Basics of Malawi keeping – Part 3
মালাউই সিকলিডের রং চলে যায় কেন?
মালাউই সিকলিড করতে গিয়ে এই কমন সমস্যার সম্মুখীন হয় নি এরকম মানুষ খুব বিরল। হামেশাই শুনি লোকজন বলছেন “দাদা দশটা মাছ কিনেছিলাম, কেনার সময় কি সুন্দর রং ছিল, বাড়িতে আনার দু-চার সপ্তাহ পর দেখা গেল দু-তিনটি মাছের রং রয়েছে। বাকিগুলো কালচে, ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় এ বলছে অমুক খাবার দাও, সে বলছে তমুক ওষুধ দাও তাহলে রং আসবে কিন্তু কিছুই হচ্ছে না, কি করি বলুন তো?”
এই সমস্যাটা যদি খুব চেনা মনে হয়ে থাকে তবে, শখ হলেই হুট করে দু-দশটা মালাউই সিকলিড কিনে নেওয়ার আগে একটু থামুন প্লিজ, “ডিপলি” চিন্তা করে দেখুন তো আগের পর্বগুলোতে খুব বড় ট্যাঙ্ক, বাড়াবাড়ি রকমের ভালো ফিল্ট্রেশন, জলের প্যারামিটার, সেক্সুয়ালি ডাইমর্ফিক, ডমিনেন্স, প্যাক অর্ডার, উপযুক্ত মাছের উপযুক্ত খাবার, ট্যাঙ্ক সাইকেল ইত্যাদি নিয়ে যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল সেই সবকটা বিষয় আপনার ট্যাঙ্কে সঠিকভাবে আছে তো? যদি থাকে তবেই মাছ কেনার ভাবনা শুরু করুন।
পিকক-মবুনা-হ্যাপ যে মাছই কিনুন না কেন মনে রাখবেন তাদের ছোট অবস্থায় কেনাই ভালো। ছোট মাছগুলো বড় হলে তখন কতগুলো মাছের জায়গা আপনার ট্যাঙ্কে হতে পারে সেটা আগাম হিসাব করে নিয়ে ততগুলোই মাছ কেনা উচিত। মনে রাখতে হবে, শুধু ছোট মাছ নয় একই সাইজের মাছও কেনা একটা প্রাথমিক শর্ত । একবার মাছ ট্যাঙ্কে ছাড়ার পর দুম করে কোন মাছ তুলে ফেলা বা নতুন মাছ ছাড়ার পরিকল্পনা না করাই উচিত। এতে কয়েকটা ভালো রকম সুবিধা পাওয়া যায়, যেমন ট্যাঙ্কের মাছেদের প্যাক অর্ডার সঠিকভাবে তৈরি হয়, ট্যাঙ্কে মারামারি, আঘাতজনিত সমস্যা, বা ডমিনেন্স জনিত কারণে রং চলে যাওয়ার মতো ঝঞ্ঝাট তৈরি হয় না।
যে প্রজাতির মাছ কিনুন না কেন মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন ছোটবেলায় বেশিরভাগ মালাউই সিকলিডদের সাধারণ কোন রং থাকে না, মাছ বড় হলে ব্রিডিং ম্যাচিউরিটিতে পৌঁছালে শুধুমাত্র পুরুষ মাছেরই আস্তে আস্তে রং দেখাতে শুরু করে। কিছু কিছু প্রিডেটর হ্যাপেরা দেড়-দুবছর বয়সের পর রং দেখাতে শুরু করছে এরকম ঘটনাও খুব হামেশাই ঘটে । তাই একদল রংহীন ছোট মাছ কে কিনে মাসের পর মাস পুষে রং আনানোর ধৈর্য থাকলে তবেই এদের পুষুন। মনে রাখবেন বহু মালাউই সিকলিডরা ১০-১২ বছর বাঁচে তাই তাদের জন্য ২-২.