Tank Size

fishkeeping simplified

Tank Size

বিষয়ঃ “ছোট্ট ট্যাঙ্কে বড় মাছ”
মাছ পোষার নৈতিকতার বিশেষ দিকগুলো তুলে ধরার জন্য টিম পাইরেটস কে অশেষ ধন্যবাদ।গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন আঙ্গিকগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।মাছের পর্যাপ্ত জায়গা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।মাছ পোষার শুরুর দিকে অনেকেই অজ্ঞাতসারে কিছু ভুলভ্রান্তি করে থাকেন। নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছের জন্য যথেষ্ট জায়গা না দেওয়া যার মধ্যে অন্যতম।একটা প্রাপ্তবয়স্ক (১০ ইঞ্চি) অস্কার মাছের জন্য ২০০ লিটারের অ্যাকোয়িরাম দেওয়ার কথা বলা হয়ে থাকে।একটা গোল্ডফিশের জন্য ১০০ লিটার। মাছ বেশি হলে স্বাভাবিকভাবে ট্যাঙ্কের ঘনফল আরও বাড়বে, সাথে সাথে জলের পরিমাণ ।
কিন্তু, আমাদের মধ্যে কজন এসব সাইজ চার্ট মেনে চলি? মেনে না চললে কী হবে?
#১.জলের_গুণমান_খারাপ_হয়ে_যাবেঃ
আমরা এতদিনে জেনে গিয়েছি যে সঠিকভাবে নাইট্রোজেন চক্র সম্পূর্ণ করা ট্যাঙ্কে মাছ স্বাস্থ্যকরভাবে থাকে। ট্যাঙ্কে মাছ পটি করে, খাবারের অবশিষ্টাংশ পড়ে থাকে, সেখান থেকে অ্যামোনিয়া তৈরি হয়।ব্যাকটিরিয়া রা অ্যামোনিয়া কে নাইট্রেটে রূপান্তরিত করে,পরবর্তী পর্যায়ে নাইট্রেট থেকে কম ক্ষতিকারক নাইট্রাইট তৈরি হয়।এইভাবে যেকোন ট্যাঙ্কে ভারসাম্য রক্ষিত হয়।
এইবার, আমি ২ ফুট জায়গায় ২ খানা অস্কার রেখেছি,তারা গাঁতিয়ে খাচ্ছে ও বর্জ্য উৎপন্ন করছে, অ্যামোনিয়া-নাইট্রেট যা তৈরি হবে, তা অত্যধিক।ওই জায়গায় যা ব্যাকটেরিয়া থাকবে তা অত অ্যামোনিয়া কে বিয়োজন করতে পারবে না।ফলস্বরূপ ট্যাঙ্কের ভারসাম্য নষ্ট, জলের গুণমানের দফারফা ও নানারকম রোগের প্রাদুর্ভাব।মাছের পটল তোলাও এই পরিস্হিতিতে যথেষ্ট স্বাভাবিক।
#২.জায়গা_দখলের_লড়াইঃ
মাছেদের জগতে যারা আক্রমণাত্মক, তাদের কাঁচের খাঁচায় বেড়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট জায়গা চাই যাতে খেয়োখেয়ি কম হয়, বা হয়ই না। আমি কী প্রজাতির মাছ পুষছি, সেটা সম্পর্কে আমাকেই জেনে নিতে হবে এবং পর্যাপ্ত জায়গা, লুকনোর বন্দোবস্ত করে রাখতে হবে। কথার কথা যদি আপনি একটা চার ফুট ট্যাঙ্কে বেশ কয়েকটি Malawi hap রাখেন তবে তাদের অধিকাংশ মারামারি করে পঞ্চভূতে বিলীন হবে, যেগুলো টিকবে সেগুলোর পাখনা-লেজ-টেজ যাচ্ছেতাই ব্যপার হবে। তাই যদি Haplochromis দের মনে ধরলে ৮-১০ ফুট ট্যাঙ্ক না বানিয়ে পুষতে যাওয়া একেবারেই বোকামি।
#৩.ধকলঃ
পাতি বাংলায়- স্ট্রেস খাওয়া।
দেখুন, আপনি- আমি যে মাছ পুষছি, বংশগতভাবে তারা পুকুর,নদী বা সমুদ্রের বাসিন্দা। ভাগ্যক্রমে কয়েক ফুটের ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। সেই ঘরও যদি কার্পণ্য করে কমিয়ে দিই,তাহলে ওদের আর কী থাকলো!পর্যাপ্ত জায়গা দিলে ওরা একটু ল্যাজ খেলিয়ে ঘুরে বেড়ালো, পাখনা নাড়িয়ে এদিক-ওদিক তদারকি করল, তবে না ওদের মন-মেজাজ ভালো থাকবে। আর মন ভালো থাকলেই স্ট্রেস হবে কম, রোগবালাই সহজে হবে না। এমনকি ছানাপোনা দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘর-গেরস্থলি গুছিয়ে নেওয়াও কোন আশ্চর্য ব্যাপার নয়।
