Freshwater parrot fish
আমাদের Pirate’s Den গ্রুপের যে মাছের প্রজাতি সম্পর্কিত আলোচনা তার সিংহভাগটাই আবর্তিত হয় প্রকৃতিতে পাওয়া বিভিন্ন মাছ নিয়ে৷ কিন্তু আমাদের এই একুয়ারিয়াম হবিতে এরম কিছু মাছ আছে,এবং সেগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয় যাদের স্বাভাবিক উৎসস্থল প্রকৃতি নয়৷ মনূষ্যসৃষ্ট ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টাল ব্রিডিঙের মাধ্যমে তৈরী করা হয় এদের৷ পোশাকি ভাষায় যাদের বলা হয় হাইব্রিড ফিশ৷ এবার এই হাইব্রিডাইজেশন নৈতিক কিনা তা নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক আছে এবং সে নিয়ে আমাদের এই গ্রুপে আলাদা সেগমেন্টে আলোচনাও হয়েছে৷ তাই আজ সেই নিয়ে তর্কের বদলে বরং আলোচনা করি এরম এক হাইব্রিড মাছ নিয়ে যারা বর্তমানে একুয়ারিয়াম হবিতে জনপ্রিয়তার নিরিখে বেশ ওপরের দিকেই থাকবে, তার নাম প্যারোট ফিশ, বা বলা ভালো ফ্রেশওয়াটার প্যারোট, কারণ এর এক সামুদ্রিক নেমসেক আছে৷
অন্য মাছের ক্ষেত্রে যেমন তাদের ‘discovery’ র স্থান-সাল খোঁজা হয়, এর ক্ষেত্রে তেমনই বলা যায় ‘invention’ এর সন-তারিখ৷ তাইওয়ানে ১৯৮৬ সালে মিডাস ও রেডহেড সিকলিডের সংমিশ্রনে তৈরী হয় এই প্যারোট৷ এই নামকরণের কারণ এর মুখের আকৃতি যা অনেকটা টিয়াপাখির ঠোঁটের মতো বেঁকানো৷ ফলে এরা মুখ পুরোপুরি বন্ধ করতে পারে না৷ এদের গলার মাংসপেশী এদের খাবার চিবিয়ে খেতে সাহায্য করে৷ এর সাথে রয়েছে এদের ছোট ও বেঁকানো ভার্টিব্রা! আবার অনেকসময় এদের লেজ কেটে দেওয়া হয় নতুন প্রজাতির দৃষ্টিনন্দন ‘হার্ট প্যারোট’ তৈরীর জন্য৷ এদের দেহের এই বিকৃতকরণই যাবতীয় বিতর্কের উৎস৷ এই জোর করে বিকৃত করা দেহ নিয়ে তাদের পক্ষে অনেক সময়ই সুস্থভাবে বেঁচে থাকা,সাঁতার কাটা বেশ কষ্টকর হয়ে যায়৷
কিন্তু তা সত্বেও একুয়ারিয়াম হবিতে মোটামুটি এই শতাব্দীর প্রথমভাগ থেকে এদের জনপ্রিয়তা দ্রুত ক্রমবর্ধমান৷ এর প্রধান কারণ এদের উজ্জ্বল লালচে কমলা রঙ, বেশ বড়ো আকার এবং মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা৷ যেহেতু এদের কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক বাসস্থান নেই তাই এদের বায়োটোপ তৈরী করার তেমন ঝামেলা নেই৷ মোটামুটি প্যারেন্ট জিন আমেরিকান সিকলিডের হওয়ায় আমেরিকান সিকলিডের জন্য উপযুক্ত জলের প্যারামিটারে এরা সহজেই থেকে যায়৷ মোটামুটি ওই ৬.৫ থেকে ৭.