৫ বছর বয়স রীতিমতো শিশুকাল। এই সময় রং না আসাই খুব স্বাভাবিক। সাধারণত আমরা যাঁদের ভালো রংচঙে মালাউই সিকলিড ট্যাঙ্ক আমরা বিভিন্ন সময় দেখি তাঁরা কিন্তু ওই সময়টা ধৈর্য ধরেই পার করে। ট্যাঙ্ক করার পরের দিন থেকেই ফটোগ্রাফি করার মতো stunning ট্যাঙ্ক তৈরি হয়ে যাবে এই Mindset নিয়ে কোন ভালো ফিশ কিপার কখনোই মালাউই করতে নামে না । মালাউই ট্যাঙ্ক লং টার্ম ইনভেস্টমেন্ট, Maturity আসতে সময় লাগে। কিন্তু সেই সময়টা দিলে ধৈর্যের সুদ মাছের চোখ ধাঁধানো রং-এ ফেরত পাওয়া যায়।
এত কথা বলার পর, তাহলে এবার অবধারিতভাবে এই প্রশ্নটাও পাঠকের মনে আসবে, হাটে-বাজারে যে দেড় দু-ইঞ্চি সাইজের মালাউই সিকলিড পাওয়া যায় সেগুলো তো দারুণ রং থাকে, সেগুলো কিনলে রং থাকবে না? সহজ উত্তর হচ্ছে অল্প সংখ্যক বাদে বাদে বেশিরভাগেরই রং হাজার চেষ্টা করলেও থাকবে না। এর কারণ দুটো, এক এই ধরনের সিকলিড মনোসেক্স পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। অর্থাৎ বিশেষ হরমোন থেরাপির মাধ্যমে (ডিটেলে যাচ্ছি না এর সাথে অনেকের রুটি-রুজি জড়িত, তাই সবটা হাট করে না বলাই ভালো) ছোট থেকেই এদের অল-মেল হিসেবে গড়ে তোলা হয় যাতে দ্রুত বেড়ে ওঠে। (কারণ ফিমেলের গ্রোথ রেট মেলের তুলনায় কম) । দুই, একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর এই অল মেল মাছেদের ডাই (কৃত্রিম রং) কালারিং করা হয়, যাতে অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থাতেই ঊজ্জ্বল রং দেখায়। এমন রং দেখায় যাতে রং-এর চোটেই মাছ চড়া দামে বিক্রি হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই এই ধরনের মাছ কিনলে ধীরে ধীরে হরমোন এবং ডাই এর প্রভাব কমতে থাকে এবং হাট-বাজার থেকে কেনা উজ্জ্বল মাছ কিছুদিনের মধ্যেই ফ্যাকাশে হয়ে যেতে শুরু করে। আরো অবাক করা বিষয় যে মাছ আপনি ঊজ্জ্বল রং দেখে মেল ভেবে কিনেছিলেন তার উপর আর্টিফিশিয়াল পুরুষ হরমোনের প্রভাব কেটে যাওয়ার পর অচিরেই ফিমেলের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে, ফ্যাকাশে রঙে ফিরে আসে । সব মিলিয়ে পুরোটাই ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা। মাঝখান থেকে এই ধরনের রঞ্জক পদার্থ ও আর্টিফিশিয়াল হরমোনের প্রভাবে মাছগুলোর গড় আয়ু কমে যায়, নানা ধরনের শারিরীক সমস্যার সম্মুখীন হয়, ব্রিডিং ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় ইত্যাদি । তাহলে মাছ কিভাবে দেখে বুঝবেন মাছটি আর্টিফিশিয়ালি রং করা নয়?