#৪.বৃদ্ধি_কমে_যাওয়াঃ
পর্যাপ্ত জায়গা না পেলে মাছ বাড়বে কেমনে! ছোট জায়গায় অনেক মাছ রাখলে বিভিন্ন কারণে নিজেদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে, এবং শক্তিশালী কয়েকটি মাছ টিকে থাকলেও ধীরে ধীরে দুর্বল মাছগুলি মরে যেতে শুরু করবে, এছাড়াও তাদের অধিকাংশই অপুষ্টি, বামনত্বের মতো রোগে ভুগে স্বাভাবিক জীবদ্দশার অনেক আগেই ধরাধামের মায়া ত্যাগ করবে ।ধরুন না, আপনি যদি একটা বাচ্চা অারোয়ানা মাছ এনে দেড় ফুট ট্যাঙ্কে রাখেন, সে থোড়িই তার বাপ-ঠাকুর্দার সাইজ পাবে!
তাই মাছ আনার আগে জেনে নেওয়া উচিত সে পূর্ণবয়স্ক হলে কত বড় হয় আর সেই অনুসারে ট্যাঙ্কের ব্যবস্হা অবশ্যই করতে হবে।
১)হরমোনজনিত বৃদ্ধির সমস্যা-
জলের মধ্যে মাছেদের শরীর থেকে অনেক রকম হরমোন নিঃসৃত হয়।এর মধ্যে কিছু থাকে যারা মাছের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে,যাদেরকে growth hormone নামে সাধারণভাবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।উদাহরণস্বরূপ,গোল্ডফিশ ও আরও কিছু প্রজাতির মাছ গামা অ্যামিনোবিউটারিক অ্যাসিড,সোমাটোস্ট্যানিন নামে গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ করে থাকে।এই হরমোন জলের সাথে মিশে সংশ্লিষ্ট মাছের পারিপার্শ্বিক কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং ফলত,দৈহিক বৃদ্ধি কে ত্বরান্বিত করে।এখন,মাছেদের জগতেও প্রতিনিয়ত চলছে ‘যোগ্যতমের উদবর্তন'(survival of the fittest)।নির্দিষ্ট মাছের দেহগ্রন্থি থেকে বেড়োনো যে রাসায়নিক ঐ মাছ কে বাড়তে সহায়তা করছে,সে-ই আবার পাশের মাছটার বৃদ্ধিকে বাধা দিচ্ছে!এবার আমি আমার মাছগুলোকে মাথাপিছু যত বেশি গ্যালন করে জায়গা দেব,একটি মাছের দ্বারা নিঃসৃত হরমোন অন্য মাছের উপর তত কম প্রভাব ফেলবে,এরকম একটা সম্ভাবনা থাকছে।এছাড়া,নিয়মিত খুব বড় মাপের জল পরিবর্তন করে জলে দ্রবীভূত ঐসব হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে ফেলা যায়,ফলে প্রতিটা মাছের মোটামুটি একইরকম বৃদ্ধি হয়।মাছের প্রাকৃতিক বাসস্হানে- নদী তে জল প্রবহমান,কাজেই বৃদ্ধি হরমোনের মাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকে।পুকুরেও বৃষ্টি হলে এই সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়ে যায়।
২)পর্যাপ্ত অঙ্গসঞ্চালনের অভাব-
ছোটবেলায় বাড়িতে লাফদড়ি লাফাতে বলতো লম্বা হওয়ার জন্য।প্রাণীরা একটু শরীরচর্চা-টর্চা করলে রক্ত সঞ্চালন হয়,শারীরিক বৃদ্ধি হয়।ছোট ট্যাঙ্কে বড়সড় প্রজাতির মাছ রাখলে বেচারা রা নড়াচড়াই ঠিকমতো করতে পারবে না,ফলস্বরূপ,সব অঙ্গের সঠিক বিকাশ ব্যাহত হতেই পারে।
