
Epipremnum aureum ( Pothos)
নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাট করে সেখানে বাস্তু মতে ঘর সাজাতে চান? কিংবা নিজের পুরোনো ঘরকেই নতুন ভাবে সাজাতে চান গৃহলক্ষ্মীকে বন্দী করার আশায়? তাহলে কিন্তু আমাদের পছন্দের লিস্টে যে জিনিসটার নাম প্রথমেই আসবে সেটা হলো একটা হরিদ্রাভ সবুজ লতানো গাছ যা পোথোস হলেও সাধারণের কাছে মানিপ্ল্যান্ট নামেই পরিচিত। বাস্তু মতে একে নাকি ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রাখলে সেই ঘরের বাসিন্দাদের এনার্জি এবং মানিব্যাগের এনার্জি, দুটোই বাড়ে। তো এই মাছের গ্ৰুপে সেই দাবীর সত্যি মিথ্যা, বিশ্বাসের তর্ক আপাতত মুলতুবি থাক। আমরা, মেছোরা এই গাছকে চিনি শুধু ঘর সাজানোর উপকরণ হিসেবে নয়, বরং আমাদের প্রিয় ট্যাঙ্কের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গাছ-সদস্য হিসাবে। আজ না হয় তাকে নিয়েই দু-চার কথা বলা যাক।
পোথোস এর অরিজিন ওর আকৃতির মতোই একটু প্যাঁচালো। মোটামুটি ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়াএ এর উদ্ভব হলেও এর অসম্ভব বেঁচে থাকার ইচ্ছার কারণে আজ আর পোথোস এর কোনো দেশ নেই, মানে যথাযথ বিশ্বনাগরিক বলা চলে আর কি! আফ্রিকা, এশিয়া, সাউথ ইস্ট এশিয়া, অষ্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এরম বিভিন্ন ট্রপিক্যাল অঞ্চলে এরা এতো দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে যে অনেক সময় স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রর ক্ষতি সাধন করেছে এর পরজীবী প্রকৃতি। ১৮৮০ সালে যখন একে প্রথম চিহ্নিত করা হয় তখন এর নাম রাখা হয় Pothos aereus । তখন থেকেই পোথোস নামের প্রচলন। তারপর ১৯৬২ সালে প্রথম দেখা মেলে এর ফুলের। তখন আবার তার নাম পরিবর্তন করা হয়। তারপরও দু বার নাম পাল্টানোর পরে এখন তিনি বিজ্ঞান সম্মত ভাবে E.aureum নামে বিরাজমান।
এ তো গেল এর নাম, কিন্তু আমরা বেশী উৎসাহী এর ধাম নিয়ে। মানে এনার বিশ্ব নাগরিক হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ ই হলো এনার বাসস্থান। পোথোস জলা জায়গা পছন্দ করে। সাধারণত পরজীবী হলেও এরা মাটিতে এবং জলে স্বচ্ছন্দে বাড়তে পারে। তাই অ্যাকোয়ারিয়াম হবিতে এর চাহিদা যথেষ্ট। এরা সেমি-মার্জড অবস্থায় জলে থাকে। অর্থাৎ এদের শিকড় থাকে জলের নীচে এবং পাতা ওপরে। জল থেকে প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টস শোষণ করে এবং মোটামুটি আলো পেলে এরা ট্যাঙ্কের চারপাশে লতিয়ে লতিয়ে বাড়তে থাকে। জলের মধ্যে সম্পূর্ণ ডুবে থাকা বা সাবমার্জড অবস্থাতেও এরা বেঁচে থাকে না তা নয়, তবে সেক্ষেত্রে বেশ জোরদার আলোর প্রয়োজন।
পোথোস এর এই ক্ষমতাই একে মাছ পুষিয়েদের কাছে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছে। এর সামান্য একটা ডাল নিয়ে এসে গোড়া জলে ডুবিয়ে রাখলে কিছু দিনের মধ্যেই এ জলের মধ্যে শিকড় বিস্তার করে ট্যাঙ্কের উপরিতল ছেয়ে ফেলবে। হলুদ সবুজে মেশানো লতানো নিটোল পাতাগুলো যেন ট্যাঙ্কের চারপাশে একটা প্রাকৃতিক সীমানা করে দেয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই যেকোনো ট্যাঙ্কে একটা দৃষ্টিনন্দন বন্য ভাব এসে যায়। আধা আলো আঁধারে ট্যাঙ্কের মধ্যে তৈরী হয় এক মায়াবী পরিবেশ। তবে শুধু সৌন্দর্য বর্ধনই নয়, পোথোস অ্যাকোয়ারিয়াম এর জলের অবস্থার সার্বিক উন্নতি ঘটাতেও সাহায্য করে। এরা জল থেকে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট, ধাতব মৌল ও বিভিন্ন বায়োলজিক্যাল টক্সিন শোষণ করে নেয়। ফলে এরা অনেকটা বায়োলজিক্যাল ফিল্টারের মতো কাজ করে। আর আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখা যে শুধুমাত্র জল নয়, এরা স্পন্জ ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে শিকড় চালিয়ে ফিল্টারের থেকেও বর্জ্য শোষণ করে পরিষ্কার রাখে। এদের ছড়ানো শিকড় বেনিফিশিয়াল ব্যাক্টেরিয়ার বাসস্থান এবং সাথে সাথে ছোটো মাছেদের বা মাছের বাচ্ছাদের লুকোনোর জায়গা হিসেবে কাজ করে। আর জলের তলায় এই ওয়াটার পিউরিফায়ারের কাজ করার সঙ্গে জলের ওপরেও ঘরের দূষিত বাতাস টেনে এয়ার পিউরিফায়ারের কাজ করতেও এরা সিদ্ধহস্ত।
তবে সব ভালোরই তো একটা খারাপ দিক থাকে। ক্যালসিয়াম অক্সালেটের উপস্থিতির কারণে এদের পাতায় একটা টক্সিক প্রভাব থাকে। সেটা এতোটা প্রখর হয় না সাধারণত যে মানুষের ক্ষতি সাধন করতে পারে। তবে বাড়ির কোনো পোষ্য থাকলে এ গাছ তাদের থেকে দূরে রাখাই ভালো। আর বাচ্ছাদের মুখেও যাতে এ গাছ না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।
দেখুন, চাঁদের ও তো কলঙ্ক থাকে,তাই বলে কি আমাদের ‘মামা’ পাতাতে আটকায়?! সামান্য দোষ থাকলেও বাস্তু আর বিজ্ঞানের এমন কম্বিনেশনে কিন্তু আপনি আপনার বাড়ির লোক এবং মাছ, দুজনকেই খুশী করতে পারেন। সব মিলিয়ে সামান্য আলোর বিনিময়ে পাওয়া এরম প্রাকৃতিক শোধনকারী এবং দৃষ্টিনন্দন গাছের আকর্ষণ এড়ানো “মুশকিল হি নেহি, না মুমকিন হ্যায়।”
Comments: 1
খুব সুন্দর আর সহজ ভাবে সাজানো ,পরিষ্কার পরিছন্ন । যারা নতুন তাদের জন্য যেমন সহজ আমার মতো বুড়োর ও তেমনই ! বাঙালি ভাষা জানা মাছ পুষিয়ে দের অনেক সুবিধা হবে।বাকি তো সারা বিশ্বে যত বই আছে সেগুলো তো সবই ইংরাজি তে। ধন্যবাদ পাইরেট ‘ স ডেন এর পেজ ডিজাইন নার দের!
Comments are closed.