Basics of Planted Tank Episode : 1

fishkeeping simplified

Basics of Planted Tank Episode : 1

প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের সহজপাঠ

প্রথম পর্ব

যেমন কথা দিয়েছিলাম, তেমনই পাইরেটস’ ডেন নিয়ে এল নতুন সেগমেন্ট শুধুমাত্র নতুনদের জন্য। টেকনোলজি জটিলতা, বিজ্ঞানের লাল চোখকে যতদূর সম্ভব বাইপাস করে সহজ সরল ভাষায় শিখবো অ্যাকোয়ারিয়ামের প্রাথমিক পাঠ। আজ লেখা থাকছে প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক নিয়ে।
অ্যাকোয়ারিয়ামের রকমফের তো বড় একটা কম না, কিন্তু তাতেও যত রকমের অ্যাকোয়ারিয়াম হয় তার মধ্যে সবথেকে মনোলোভা বোধহয় প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক। অন্তত আমার এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই! জলভরা কাঁচবাক্সের মধ্যে সবুজ সতেজ গাছের বাড়বাড়ন্ত, কোথাওবা পাথরকে জড়িয়ে থাকা কাঠের গা’বেয়ে মসের বেড়ে ওঠা। মনে মনে কোনো এক আদিম রহস্যময় দুনিয়ায় হারিয়ে যাওয়ার এরকম অমোঘ আমন্ত্রণে সাড়া না দিয়ে থাকা মুশকিল।
সুতরাং “একটা প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক করবো” এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে নতুন হবিস্টদের খুব বেশি সময় লাগেনা। তারপর ট্যাঙ্ক, বালি, পাথর, কাঠ এবং গাছ কিনে প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক শুরু করার যা অপেক্ষা। গোলটা বাধে এর পর। গাছের কেন হলুদ হয়ে যাচ্ছে? পাতা কেন গলে যাচ্ছে? জল কেন সবুজ রঙের? এরকম হাজারো সমস্যা এসে জড়ো হয়। আর প্রশ্নগুলোর থেকে তার উত্তর যে জটিল হবেই হবে এটা তো চিরকালীন সত্য!!! আর উত্তরগুলো যদি হয় লাইট ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি কি বোটানি ঘেঁষা! যদি মনে হয় ফোটন কণা কিভাবে ক্লোরোফিলকে অ্যাক্টিভেট করে সেটা না বুঝলে প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক হবেনা! যদি মনে হয় parts per million কষতে না পারলে গাছ বাঁচানো সম্ভব নয়! তবে আর কি? সোনায় সোহাগা!
এরপর পরিণতি দুটো। হয় আপনি যাবতীয় বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে জ্ঞানসমুদ্রে ঝাঁপ দিলেন এবং পরবর্তীতে প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কে সফলতা পেলেন। নতুবা প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ককে বেশ উচ্চ লেভেলের চ্যাপ্টার বিবেচনা করে দূরে সরিয়ে রাখলেন এবং চিরকালই অ্যাকোয়ারিয়ামের এক কোনায় একটা জীর্ণ আমাজন সোর্ড কি অ্যালগি মাখানো আনুবিয়াস রেখে “আমি কাঁটাতারেই সুখী” গান ধরলেন! আজ পাইরেটস’ ডেনের আলোচনা শুধুমাত্র ওই দ্বিতীয় শ্রেণীর হবিস্টদের জন্য। তাই বলে কি আমি তাদের ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি বোঝাবো!!! মোটেই না। দেখাই যাক না, অতিরিক্ত জ্ঞানের কচকচানির মধ্যে না থেকে প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের চাকা গড়ায় কিনা! এই “গড়ানো” টা খুব দরকারি। কারণ গড়ালে তবেই তো পরে গতি তোলার সুযোগ আসবে!
