Basics of Planted Tank Episode : 3
প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের সহজপাঠ
তৃতীয় পর্ব
অ্যাকোয়ারিয়াম হবি সম্বন্ধীয় বিজ্ঞানের জটিলতায় বেশি না জড়িয়ে কিভাবে তারা হবিতে শুরু করবে সেটাই এই সেগমেন্টের মুখ্য বিষয়। আপাতত আলোচনার বিষয় সহজে প্ল্যান্টেড অ্যাকোরিয়াম হবি কিভাবে শুরু করা যায়। আমরা বিষয়ভিত্তিক কিছু অত্যন্ত সাধারণ, কিন্তু সবথেকে বেশিবার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করছি শুধুমাত্র নতুন হবিস্টদের জন্য। ইতিমধ্যে দুটি পর্বে আলোচনা হয়েছে প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের সাইজ, ফিল্টার, সাবস্ট্রেট, লাইট, কার্বনডাইঅক্সাইড আর ফার্টিলাইজার নিয়ে। আপনি যদি ইতিমধ্যে তা পড়ে না থাকেন তবে পড়ে ফেলার অনুরোধ জানালাম।
৭) কর্পোরেশনের জল দেবো না আন্ডারগ্রাউন্ডের?
আমাদের দেশে প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের এই দিকটা মনে হয় সবচেয়ে অবহেলিত। অনেক এগিয়ে থাকা হবিস্টও যে জল ব্যবহার করছেন সেই সম্বন্ধে অবগত নন। বাকি সব জিনিসের মতো জলও কিন্তু প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের সাফল্যের একটি অতি প্রয়োজনীয় মাপকাঠি। প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কে সফল হতে গেলে তাই জলের কিছু প্যারামিটার সম্বন্ধে একটু জেনে নেওয়া প্রয়োজন। যেমন – জলে দ্রবীভূত লবণ, মৌল, আয়নের মোট পরিমাণ, Total Dissolved Solids (TDS) এই মানকে নির্দেশ করে। এছাড়া আছে জলের জেনারেল হার্ডনেস (GH), কার্বনেট হার্ডনেস (KH) এবং অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের সূচক PH।
কিন্তু একদম গোড়ার হবিস্টরা যারা সবে প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক শুরু করেছেন বা করতে চাইছেন তারা কি করবেন? তারা কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন, গাছ হার্ড ওয়াটারের (খরজল) থেকে সফট ওয়াটার (মৃদুজল) বেশি পছন্দ করে। আপনার এলাকার জল যদি অতিরিক্ত হার্ড হয় তবে RO (Reverse Osmosis) ফিল্টারের জল ব্যবহার করতে পারেন। যদি RO ফিল্টার না থাকে তবে বাজারে কুড়ি লিটারের যে খাবার জলের ড্রাম বিক্রি হয় সেই জল ব্যবহার করতে পারেন। যারা কর্পোরেশনের জল ব্যবহার করেন তারা জল থেকে ক্লোরিন/ ক্লোরঅ্যামিন কিভাবে তাড়াবেন সেই বিষয়টি মাথায় রাখুন। অ্যান্টি ক্লোরিন ব্যবহার করতে পারেন। আগের রাতে ধরে রাখা জলে সারারাত এয়ারস্টোন চালিয়ে রাখলে ক্লোরিনের সমস্যা অনেকটাই মেটে এবং পরেরদিন সেই জল দিয়ে ওয়াটার চেঞ্জ করতে পারেন।
কিন্তু পড়াশোনা একটু করতেই হবে সেই ব্যপারে সন্দেহ নেই।
৮) অ্যাকোয়ারিয়ামটা কোথায় রাখবো?
শুনতে যতই অদ্ভুত লাগুক এটাও কিন্তু একটা ভাবার মতো বিষয়। না না তাই বলে কোনো বাস্তুশাস্ত্র আলোচনা করতে হবে না। শুধু খেয়াল রাখতে হবে যেন ডার্ক পিরিয়ড আর লাইট পিরিয়ড ঠিকঠাক ভাবে বজায় থাকে। লাইট পিরিয়ড মানে যখন আপনার ট্যাঙ্কে লাইট জ্বলবে, আর বাদবাকি সময়টা ডার্ক পিরিয়ড। এই সময়টা যতটা সম্ভব কম আলো প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কে পড়ে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। একদম অন্ধকার হলে ভালো, কিন্তু ছা-পোষা গৃহস্থ বাড়িতে সেটা তো আর সম্ভব নয় তাই ওই সর্বনিম্ন আলোর দিকেই ঝুঁকতে হয়। সরাসরি সূর্যের আলোটাও বর্জন করা উচিত, তাই যে জানালা দিয়ে বেশিমাত্রায় আলো বা রোদ আসে তার পাশটা প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের জন্য না বাছাই ভালো। এবার আপনার বাড়ি, আপনি ভালো চেনেন। খুঁজে নিন এমন কোনো কোণা যা হবে সবুজ সতেজ প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের জন্য আদর্শ জায়গা।
৯) টেম্পারেচার কত থাকা উচিত?
