Native Fish In Aquarium
অ্যাকোয়ারিয়ামে দেশি মাছ পালন ও কিছু সমস্যা
বর্তমানে অ্যাকোয়ারিয়ামে বিভিন্ন দেশি মাছ পালন একটি জনপ্রিয় শখে পরিনত হয়েছে। ট্রাডিশনাল ফার্ম ব্রিড বিদেশী রঙিন মাছের পাশাপাশি খাল-বিল-জলা থেকে ধরা মাছও সমান জনপ্রিয়তা লাভ করছে। খলসে, অঞ্জু, লালচাঁদা, বনকই এর মতো অতীতে জনপ্রিয় মাছের পাশাপাশি ল্যাটা, ট্যাঙড়া, কালবাউস, খয়রার মতো মাছগুলিও ধীরে ধীরে দেশি মাৎসপ্রেমিকদের পোষ্য হিসেবে কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু এই জনপ্রিয়তার মাঝেই কিছু সমস্যা লুকিয়ে আছে, সেই নিয়েই আজ আমাদের লেখালেখি …
বেশিরভাগ দেশি মাছ পালিত রঙিন মাছের মতো বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয় না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সব মাছেদের আমাদের পার্শ্ববর্তী নদী, পুকুর, খাল-বিল, নয়ানজুলি এমনকি ধানক্ষেত থেকেও সংগ্রহ করা হয়। অর্থাৎ মাছ গুলির আহরণ সম্পূর্ণ ভাবে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। অথচ মানুষের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন ও নানাবিধ দূষণের ঠেলায় সেই সব জলাভূমিগুলোই আজ ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা বিপদগ্রস্ত। দেশি মাছের প্রজাতি গুলি খুব টিমটিম ভাবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। চাষের মাছের পুকুর গুলোতে বানিজ্যিক ভাবে অলাভজনক দেশি মাছের অস্তিত্ব দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। এখানে ও ওখানে যেটুকু টিকে আছে তাদের উপর আক্রমণকারী বিদেশী মাছের চাপ ক্রমশ বাড়ছে, ফলে সব মিলিয়ে দেশি মাছের জন্য এক প্রাণান্তকর অবস্থা। টিকে থাকার লড়াইয়ে ক্রমশ পিছু হটা মাছগুলির এবার লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন শখের মাছ পুষিয়ে ও তাদের মাছ সরবরাহকারী কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির। বাস্তুতন্ত্রের একতরফা ক্ষতি করে নির্বিচারে চলছে দেশি মাছ সংগ্রহ এবং তা চলে যাচ্ছে আমার-আপনার অ্যাকোয়ারিয়ামে।
তাহলে এখানে প্রশ্ন ওঠে, এমতাবস্থায় কি করনীয়? বিশেষত Hobbiest দের পক্ষ থেকে ….