যারা প্রথমবার প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক শুরু করতে চান কিংবা যাদের প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক শুরু করেও সাফল্যের মুখ অধরাই রয়ে গেছে তাদের উদ্দেশ্যে বলি, শুরুতেই যে কটা বিষয় মাথায় রাখতে সেগুলোর একটা তালিকা বানিয়ে নেওয়া যাক, তারপর নাহয় বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা যাবে….
১) ট্যাঙ্ক সাইজ
২) ফিল্টার
৩) সাবস্ট্রেট
৪) লাইট
৫) কার্বন ডাই-অক্সাইড
৬) ফার্টিলাইজার
৭) জল
এবার দেখা যাক এই বিষয়ভিত্তিক সবথেকে সাধারণ প্রশ্নগুলো এবং তাদের সহজ উত্তর কি হতে পারে….
১) ট্যাঙ্ক সাইজ কি করবো?
আপনার বাজেট আপনিই সবথেকে ভালো বুঝবেন, আমি শুধু ক’টা সুবিধা অসুবিধা বলবো। সাইজ যত বাড়াবেন রিকোয়ারমেন্ট তত বাড়বে। ফিল্টার, লাইট, সাবস্ট্রেট, কার্বনডাইঅক্সাইড, ফার্টিলাইজার সবকিছুর। আমার মতে মাঝারি মাপের ট্যাঙ্ক দিয়ে শুরু করা ভালো। দেড় ফুট, দুই ফুট সবথেকে ভালো আর আড়াই ফুটের ওপর শুরুতে না ওঠাই ভালো। ছোটও করতেই পারেন কিন্তু মনে রাখবেন সাইজ যত ছোট হবে সেই ট্যাঙ্কের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। ট্যাঙ্ক হাইট যত বাড়বে জলের মধ্যে দিয়ে আলোর প্রবেশ ক্ষমতা তত কমবে। শুরুতেই তাই একফুট বা বারো ইঞ্চির বেশি হাইটের ট্যাঙ্কে গিয়ে লাভ নেই। কম হতেই পারে কিন্তু বাড়িয়ে বিশেষ লাভ নেই।
২) কি ফিল্টার ব্যবহার করবো?
এখানে কিন্তু একটু অঙ্ক কষতেই হবে। ঘাবড়াবেন না, জটিল কিছু না! হিসেব করতে হবে আপনার ট্যাঙ্কের জলধারণ ক্ষমতা। গুগলে “tank water volume calculator” সার্চ দিলে অঙ্ক কষা থেকে বেঁচে যাবেন। এবার খেয়াল রাখুন জলধারণ ক্ষমতা যত বেরোবে আপনার ফিল্টার যেন তার অন্তত দশগুণ জল এক ঘন্টায় পরিশুদ্ধ করতে পারে। ধরুন আপনার 24″x12″x12″ ট্যাঙ্কে আন্দাজ 55 – 56 লিটার জল ধরে। সুতরাং ফিল্টার হতে হবে এমন যার মধ্যে দিয়ে ঘন্টায় অন্তত 550 – 600 লিটার জল পাস করে। ফিল্টারের এই ক্ষমতাকে liter per hour (lph) বলে, যা প্রতি রকমের ফিল্টারে (স্পঞ্জ ফিল্টার বাদে) উল্লেখিত থাকে। সুতরাং কেনার সময় দেখে নেবেন।
এরপর আসে কি ফিল্টার নেবেন। নানারকমের ফিল্টারের নানা রকমের কার্যপ্রণালী। কিন্তু একটা জিনিস মোটামুটি বলা যায়, যে ফিল্টারে জল যত ছিটকায় প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কে তার কার্যকরীতা তত কম। জল যত ছিটকোবে জলে দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইড (যা জলের গাছের জন্য প্রয়োজনীয়) তত নষ্ট হবে এবং জলে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়বে। তাই কার্যকারিতার মাপকাঠিতে প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কে ফিল্টারের যদি কোনো ক্রমতালিকা হয় তবে তা খানিকটা এমন হবে,
ক্যানিস্তার ফিল্টার
হ্যাঙ্গ অন ব্যাক (HOB) ফিল্টার
ইন্টারনাল পাওয়ার ফিল্টার (IPF)
স্পঞ্জ ফিল্টার
টপ ফিল্টার