হ্যাঁ, এর সাথে আসে আরেকটা অধ্যায় টেম্পারেচার। আমি নিজে যখন প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের জন্য প্রথম পড়াশোনা শুরু করি তখন দেখেছিলাম প্রায় সব জায়গায় বলছে আদর্শ উষ্ণতা ২২°- ২৬° সেলসিয়াসের আসেপাশে, যা বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময় ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ অঞ্চলে দুর্লভ। তাহলে কি করণীয় আছে? জলের টেম্পারেচার না কমাতে পারলে কি প্ল্যান্টেড হবে না? নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু তার জন্য গাছপালা বাছাইটা একটু যত্ন দিয়ে করতে হবে। প্রতিটা প্রাণীর যেমন তাপমাত্রার চাহিদার তারতম্য আছে, গাছও আলাদা নয়। গরম সহ্য করতে পারে এমন সব গাছপালা দিয়ে শুরু করুন আপনার প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক। বেশিরভাগ দেশি গাছপালা সহজেই ৩০° – ৩২° সেলসিয়াস অবধি তাপমাত্রাকে পাত্তা দেয়না। হাত পাকান এদের দিয়ে। প্রয়োজনে DC কম্পিউটার ফ্যান বা হাইস্পিড ফ্যান বসিয়ে নিতে পারেন ট্যাঙ্কের ওপর সুবিধাজনক জায়গায়, অন্তত দুই ডিগ্রি টেম্পারেচার কমিয়ে ফেলতে পারবেন।
উষ্ণতার প্রতি সংবেদনশীল গাছপালাও করতে পারবেন, কিন্তু তার জন্য একটু সময় দিন। ততদিন চলুক না দেশি গাছপালা, অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকুক।
আর আগের পয়েন্টে যেমন বলছিলাম ট্যাঙ্ক কোথায় বসাবেন সেটা ঠিক করার আগে আলোর ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে, তার সাথে সাথে টেম্পারেচারটাও ধর্তব্যের মধ্যে রাখতে হবে। আপনার বাড়ির যে জায়গা বেশি গরম যেমন, ছাদের ঘর, রান্নাঘর, কি দুপুরে টানা রোদ খায় এমন দেওয়াল লাগোয়া ঘর সে সব জায়গায় প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক শুরু না করাই ভালো।
তাহলে এই গেল প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের বুনিয়াদি চাহিদাগুলোর পরিচয়। যতদূর সম্ভব জটিলতা এড়িয়ে বিষয়গুলো আলোচনার চেষ্টা করলাম, যারা প্রথমবার প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্ক করতে চাইছেন শুধুমাত্র তাদের জন্য।
আরো কিছু বিষয় জেনে রাখুন….
প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কের বিষয়ে জানা এখান থেকে শুরু। প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কে সফল হতে গেলে প্রতিনিয়ত নিজেকে আপগ্রেড করতে হবে এবং সেইজন্য পড়াশোনা এবং জানার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
ভুল করতে মোটাও ভয় পাবেননা, কিন্তু কেন ভুল হল সেটা জানার চেষ্টা করুন।
প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কে রাতারাতি সফল হওয়াটা খুব কঠিন। অভিজ্ঞতা অর্জন করার চেষ্টা করুন। শুরুতেই স্কেপের পিছনে না দৌড়ে গাছের গ্রোথকে ধরে রাখতে এবং গাছকে বুঝতে চেষ্টা করুন।
সচিনের ব্যাট নিয়ে খেলতে নামলেই সেঞ্চুরি করা যায় না, সেইজন্য খেলতে জানতে হয়। শুরুতেই ব্র্যান্ড ব্র্যান্ড করে মাথা না ঘামিয়ে কার্যপ্রণালী নিয়ে ভাবাটা বেশি দরকারি।
এই পর্যন্ত থাক তাহলে, আবার ফিরে আসবে অন্য কোনো শখের সহজপাঠ নিয়ে। জানতে চাই কেমন লাগছে নতুন হবিস্টদের জন্য পাইরেটস’ ডেনের এই প্রচেষ্টা।
Image – Internet