Basics of Planted Tank Episode : 2

fishkeeping simplified

Basics of Planted Tank Episode : 2

প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের সহজপাঠ
দ্বিতীয় পর্ব
আবার এসে গেছি #aquarium_without_rocketscience এর দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে। পাইরেটস’ ডেনের এই সেগমেন্টে আমরা আলোচনা করি নতুন হবিস্টদের দৃষ্টিকোণ থেকে। শুরুতেই বিজ্ঞানের জটিলতায় না জড়িয়ে কিভাবে তারা হবিতে পা রাখবে সেই নিয়ে। আপাতত এই সেগমেন্টে আলোচনার বিষয় সহজে প্ল্যান্টেড অ্যাকোরিয়াম হবি কিভাবে শুরু করা যায়। আমরা বিষয়ভিত্তিক কিছু অত্যন্ত সাধারণ, কিন্তু সবথেকে বেশিবার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করছি শুধুমাত্র নতুন হবিস্টদের জন্য। গত সংখ্যায় আলোচনা হয়েছে প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের সাইজ, ফিল্টার আর সাবস্ট্রেট নিয়ে। আপনি যদি ইতিমধ্যে তা পড়ে না থাকেন তবে পড়ে ফেলার অনুরোধ জানালাম।
৪) কত ওয়াটের লাইট লাগবে?
একটা প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক দেখলে এই প্রশ্নটা বোধহয় নতুন হবিস্টের মাথায় সবার আগে আসে! হ্যাঁ প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক করলে উজ্জ্বল লাইট লাগে, কিন্তু ওয়াটটা তার ঔজ্জ্বল্যের সূচক নয়। “ওয়াট” বোঝায় লাইটটা জ্বালাতে কতটা বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন হচ্ছে। তবে বালব থেকে নির্গত আলো কি দিয়ে মাপবো? দেখবেন যেকোনো বালবের বাক্সে একটা লুমেনের (lm) পরিমাপ লেখা আছে। এবার আর একটা ছোট্ট অঙ্ক কষতে হবে। হিসেব করতে হবে আপনার ট্যাঙ্কের প্রতি লিটার জলে কত লুমেন আলো পাচ্ছে। একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝালে ব্যাপারটা সোজা হবে। ধরা যাক, একটা 9 ওয়াটের বালবের গায়ে লেখা দেখলেন 850lm, আপনার দুই ফুট ট্যাঙ্কে জল ধরে 55লিটার। তাহলে প্রতি লিটার জল কত লুমেন আলো পাচ্ছে? 850÷55= 15.5 লুমেন প্রতি লিটার। এবার মোটামুটি লো থেকে হাই লাইটের মাপকাঠিটা এরকম…
10 – 15 লুমেন/লিটার = লো লাইট
20 – 40 লুমেন/লিটার = মিডিয়াম লাইট
40< লুমেন/লিটার = হাই লাইট
কি গাছ করতে চান, তাদের চাহিদা কি, সেই অনুযায়ী এবার হিসেব করে নিন কেমন লাইট চান আপনি। আমার মতে শুরুতে মধ্যপন্থা সবচেয়ে ভালো, মিডিয়াম লাইট দিয়েই নাহয় শুরু করুন। অনেকে লুমেন/স্কোয়ার ইঞ্চি দিয়েও আলোর পরিমাপ করেন। আরো এগিয়ে থাকা হবিস্টরা PAR (Photosynthetic Active Radiation) দিয়েও আলোর বিচার করেন। প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের জন্য বানানো কমার্শিয়াল লাইটে সেসবের উল্লেখও থাকে। কিন্তু আমরা শুরুতেই অঙ্গীকারবদ্ধ বিজ্ঞানের কচকচানিতে আপাতত মাথা গলাবো না। ধাপে ধাপে উন্নতি করা যাবে, এক লাফে চাঁদে উঠতে গেলে ব্যর্থ হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা।
আর দুটো জিনিস বলে রাখি লাইট সম্বন্ধে। লাইটের একটা প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য হল “কালার টেম্পারেচার”, যা মাপা হয় কেলভিন (K) দিয়ে। প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের জন্য 6500K বা তার বেশি লাইট চাই। 6500K এর নীচে নামলে আলোতে লালচে ভাব বাড়তে থাকে, ওপরে উঠলে বাড়ে নীলের পরিমাণ। আপাতদৃষ্টিতে আমরা যে সাদা (cool white) এলইডি বালব বা টিউব দেখি সেসবের কালার টেম্পারেচার 6500K, সুতরাং সাধারণ সাদা এলইডি বালব বা টিউবেই প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক বানিয়ে ফেলতে পারেন।