এখন ক্যানিস্তার ফিল্টারের বাজেট একটু বেশির দিকে। শুরুটা ক্যানিস্তার দিয়ে করতে না চাইলে পরের দুটো অপশন বেছে নিতে পারেন। IPF ব্যবহার করলে সাথে লাগানো পাইপ যা জলে এয়ার সাপ্লাই দেয় সেটি খুলে দেবেন। আর মনে রাখবেন ফিল্টার চলবে 24 x 7, ট্যাঙ্ক মেন্টেনেন্স বাদে বন্ধ করার দরকার নেই।
(ফিল্টারে কার্যপ্রণালী, ফিল্টেশন, ফিল্টার মিডিয়ার বিষয়ে আরো জানতে পাইরেটস’ ডেনের ইনডেক্সে ঢুঁ মারতে পারেন)
৩) বালিতে গাছ হবে? নাকি মাটি লাগবে?
সিমেন্ট মাখানোর পাতি বালিতেই গাছপালা হয়। কিন্তু মাটিতে আরো ভালো হয়। প্ল্যান্টেড অ্যাকোয়ারিয়াম করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি মাটি পাওয়া যায়। যেগুলোর সব থেকে বড় গুণ জলে গুলে যায় না। তাছাড়া এগুলোতে গাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ আছে, কিছু কমার্শিয়াল মাটি জলের অম্লত্ব-ক্ষারত্বের মাত্রাকে সাম্যাবস্থায় রাখতে পারে। সব মিলিয়ে এই কমার্শিয়াল মাটিগুলো প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক করার জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
কিন্তু দামটাও ওপর দিকে। দুই ফুটের ট্যাঙ্ক করতে দুই-তিন হাজার টাকা খরচ পড়েই যাবে। তবে কি করণীয়? শুরু করতে পারেন আপনার বাগানের মাটি দিয়ে। প্রথমে বড় ঢেলা ভেঙে বাগানের মাটিটাকে ঝুরঝুরে করে ফেলুন। তারপর মাটিটা পরিষ্কার করে নিন। মাটি থেকে প্লাস্টিক, নুড়ি, ইঁটের টুকরো, শামুকের খোল, শেকড়-বাকড় আলাদা করে ফেলুন। এবার একটা কড়ায় মাটিটাকে অল্প আঁচে গরম করুন। গরম করার ফলে মাটিতে থাকা ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়া, অনুজীব, পোকা মাকড়, তাদের ডিম লার্ভা পিউপা নষ্ট হয়ে যাবে, পরবর্তীকালে কোনো সমস্যা হবেনা। অভিজ্ঞতা থেকে একটা পরামর্শ দিই, রান্নাঘরে ঢুকে কড়ায় মাটি ভাজার কাজ গোপনে করবেন, নতুবা গৃহশান্তি বিঘ্নিত হওয়ার তুমুল সম্ভাবনা।
এবার মাটি রেডি। ট্যাঙ্কে এক ইঞ্চি পুরু করে মাটিটা বিছিয়ে দিন, তার ওপর আরো এক ইঞ্চি বালির লেয়ার দিন, নাহলে জলের সংস্পর্শে এলে মাটি গুলবে। বালির বদলে খুব ছোট বালির পাথর ব্যবহার করতে পারেন, যার পোষাকি নাম 2mm sand gravel, আমার মতে এর কার্যকারিতা বালির থেকে বেশি। তারপর ট্যাঙ্কে ধীরে ধীরে জল ঢালুন। বালিটাকে হালকা হাতে আঁচড়ে দিয়ে বালির খাঁজে জমে থাকা এয়ার বাবলকে বার করে দিন। চালিয়ে দিন ফিল্টার। তারপর আবার বাকি জিনিসপত্র নিয়ে ভাবতে বসি।
আজ এই পর্যন্তই থাক, জানাবেন কেমন লাগলো। বাকিটা নিয়ে ফিরে আসছি পরের পর্বে…..
আবার বলে রাখি এই সেগমেন্ট শুধুমাত্র নতুনদের কথা ভেবে। যারা হবিতে অনেকটা এগিয়ে গেছেন এবং ভাবছেন এগুলো তো সবাই জানে, এর থেকে বেশি কিছুর আশায় ছিলাম, তাদের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক আলোচনা আছেই। এই সেগমেন্টটা হোক না নতুনদের একটু উৎসাহ দেওয়ার জন্য। কে বলতে পারে সাহস পেয়ে প্ল্যান্টেড হবি শুরু করে দিলে, তাদের মধ্যে থেকেই নতুন প্ল্যান্টেড অ্যাকোয়ারিস্ট বেরিয়ে আসবেনা!!!

 

We are accepting the entries for IBAC

X