১) প্রথমেই বলি, দেশি মাছ পোষাটাকে স্ট্যাটাস সিম্বল হিসেবে না দেখা, দেশি মাছ পুষলেই “কুল” লাগে এই ধারণাটাকেই প্রশ্রয় না দেওয়া। এখানে পুষে-পুষে শেখার কোন অবকাশ নেই, কারণ দু-চারটে ফার্ম ব্রিড ডিসকাস মরলেও রেস্ত খসিয়ে আপনি বাজারে আরও ওরকম ডিসকাস হয়তো পাবেন , কিন্তু একটা রাই খয়রা মরলে, আরেকটা কে পেতে সেই প্রকৃতি থেকেই ধরতে হবে। এবং সেটা পেতেও কালঘাম ছুটে যাবে। তাই আমাদের শখ বা ভুলের জন্য প্রকৃতি শাস্তি পাবে এটা কখনোই কাম্য নয়।
২) “দেশি মাছ মানেই চাপ নেই” এই ব্যাপারটা মস্ত বড় ভুল এটা ভালোভাবে মাথায় রাখা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই They are extremely selective about water parameters, food and habitat, তাই রীতিমতো গভীর গবেষণা না করে পোষা উচিত নয়। বেশিরভাগ মাছ খাল-বিল-জলা থেকে ধরে আনলে simply না খেয়ে, বা খুব কম খেয়ে মরবে এটাই শক্ত বাস্তব, তাই অযথা মাছ ধরে/কিনে এনে অপটিমাম থেকে হিকারি কোনটা ট্রাই না করে যাওয়াই ভালো। কারণ দেশি মাছ ডাফনিয়া-আর্টিমিয়া বোঝে আপনার পকেটের ভার বোঝে না।
৩) They are extremely poor community fish, কাউকে কিছু করছে না বলে দুটো ব্যাডিস বা মৌরলা ধরে এনে অ্যাঞ্জেল কিম্বা ব্যানানার সাথে ছেড়ে দেওয়া মানসিক অসুস্থতার লক্ষন। পরিনতি বিদেশী ফার্ম ব্রিড মাছের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে ধীরে ধীরে শুকিয়ে মৃত্যু। তাই যদি নিতান্তই পুষতে হয় Must go for species only tank, but never ever put them into a community tank with any other species of fish (native or non native).
৪) এই পর্যন্ত পড়ে যাদের মাথা ঝিমঝিম করছে তাদের জন্য আরো জানিয়ে রাখি, প্রকৃতিতে একসাথে পাওয়া যায় বলেই সেইসব আপনার অ্যাকোয়ারিয়ামে আলো করে থাকবে এরকম কোন মানে নেই, ভুতো বেলের সাথে অঞ্জু কিম্বা দাঁড়িয়া রেখে দেখুন, আস্তে আস্তে সব হাওয়া হয়ে যাবে, অর্থাৎ এখানেও খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক চলে । এছাড়াও বহু দেশি মাছ আছে যাঁরা শোলিং বা স্কুলিং ফিশ, তাই তাদের ঝাঁক ধরেই রাখতে হয়, নির্দিষ্ট মেল-ফিমেল রেশিও মেনেই পুষতে হয়, তাই হেব্বি দেখতে বলে একটা দুফুট ট্যাঙ্কে চাড্ডি লাল খলসে পোষা যায় না।
৫) বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেশি মাছগুলো নির্দিষ্ট মাইক্রো হ্যাবিট্যাটে অভিযোজিত হয়ে থাকে, তাই অ্যাকোয়ারিয়ামে সেই মাইক্রো হ্যাবিট্যাট তৈরি না করতে পারলে মাছগুলো পোষা মানেই তাদেরকে কষ্ট দেওয়া, প্রকৃতির ক্ষতি করা। তাই শুধুমাত্র শখের বশে প্রকৃতির ক্ষতি করা সুস্থ চিন্তা ভাবনা হতে পারে না। যদি দেশি মাছ পুষতেই হয় এমন মাইক্রো হ্যাবিট্যাট তৈরি করুন সেখানে মাছগুলো শুধু ভালো থাকবে তাই নয় বরং সফলভাবে ব্রিডিং করবে এবং আপনি সেখান থেকে প্রকৃতিতে ছাড়তে পারবেন। তবেই হবিইস্ট হিসেবে আপনার লাভ, প্রকৃতির লাভ।
পরিশেষে আরো একটা কথা বলি প্রকৃত দেশ প্রেমিক হলে, অ্যাকোয়ারিয়ামে ‘দেশি’ ধরে না এনে, বাড়ির পাশের পুকুর-খাল-বিলের কচুরিপানা-আগাছা-প্লাস্টিক পরিস্কার করে দেওয়া ভালো। এতে যেমন ভারত স্বচ্ছ হয়, দেশি মাছের-ও বেশি বাচ্চা হয়। তাই আর কি টাইম নষ্ট লাভ কি, চলুন গামছা পড়ে লেগে পড়ি কাজে ….