এরপরই আসে লাইট কতক্ষণ জ্বলবে সেই প্রশ্ন। জ্বলুক না মোটামুটি ছয় – আট ঘন্টা। তবে ফটোপিরিয়ড মেনটেন করাটা উচিত। আজ বাড়ি আছি তাই দুপুর দু’টো থেকে রাত আটটা লাইট জ্বালালাম, আর কাল রাতে ফিরবো তাই তারপর লাইট জ্বলাবো, এ জিনিস না করাই ভালো। একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন সেই সময় মেনে লাইট জ্বলান।
৫) কার্বন ডাই-অক্সাইড কি লাগবে?
যেখান থেকেই পড়ুন না কেন, প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কে প্রয়োজনীয় উপকরণের তালিকায় এই কার্বন ডাই-অক্সাইডের নাম থাকেই। আর এই একটা জায়গায় নতুন প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক প্রেমী এসে হোঁচট খায়। কার্বন ডাই-অক্সাইড খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার। সুতরাং অন্য রাস্তা দেখতে হবে। কি অন্য রাস্তা আছে? Do it Yourself (DIY) পদ্ধতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড বানানোর দুটো উপায় আছে, সুগার-ইস্ট সিস্টেম আর সাইট্রিক অ্যাসিড – বেকিং সোডা সিস্টেম। এছাড়া লিকুইড কার্বন ডাই-অক্সাইড, CO2 ট্যাবলেট, CO2 ক্যান ইত্যাদি কিছু প্রোডাক্টও বাজারে অ্যাভেলেবল আছে। যারা কোনো ঝামেলাতেই যেতে চান না তারা খোঁজ করেন কোন গাছের CO2 লাগেনা।
একটা জিনিস শুরুতেই পরিষ্কার হয়ে যাওয়া ভালো প্রত্যেক গাছের CO2 লাগে, গাছ বেঁচে থাকার রসদ সংগ্রহ করে যে সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে তা CO2 ব্যতিরেকে সম্ভব না। সুতরাং CO2 লাগবেই। আর তার একমাত্র ফুলপ্রুভ পদ্ধতি প্রেশারাইজড সিলিন্ডার। শুরুটা আপনি সুগার-ইস্ট কি সাইট্রিক অ্যাসিড-বেকিং সোডা সিস্টেম দিয়ে শুরু করতেই পারেন। কিন্তু দুটো সিস্টেমেরই কিছু সমস্যা আছে। প্রথমে সুগার – ইস্ট সিস্টেমের কথা বলি.…..
– সুগার ইস্ট সিস্টেমে রি-অ্যাকশনটা আমাদের কন্টোলে থাকে না। ফলে, CO2 এর পরিমাণ ওঠানামা করে।
– আয়ু মেরেকেটে এক-দেড় সপ্তাহ, তারপর আবার সব বানাতে হয়।
এবার আসি সাইট্রিক অ্যাসিড – বেকিং সোডা সিস্টেমের ফাঁক ফোঁকরে…
– খুব ভালো জিনিস যদি আপনি সিস্টেমের কার্যপদ্ধতি খুব ভালো করে বোঝেন এবং ত্রুটি – বিচ্যুতি নিজেই ম্যানেজ দিতে পারেন।
– মাসে অন্তত একবার সিস্টেম রিস্টার্ট করার জন্য সময় দিতে হবে।
কিন্তু নিঃসন্দেহে দুটো সিস্টেম দিয়েই প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের প্রাথমিক পাঠটা উতরে যায়। সময় নিন না বছর দেড়েক, চলুক না DIY CO2 সিস্টেম, তলে তলে টাকা জমাতে থাকুন সিলিন্ডারের জন্য।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য লিকুইড কার্বন ডাই-অক্সাইড বলে যে জিনিসটা বাজারে বিক্রি হয় সেটি তরল CO2 নয়, কারন লিকুইড CO2 প্লাস্টিকের বোতলে ভরে বেচা যায় না। এই সমস্থ পন্যে মূলত গ্লুটারালডিহাইড নামের একটি রাসায়নিককে কার্বন সোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখন বেশ কিছু আর্টিকেল গ্লুটারালডিহাইডকে কার্সিনোজেনিক (যা ক্যানসারের কারণ হতে পারে) হিসেবে বর্ণনা করে। এরপর আপনি ঝুঁকি নেবেন কি না সেটা আপনার ওপরেই ছাড়া ভালো। আর ওই CO2 ট্যাবলেট যে ছেলে ভোলানো খেলনা সেকথা বলাই বাহুল্য।
তাহলে কি CO2 ছাড়া প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক হবেনা? গাছের কার্বন ডাই-অক্সাইডের চাহিদার তারতম্য আছে। কিছু শক্ত পোক্ত গাছপালা আছে যারা কম CO2 কন্ডিশন কাটিয়ে দিতে পারে। বেছে বেছে সেই সমস্থ গাছপালা দিয়ে যদি একটা ট্যাঙ্ক বানান এবং ধৈর্য ধরেন তবে সময় আপনার ট্যাঙ্কে ভারসাম্য এনে দিতেই পারে। কিন্তু CO2 দেবোনা অথচ আমার সবুজ কার্পেট লাগবে এই দ্বন্দ্ব থেকে বেরোতে হবে।