প্রথমতঃ অপ্রাপ্তবয়স্ক ছোট মাছের কখনোই ঊজ্জ্বল রং থাকবে না, প্রাপ্তবয়স্ক বড় সুস্থ সবল মাছের ধীরে ধীরে রং আসবে। এবং প্রজনন মৌসুম ছাড়া কখনোই সবচেয়ে উজ্জ্বল রং থাকবে না।
দ্বিতীয়তঃ, ডমিনেন্ট মেল ছাড়া সাবডমিনেন্ট মেলগুলো তুলনায় অনেক বেশি হালকা রঙের হবে। অনেক সময় কালার নাও নিতে পার, এক্ষেত্রে চিন্তার কোন কারণ নেই, উপযুক্ত পরিবেশ বা ডমিনেন্ট হবার সুযোগ পেলে তারাও ধীরে ধীরে রং দেখাবে। তাই প্রাথমিক রং দেখে মাছ না কিনে সুস্থ সবল কি না সেটা দেখেই মাছ কিনুন।
তৃতীয়তঃ, কোন প্রতিষ্ঠিত ব্রিডারের থেকে মাছ কিনুন, এতে করে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। ফড়ে, মিডিলম্যান হঠাৎ গজিয়ে ওঠা সেলারদের তুলনায় এদের দায়িত্ব অনেক বেশি।
চতুর্থতঃ, উপযুক্ত মাছের উপযুক্ত দাম দিন। নচেৎ মাছ রং করে বেচে দেওয়ার মতো অসাধু প্রাকটিস কমবে না। একটা বড় মালাউই মেল মাছের গড়ে এক থেকে দেড় বছর লাগে রং সম্পূর্ণ আসতে ততদিন যদি তাকে খাইয়ে-দাইয়ে বড় করতে হয় ততদিনে চাষীদের মাছপিছু কতো খরচ হতে পারে সেটাও চিন্তা করুন। মালাউই সিকলিডের ৬৫-৭০% বাচ্চা ফিমেল হয়, সেগুলোর কমার্শিয়াল ভ্যালু নেই বললেই চলে। বাকি ৩০-৩৫% বাচ্চার উপর চাষীদের লাভ নির্ভর করে । তাতেও তাদের স্বাভাবিক নিয়মে রং আসতে বহু সময় লাগে। এই সময় দেওয়ার পরেও রোগ-বালাই, মর্টালিটি থাকে। তারপরও যদি কোন চাষী সঠিকভাবে চাষ করতে চায় তাহলে তাঁর সঠিকভাবে দাম পাওয়া জরুরি। অন্যথায় মাছ রং করে লট ধরে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া তাঁদেরও কোন উপায় থাকে না। অথবা তাদের থেকে মাছ নিয়ে মিডিলম্যানরা রং করে চড়া দামে বাজারে থাকে। তাই এই চক্রটা ভাঙা খুব জরুরি। যেখানে মাছ পুষিয়ে হিসেবে আমাদের কিন্তু কোথাও না কোথাও একটা দায় থেকেই যাচ্ছে।
•• অ্যাকোয়ারিয়াম কিভাবে সাজানো উচিত :
মালাউই সিকলিডের অ্যাকোয়ারিয়াম মানেই পাথর দিয়ে ভর্তি করতে হবে। এই প্রচলিত ধারণা আমাদের মধ্যে আছেই। তবে এই ধারণাটা আংশিকভাবে ঠিক। মবুনা দের ক্ষেত্রে পাথর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, কারণ পাথরের ফাটল, খাঁজ ইত্যাদির মধ্যেই এরা লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে, বাসা বানায়, বাচ্চা বড় করে। অর্থাৎ যথেষ্ট পরিমাণ পাথর না পেলেই এরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। কিন্তু পিকক বা হ্যাপদের ক্ষেত্রে পাথর খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। এরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওপেন ওয়াটার সুইমার সুক্ষ বালির সাবস্ট্রেট পছন্দ করে। বালি মুখে নিয়ে চালতে থাকে এবং বালির মধ্যে থেকে পোকামাকড় খুঁটে খাওয়ার চেষ্টা করে। এছাড়াও বালিতে ব্রিডিং পিট বানিয়ে প্রজনন করা, ভয় পেলে বালিতে ডুব দিয়ে লুকানোও এদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। সেসব দিক মাথায় রেখে খুব সুক্ষ বালির ইঞ্চি দুয়েকের মতো স্তর দেওয়া খুব জরুরি। পাথর খুব বেশি না হলেও চলবে। তবে মনে রাখা