৫ পিএইচ, ৮০ ডিগ্রী ফারেনহাইট মতো উষ্ণতা,আর একটু বড়ো,কমপক্ষে ১০০ লিটার জলের ট্যাঙ্ক ওর দরকার,ব্যাস৷ তবে যতো বড়ো ট্যাঙ্ক হবে ততো ভালো কারণ আয়তনে এরা প্রায় ৮ ইঞ্চি মতো হতে পারে৷ ট্যাঙ্কসজ্জা বিশেষ কিছু নয়, মিহি বালি, কারণ এরা টিপিকাল সিকলিডের মতো এরাও বালি খুঁড়ে বালির বেড তৈরী করতে ভালোবাসে, কিছু পাথর, যাতে তারা প্রয়োজনে লুকোতে পারে আর বগউড ইচ্ছা হলে দেওয়া যেতেই পারে৷
এরা কিন্তু ন্যাচারালি ঠিক কমিউনিটি ট্যাঙ্ক ফিশ নয়৷ তাও রাখলে অন্যান্য আমেরিকান সিকলিড যেমন সেভেরাম, ফায়ারমাউথ, স্যালভিনি এদের সাথে রাখা যায়৷ আকার আয়তনে বড়ো হলেও কিন্তু এরা বেশ শান্ত মাছ৷ তবে এরা যদি ঠিকঠাক লুকোনোর জায়গা না পায় তাহলে বেশ এগ্রেসিভ হয়ে ওঠে৷ ফলে একটু বড়ো ট্যাঙ্ক আর যথেষ্ট হাইডিং প্লেস না থাকলে কমিউনিটি ট্যাঙ্কে এদের না রাখাই ভালো৷
খাবারের দিক দিয়ে এরা সর্বভুক৷ প্যালেট থেকে লাইভ কোনোটাতেই আপত্তি নেই৷ প্রোটিনজাতীয় খাবার এদের বেশী প্রিয়৷ তবে এদের মুখের আকৃতির জন্য এদের সিঙ্কিং প্যালেট দেওয়া ভালো কারণ নাহলে সারফেস থেকে খাবার খেতে খেতে এরা পেট ফুলে সিঙ্কিং বেলি রোগে আক্রান্ত হতে পারে৷ আর এরা বেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে খায়, ‘মেসি ইটার’ যাদের বলে আর কি! তাই ট্যাঙ্কে ভালো ফিল্ট্রেশন রাখা অবশ্যই দরকার৷ নাহলে ওই ছড়ানো খাবার ও বর্জ্য থেকে খুব দ্রুত ট্যাঙ্কের জলে এমোনিয়া নাইট্রেট এর মতো ক্ষতিকারক পদার্থ বেড়ে যেতে পারে৷
এরা যেহেতু হাইব্রিড মাছ,তাই প্রজননের ক্ষেত্রে এরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ৷ তবে কোনো প্রাকৃতিক মাছের সাথে মিলনে অনেক সময় এদের ডিম নিষিক্ত হয়৷ ফিমেল মাছেরা কোনো ফ্ল্যাট সারফেসে,বিশেষ করে চ্যাপ্টা পাথরের ওপর ডিম দেয়৷ তারপরে বাবা মা দুজনেই সেই ডিম পাহারা দেয়৷ যদি যেই ডিমে ছত্রাক লেগে যায় তাহলে সেগুলো তাদের বাবা মা এরই উদরস্থ হয়৷
সব মিলিয়ে প্যারোট আকারে ও রঙে বেশ আকর্ষণীয় এবং তথাকথিত ‘হার্ডি’ হওয়ার কারণে যে কোনো শখের মাছ পুষিয়েদের কাছে, বিশেষ করে মাছ পোষার হাতেখড়ির সময়ে, রেস্তরা-অফিসের ট্যাঙ্কে বর্তমানে অন্যতম পছন্দের মাছ হয়ে উঠেছে৷ নৈতিকতার প্রশ্ন নিশ্চই আছে, থাকবেও৷ কিন্তু জনপ্রিয়তা যদি হাইব্রিড মাছের সাফল্যের মাপকাঠি হয় তাহলে নিঃসন্দেহে প্যারোট একটি সফল হাইব্রিড ফিশের উদাহরণ হয়ে থাকবে৷