জলের ব্যালেন্স মেইনটেন করতে মূখ্য ভূমিকা নেয়৷ তাই আপনাকেও মাথায় রাখতে হবে যে ফিল্ট্রেশনের মাধ্যমে আপানার ট্যাঙ্কে যথেষ্ট বেনিফিশিয়াল ব্যাকটিরিয়া যাতে তৈরী হয় যা ট্যাঙ্কে ভারসাম্য বজায় রাখবে৷
৮) বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তো! আর কি কি ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে কালোজলের ট্যাঙ্ক ব্যালান্স আনতে গেলে?
সবথেকে বড়ো ব্যাপার হলো ধৈর্য্য৷ আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে৷ ট্যাঙ্কে জল দিয়ে ফিল্টার চালু করে আপনাকে কমপক্ষে মাস দুই থেকে তিন অপেক্ষা করতে হবে মাছ ছাড়ার আগে,সাইকেল হতে দিতে হবে ট্যাঙ্ককে৷ সাথে কয়েকটা ব্যাপার তো আছেই যার মধ্যে অন্যতম দরকারী হলো কম বায়োলোড৷ যতো মাছ কম থাকবে,ততো তাদের ওয়েস্ট প্রোডাক্ট কম হবে, ততো স্বাভাবিকভাবে তাদের বিয়োজন হবে আর ততোই কৃত্রিম ফিল্টারের ওপর চাপ কম পড়বে৷ আর জল পরিবর্তনও কম করতে হবে,শুধু জলের স্তর কমে গেলে ফিল আপ করতে হবে৷
৯) কালো জলে কি প্ল্যান্টেড করা যাবে না?
একদম যাবে না যেমন বলা যায় না,তেমনি ব্ল্যাকওয়াটারে আপনি ডাচস্কেপও করতে পারবেন না৷ কারণ? দুটো, জলের লো পিএইচ লেভেল আর কম আলো৷ এটা ঠিক যে কৃত্রিমভাবে ট্যাঙ্কের জলের পিএইচ তেমন কিছু কমানো যায় না,তাও গাছের গ্রোথের ক্ষেত্রে একটু ঝামেলা তো করেই৷ সর্বোপরি কম আলো! ফলে গাছ দিতে হলে কম চাহিদাযুক্ত কিছু গাছ দেওয়াই ভালো যেমন হাইগ্রোফিলা৷ এছাড়াও এমন গাছ যার রুট জলে থাকলেও পাতা থাকে সারফেসে, যেমন ওয়াটার লিলি৷ সাথে ফ্লোটিং প্ল্যান্ট যাদের নিউট্রিয়েন্ট চাহিদা বেশ কম যেমন স্যালভিনিয়া, ফ্রগবিট, ডাকউইড ইত্যাদি খুব ভালো খাপ খায় ওই পরিবেশের সাথে৷
১০)কম আলো বললেন না? সেটা কিরম?
কালো জলের জন্য খুব বেশী লুমেনের আলো প্রয়োজনীয় নয়৷ ভিতরের আলো-আঁধারি পরিবেশ তৈরীর জন্য স্পটলাইট ব্যবহার করা যায়৷ এছাড়া এমনি দ্বিফলা বা LED টিউব বা বাল্ব ব্যবহার করলেও ওপরে ভাসমান পানার জন্য সেই আলো সরাসরি ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না৷ ফলে জলের ভিতরের পরিবেশ আরো রহস্যময় হয়ে ওঠে৷ সেই আলো আঁধারিতে,কালচে পরিবেশে আপনার পছন্দের দেশী বা বিদেশী কালোজলের মাছেদের (যাদের লিস্ট আমি প্রথম পর্বেই দিয়ে দিয়েছি) হঠাৎ হঠাৎ দেখা পাওয়া,লুকিয়ে পড়া দেখতে দেখতে কখন যে দিন কেটে যাবে ধরতে পারবেন না৷
১১) বাঃ! এদ্দিনে মনে হচ্ছে ট্যাঙ্কে জল দিয়ে রেডি করে রাখাটা সার্থক হলো৷ শুধু একটা ছোট্ট চিন্তা৷ দোকান থেকে আনা মাছ আমার কালো জলে দিলে বেঁচে থাকবে তো?
এটা বেশ দরকারী প্রশ্ন৷ নিশ্চই থাকবে,কিন্তু কয়েকটা পদক্ষেপ মাথায় রাখতে হবে৷ মনে রাখবেন দোকানের মাছ অরিজিনালি কালো জলের হলেও সে কিন্তু দোকানে সাধারণ জলেই থাকবে৷ তাই বাড়ি এলে তাকে সিজন করতে হবে খুব ভালো করে৷ তাকে আলাদা পাত্রে রেখে সাইফন পদ্ধতিতে আস্তে আস্তে আপনার ট্যাঙ্কের জলের সাথে খাপ খাওয়াতে হবে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে৷ ট্যাঙ্কে অন্য মাছ আগে থেকেই থেকে থাকলে নিরাপত্তার জন্য নতুন কিনে আনা মাছকে আপনার মেন কালো জলের ট্যাঙ্কের জল দিয়ে ভর্তি করা আরেকটা ছোট কোয়ারান্টাইন ট্যাঙ্কে দিন ১০-১৫ রেখে তার সুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবে মেন ট্যাঙ্কে ছাড়বেন৷ কারণ মনে রাখবেন কালো জলের ট্যাঙ্কে কিন্তু আপনি চাইলেই হুশ করে ৭০% জল পরিবর্তন করতে পারবেন না৷ তাই মাছ ছাড়ার সময় তার সুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই ছাড়ুন৷
আশা করি এই পর্বগুলো এবং এই সেগমেন্টের আগের পর্বগুলোও আপনাকে রঙিন মাছ পোষার প্রাথমিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পেরেছে৷ এছাড়াও কোনো প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় করে ফেলুন কমেন্ট বাক্সে৷ আমরা সবসময়ই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে যথাসাধ্য আপনাদের পাশে থাকবো৷ আর এই কালো জলের ট্যাঙ্কের সহজ পাঠ আপনাদের উপকারে লাগলো কিনা জানাবেন কিন্তু৷ ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, মাছ পুষুন৷
Image – Sutanu Dutta