৬) ফার্টিলাইজার দিতে হবে নাকি?
জীবন্ত জিনিস যখন, তখন তাকে খেতে তো দিতেই হবে। মাছটাছ থাকলে তাদের মলমূত্র অবশ্যই গাছের খাবার (বা সার) হিসেবে কাজ করে কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা যথেষ্ট না। জলের তলায় সবুজে মোড়া ঘন ঝোপঝাড় দেখতে হলে গাছের চাহিদা মত খাদ্যের যোগান তো দিতেই হবে।
গাছের বৃদ্ধির জন্য মোটামুটি কুড়ি রকমের খনিজ মৌল প্রয়োজন হয়, যার তিনটে গাছ জল আর বাতাস থেকে জোগাড় করে নেয়। সেগুলো হল অক্সিজেন (O), হাইড্রোজেন (H) আর কার্বন (C)।
বাকি খনিজগুলোকে চাহিদা অনুযায়ী আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যে সমস্থ মৌলের চাহিদা অনেক বেশি, যাদের অভাবে গাছের জীবনচক্র সম্পূর্ণ হবেনা, যাদের অভাব অন্য কোনো বিকল্প উপাদান দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়, তাদের বলা হয় অপরিহার্য খনিজ বা ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট (macronutrients)। ছ’টা মৌলকে ফেলা হয় ম্যাক্রো-নিউট্রিয়েন্টের মধ্যে, নাইট্রোজেন (N) , ফসফরাস (P), পটাশিয়াম (K), ক্যালসিয়াম (Ca), ম্যাগনেসিয়াম (Mg), সালফার (S)। এছাড়া লোহা, তামা, দস্তা, বোরন, সোডিয়াম, মলিবডেনাম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি কিছু খনিজও গাছের পুষ্টিতে সামান্য পরিমানে প্রয়োজন হয়, এদের একসাথে মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট বলা হয়। প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কে ফার্টিলাইজার ডোজিং বলতে এই ম্যাক্রো এবং মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টদের কথাই বলা হয়।
তাহলে কিভাবে দেবেন ফার্টিলাইজার? দুটো উপায়। সহজটা বাজার চলতি কোনো প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কে ব্যবহার করার ম্যাক্রো ও মাইক্রো ফার্টিলাইজার কেনা এবং সেই ব্র্যান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী ডোজিং করা। দ্বিতীয় পথটা হল Estimative Index অনুযায়ী ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিকের মাধ্যমে গাছের নিউট্রিয়েন্টের চাহিদা মেটানো। পটাশিয়াম ডাইহাইড্রোজেন ফসফেট (KH2PO4), পটাশিয়াম সালফেট (K2SO4) এবং পটাশিয়াম নাইট্রেট (KNO3), সাধারণত এই তিনটি রাসায়নিক যথাক্রমে ফসফেট, পটাশিয়াম এবং নাইট্রোজেনের সোর্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পদ্ধতিটি একটু জটিল এবং রসায়নিকগুলি জোগাড় করা আরো বেশি জটিল। রাসায়নিক কেনার কিছু আইনি জটিলতাও আছে। তবে রসায়ন এবং গণিতের ন্যূনতম জ্ঞান থাকলে এবং অতি অবশ্যই গাছকে পর্যবেক্ষণ করে তার নিউট্রিয়েন্টের চাহিদা বুঝতে শিখলে এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর। সাশ্রয়কারীও বটে। Estimative Index পছন্দ হলে এবং নিজের ফার্টিলাইজার নিজেই বানাতে চাইলে বেশ কিছু ওয়েবসাইটের অনলাইন সার্ভিস আছে আপনাকে সাহায্য করার জন্য, গুগল করে দেখতে পারেন।
এই আলোচনা এখানেই শেষ করা যাক। ফিরে আসছি পরের পর্ব নিয়ে।
আর একটা কথা আবার বলে রাখি এই লেখালেখি একান্তভাবে নতুন হবিস্টদের কথা ভেবে। যারা ইতিমধ্যে প্ল্যান্টেড হবিতে অনেকটা এগিয়ে গেছেন, তাদের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক আলোচনা তো আছেই। এই সেগমেন্টটা হোক না নতুনদের একটু উৎসাহ দেবার জন্য। কে বলতে পারে সাহস করে প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক শুরু করে দিলে, নতুনদের মধ্যে থেকে অসাধারণ এক প্ল্যান্টেড অ্যাকোয়ারিস্ট বেরিয়ে আসবেনা…..

 

We are accepting the entries for IBAC

X