Neolamprologus caudopunctatus
সালটা 1858। দুই ব্রিটিশ পর্যটক নীল নদের প্রবাহ ধরে উৎসের খোঁজে বেরিয়ে উপস্থিত হয়েছে পূর্ব আফ্রিকার মধ্যভাগে এক সুবিশাল জলরাশির মাঝখানে। হ্যাঁ ! লেক টাঙ্গানিকার সাথে সমগ্র পৃথিবীর পরিচিতি তখন থেকেই।
বুরুন্ডি, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো, তানজানিয়া ও জাম্বিয়া এই চার দেশের মধ্যে বিস্তৃত লেক টাঙ্গানিকা পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম লেক। টাঙ্গানিকার সুবিশাল জলরাশি লুকিয়ে রেখেছে 1300 র ও বেশি সংখ্যক মৎস্য প্রজাতি, অগুনতি উদ্ভিদ ও অমেরুদন্ডী দের । যাদের মধ্যে 600 র ও বেশি প্রজাতি endemic। অর্থাৎ তাদের আমরা শুধু এখানেই দেখতে পাই সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে। শেষ দুই দশক ধরে বহু টাঙ্গানিকান প্রজাতি আমাদের aquarium জগতে জায়গা করে নিয়েছে। তাদের মধ্যে আজ আমরা আলোচনা করবো যে ছোট্ট প্রজাতি দের নিয়ে,তাদের মূল বাসস্থান লেকের জাম্বিয়ান উপকূল বরাবর পাথুরে ও বালিময় অঞ্চল যেখানে জলের গভীরতা মোটামুটি 6 ফুট থেকে 50 ফুটের আশেপাশে হয়। Neolamprologus caudopunctatus ।
প্রথমেই বলি caudopunctatus প্রজাতি কে মোটামুটি ভাবে ক্ষুদ্র(dwarf) সিকলিড গোত্রের মাছেদের মধ্যে ফেলা হয়। একটা পূর্ণ বয়স্ক পরুষ মাছ যেখানে সর্বোচ্চ 3.5 ইঞ্চি অব্দি পৌঁছতে পারে সেখানেই একটা স্ত্রী মাছ আকারে পুরুষের থেকে ছোট হয় (2.5ইঞ্চি) । বলতে পারেন এই আকারের অসমতা লিঙ্গ নির্ধারণের একটা উপায় এই মাছের ক্ষেত্রে। Caudopunctatus কথাটা লাতিন, যার অর্থ ( caudo অর্থাৎ caudal, punctatus অর্থাৎ spotted) উজ্জ্বল ছাপের লেজ বিশিষ্ট মাছ। এদের টরপেডোর মতো ধূসর সাদা শরীরের ওপরের উজ্জ্বল কমলা বা হলুদ (collection point অনুযায়ী) রঙের dorsal পাখনা টি সবার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য যথেষ্ট। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্ত সিকলিড গোত্রীয় দের মতো এরাও মেজাজের ওপর রঙের পরিবর্তন করে, যেমন কখনো কখনো মাছ ভয় পেলে বা স্ট্রেসে থাকলে আপনি তিনটে উলম্ব দাগ দেখতে পারেন এদের শরীরে। আগেই বলেছি আকারের পার্থক্য পুরুষ স্ত্রী চেনাতে পারে আপনাকে । আরেকটা দিক অবশ্যই বলবো একটু মেজাজের ওপর খেয়াল রাখলেও আপনি পুরুষ স্ত্রী নির্দিষ্ট করতে পারেন। পুরুষদের মেজাজ অনেক চড়া হয় স্ত্রীদের অপেক্ষা (অবশ্যই প্রজননের সময় এটার ব্যাতিক্রম দেখা যায়)।
এবারে আসি কেমন aquarium বানাবেন এদের রাখতে হলে। মোটামুটিভাবে যদি কেউ সমস্ত neolamprologus স্পিসিস দিয়ে কমিউনিটি ট্যাংক বানান তো caudopunctatus খুব সহজেই সেখানে নিজের জায়গা করে নিতে পারবে।