শুনেছি এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকান এবং ইউরোপীয়ান কিছু মাছের গ্রুপে উঁকি মেরে দেখেছি,ওঁদের আর গড়পড়তা আমাদের মাছ পোষায় একটা সাধারণ পার্থক্য আছে।আমরা অনেকেই বড় প্রজাতির বাচ্চা মাছ যখন বাড়িতে আনি,তখন ‘বেবি ট্যাঙ্ক’-এ রাখি;বড় হলে বড় জায়গা দিই।বিদেশি রা কিন্তু সাধারণত শুরু থেকেই বাচ্চা নয়,প্রাপ্তবয়স্ক মাছের আকার কী দঁাড়াবে তা মাথায় রেখে ট্যাঙ্ক কিনে তারপর বাড়িতে মাছ ঢোকান।একদিন যখন বড় জায়গা দিতেই হবে,শুরু থেকে দেওয়াই বোধহয় ভালো,আনুষঙ্গিক অনেক অসুবিধা,মাছের হঠাৎ করে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা- এগুলো এড়ানো যায়।
নীতি> নৈতিকতা।
নীতি=অনুশাসনবাক্য,হিতকথা,ন্যায়।
অর্থাৎ, নৈতিকতা আসলে কিছু নিয়ম যা সকলের হিতার্থে কাজে লাগে।
মানছি এটা কলিকাল এবং এই সময় নিজের তাৎক্ষণিক মনোরঞ্জনের কথা না ভেবে কাজ করলে লোকে বোকা বলে। কিন্তু কালের ধর্ম যা-ই হোক,কর্ম কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না।ব্যবসা হোক বা চাকরি,ক্রিকেট হোক বা জীবজন্তু পোষা, সুফল লাভ করতে গেলে নীতি মেনে চলতেই হবে।
আমরা অনেক সময় না জেনে অপর্যাপ্ত জায়গায় মাছ রাখি।তাতে হয়ত দোষ কিছুটা লাঘব হয়।কিন্তু জেনেও কেউ করলে,কিছু বলার নেই।আমি এক দন্তচিকিৎসককে জানি নিজের চেম্বারে দুটো স্পিৎজের পাশে ২×২×২ ফুট জায়গায় ঠিক ৯ খানা গোল্ডফিশ রাখেন, ৫ বছর ধরে একই সাইজ দেখছি,আমার সন্দেহ,মাছ টপকানোর পরে লোকটা একই সাইজের একই রঙের মাছ রিপ্লেস করে।কিন্তু দাঁতের স্বার্থে কিছু বলতে পারিনি (মাছ পোষায় অন্যায় সহ্য করাও বোধহয় অনৈতিক,এ নিয়ে আলোচনা হলে ভালো হয়)।
দেখুন,আমরা নিজেদের বাড়িতে তো চাট্টি ঘর বানিয়ে থাকি- শোওয়ার ঘর, খাওয়ার ঘর,বসার ঘর, পড়ার ঘর,ঠাকুর ঘর, স্নানঘর— মাছ বেচারাদের সব ঘরই একসাথে।তাই সেটুকু ব্যবস্হাও যাতে ত্রুটিহীন হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে বইকি।
সবশেষে,অনেক সময় শুনি, কেউ কেউ বলে, আমি মাছ খুব ভালোবাসি, ওদের কষ্ট দেখতে পারি না, কিন্তু তৃতীয় বিশ্বে থাকি, কী করব, পয়সাকড়ি নেই, বাড়িতে ট্যাঙ্ক রাখার জায়গা নেই,তাই বাধ্য হয়ে ছোট অ্যাকোরিয়াম বানাতে হয়েছে। ডিয়ার মেসোমশায়, এ জগতে প্রচুর শখ-আহ্লাদ রয়েছে,কম পয়সায় হয়। যে শখের যে নীতি, তা তো মানতেই হবে।পকেট ও জায়গায় না পোষালে জ্যান্ত পশুপাখি নিয়ে নাড়াচাড়া না করাই ভালো।
সবশেষে,মাছ পোষার মতো ভালো জিনিস,ভালো শখ খুব কম আছে।দরকার শুধু একটু জানা,একটু খাটনি,একটু পয়সা,আর এটা মনে রাখা যে আমরা জীবন্ত কাউকে বাড়িতে রাখছি সুতরাং তার সুবিধামতো পুরো পরিবেশ টা আমাকে বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং তাকে কষ্ট দেওয়া চলবে না।এটাই তো এথিকস্!

We are accepting the entries for IBAC

X