ভালো বালি পাথর যাই দিন না কেন সেটা যেন খুব ধারালো কিছু না হয়। এক্ষেত্রে বেলেপাথর, চুনাপাথর ইত্যাদি যেমন ব্যবহার করা যায় তেমনি নদীর সুক্ষ বালিও সাবস্ট্রেট হিসেবে ব্যবহার করা যেতেই পারে। অ্যাকোয়ারিয়ামে ভারী পাথর ব্যবহার করলে পাথর যেন সরাসরি কাঁচের সংস্পর্শে না আসে সেটাও খেয়াল রাখা জরুরি। নচেৎ পাথরের চাপে কাঁচ ভেঙ্গে দূর্ঘটনা ঘটে যাওয়া আস্বাভাবিক নয়। সাধারণত পাথরের নীচে থার্মোকল বা ফোম ব্যবহার করে এই সমস্যা এড়ানো একটি প্রচলিত পদ্ধতি। তবে এই পদ্ধতিতে একটি বড় অসুবিধা হচ্ছে পাথরের নীচে বা থার্মোকলের নীচে ডেড স্পট তৈরি হওয়া। যেখানে প্রচুর পরিমাণে ময়লা জমা হতে থাকলে অ্যামোনিয়া স্পাইক হতে পারে। অ্যামোনিয়া স্পাইক রুখতে হলে ফিল্ট্রেশন যেমন ভালো রাখতেই হবে তেমনি ট্যাঙ্ক জুড়ে জলের স্রোত যেন চক্রাকারে আবর্তিত হতে পারে সেই দিকটিও খেয়াল রাখতে হবে। এতে কোন একটি নির্দিষ্ট ডেড স্পটে ময়লা আবর্জনা জমার পরিমাণ কমবে । তাছাড়া মাঝেমধ্যে সাইফন করে বা পাথর শিফট করে ময়লা পরিষ্কার করে নেওয়াও যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে বলাই বাহুল্য ভারী পাথর নড়ানো-চরানোর কাজটা খুব সাবধানে করতে হবে।
মালাউই সিকলিডের অ্যাকোয়ারিয়ামে সাধারণত সেভাবে কোন জীবন্ত গাছ ব্যবহার করা হয় না। কারণ একদিকে যেমন এই মাছেরা গাছের গোড়া থেকে তুলে পাতা শিকড় ছিঁড়ে নষ্ট করে, তেমনি এরা যে হার্ড ওয়াটারে থাকতে পছন্দ করে সেখানে স্বাভাবিকভাবেই খুব বেশি গাছপালা বাঁচতে পারে না। ভ্যালিসনেরিয়া, ইলোডিয়া জাতীয় কিছু গাছ মালাউইর প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্মায়, সেগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সাবস্ট্রেট খোঁড়াখুড়ির সমস্যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গাছের টেকা মুশকিল হয়ে পড়ে।
•• মালাউই ট্যাঙ্কে আলোর ব্যবহার :
মালাউই সিকলিডরা দিবাচর মাছ, এবং মালাউই হ্রদের স্বচ্ছ জলে বহুদূর পর্যন্ত সূর্যের আলো প্রবেশ করে ফলো আলোকিত পরিবেশই এরা বেশ পছন্দ করে। ফলতঃ উজ্জ্বল সাদা আলো এদের জন্য খুবই ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়। আলো ঊজ্জ্বল হলে এদের রং যেমন খুব ভালো বোঝা যায়, তেমনি পাথরের উপর শ্যাওলা তৈরি হতেও উজ্জ্বল আলো সাহায্য করে। শ্যাওলা তৈরি হলে ট্যাঙ্কে একটা ন্যাচারাল লুক তৈরি হয়। মবুনারা শ্যাওলা খুঁটে খুঁটে খেয়ে নিজেদের খাদ্যের চাহিদা কিছুটা মিটিয়ে নিতে পারে।
পরিশেষে আবার বলি, সহজভাবে লেখার স্বার্থে অনেক জটিল বিষয়ের অতি সরলীকরণে বাধ্য হয়েছি, এবং সেটা শুধুমাত্র নতুন মেছোদের কথা ভেবেই। কোনকিছু পড়ে যেমন সব অভিজ্ঞতা তৈরি করা যায় না, কোনকিছু লিখেও তেমন সব অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করা যায় না। যতক্ষণ না হাতে কলমে করা হচ্ছে অনেক সমস্যাই ঠিকঠাকভাবে অনুভব করা যায় না। সেজন্য হাতে কলমে মালাউই পোষার অভিজ্ঞতা প্রতিটা হবিস্টের হোক, এবং তাদের অভিজ্ঞতায় পাইরেটস ডেন আরো সমৃদ্ধ হোক এই কামনা নিয়ে শেষ করলাম