প্রতিবারের মতো এবারও বলবো যদি আপনি মাছের সামাজিক আচার আচরণ, আগ্রাসন ও স্বভাবের প্রকৃত মজা উপভোগ করতে চান তাহলে অবশ্যই caudopunctatus species only ট্যাংক বানান। মোটামুটি ভাবে একটা 50 থেকে 60 লিটারের ট্যাংক একটা জোড়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট। এই basic হিসেব টা মাথায় রেখে আপনি যতগুলো মাছ রাখতে চান সেরকম আকারের ট্যাংক বাছতে পারেন। এদের প্রাকৃতিক বাসস্থানে যেহেতু পাথর আর বালির প্রাধান্য বেশি তাই বালি আর পাথর দিয়ে ট্যাংক স্কেপ করা যেতে পারে। নরমাল কনস্ট্রাকশন স্যান্ড চলবে যদি আপনার জলের pH 7 এর ওপর থাকে। খুব ভালো হয় যদি aragonite sand ব্যবহার করা যায় কারণ এতে pH টা সঠিক ভাবে বাফার হতে পারে। পারলে কিছু শামুকের খোল যোগ করতে পারেন, এতে আপনার aquarium যেমন একটা biotope look পাবে তেমনি caudo গুলো ভালো লুকানোর জায়গা ও প্রজননের জায়গা পাবে। প্রসঙ্গত একটা কথা বলে রাখি প্রায়ই caudopunctatus কে shell dwellers দের দলে ফেলা হয় কিন্তু এরা সত্যি কারের shell dweller দের (true shell dweller) দলে কোনোকালেই পড়েনা। বরং এদের কে opportunistic shell dweller বলা যেতে পারে। অর্থাৎ যেমন Shell dwellers Neolamprologus multifaciatus তাদের সারা জীবন shell এর মধ্যে কাটায় , এমনকি প্রজননের সময় ও shell কেই ব্যবহার করে , তেমন টা এরা করেনা। এরা সাধারণত cave spawner হয়, সে পাথরের খাঁজের cave formation হোক কিংবা সুযোগ পেলে বড় কোনো শামুকের খোল হোক।
মাছ সঠিক ভাবে পুষতে একটা সঠিক খাদ্যাভ্যাসের প্রয়োজন। প্রকৃতিতে আমরা caudopunctatus কে জলের ছোট্ট ছোট্ট অমেরুদন্ডী , উদ্ভিদ ও প্রাণিকনা দের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে দেখে থাকি। সেই দিকটা খেয়াল রেখেই aquarium এ caudo দের সঠিক diet আপনাকে নির্বাচন করতে হবে। নিয়মিত ভাবে ভালো মানের omnivore flake ফুড বা pallet ফুড
ব্যবহার করতে পারেন। তার সাথে অবশ্যই থাকতে হবে brine shrimp বা blood worm এর বিশেষ ভোজ। এক্ষেত্রে একটা বিষয়ে একটু বেশি খেয়াল রাখবেন, যাই খাওয়ান না কেন যেন অতিরিক্ত খাবার tank এর তলদেশে খুব বেশি সময় পড়ে না থাকে কারণ তাতে জলের মান যেমন পড়বে তেমনি মাছের অভ্যন্তরীণ পৌষ্টিকপ্রণালী জনিত সমস্যাও হতে পারে।
উপরিউক্ত বিশেষ দিক গুলো খেয়াল রাখলেই আপনি খুব সহজেই caudopunctatus প্রজননে আগ্রহ দেখায়। পরিণত অবস্থায় একটা পুরুষ মাছ নিজের সঙ্গীনী নির্বাচন করে। aquarium এর মধ্যে পাথরের গুহা বা shell বা মাটির তবে নীচে কোনো জায়গা বেছে স্ত্রী মাছটি ডিম পাড়ে। পুরুষ মাছটি ডিমগুলো fertilize করার পর স্ত্রী ডিমে তা দেওয়া শুরু করে। এই পুরো প্রক্রিয়াতে পুরুষ মাছ পাহারা তে থাকে। মোটামুটিভাবে ডিম পাড়ার 72 ঘন্টা পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। বাচ্চা বের হলেই স্ত্রী ও পুরুষ দুজনেই বাচ্চা দের পাহারাতে নিযুক্ত হয়। আপনি brine shrimp hatch করে বাচ্চা দের খাওয়াতে পারেন।
এবার নতুন টাঙ্গানিকান ট্যাংক বানালে একবার এই মাছ রেখে দেখতে পারেন আশাকরি ভালো লাগবে।