Thorichthys meeki (Firemouth cichlid)

fishkeeping simplified

Thorichthys meeki (Firemouth cichlid)

আগুনমুখো মাছের কথা৷

২১ মে, ৬৯৭ এ.ডি – খ্রীষ্টপূর্ব এবং খ্রীষ্ট পরবর্তী সময় মিলিয়ে মধ্য আমেরিকায় গড়ে ওঠা প্রায় ২০০০ বছরের ঐতিহ্যময় মায়া সভ্যতার ইতিহাসে কালো তারিখ হিসাবে উল্লিখিত আছে ওই দিনটা৷ ইতিহাসে অন্যান্য জিনিসের সাথে অত্যাধুনিক স্থাপত্যশিল্প, প্রায় নির্ভুল ক্যালেন্ডার, এবং চকোলেটের প্রথম কাল্টিভেটর হিসাবে স্মরণীয় হয়ে থাকা এই সভ্যতা ওই দিনটিতে পড়ে করাল আগুনের গ্রাসে৷ গৃহযুদ্ধে জর্জর মৃতপ্রায় সভ্যতার কফিনে প্রায় শেষ পেরেকটি পুঁতে দেয় ওই সময়ে হওয়া বিধ্বংসী অগ্নিকান্ড৷ তারপরে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর,ইউকাটন পেনিনসুলার ওপর দিয়ে গড়িয়ে গেছে অনেক জল৷ ঐতিহাসিকরা পেনিনসুলার তলদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করেছেন জমে থাকা ছাই এর স্তর৷ আর ২০১৬ সালে এই মায়া সভ্যতার আনুমানিক কেন্দ্রস্থলকে একটা অদ্ভুদ নাম দেওয়া হয়, Kaak Chi বা Mouth of fire. যদিও এই নামকরণ এবং জায়গা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে তর্ক রয়েছে যথেষ্টই, তবে একটা জিনিস নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই,থাকতেও পারে না৷ আর সেটা হলো ওই ইউকাটান পেনিনসুলার জলের তলার আগুন আজো জ্বলছে আর মায়া সভ্যতার প্রতিভু হিসাবে সেটা জ্বালিয়ে নিয়ে চলেছে আমাদের এই আজকের আলোচনার নায়ক ফায়ারমাউথ সিকলিড (Thorichthys meeki)৷
মধ্য আমেরিকান সিকলিড সাধারণভাবে একুয়ারিস্টদের কাছে প্রিয় তাদের তুলনায় বড়ো আকৃতির এবং গায়ে অসাধারণ রঙের সমাহারের জন্য৷ কিন্তু এই তুলনায় বৃহদাকার মধ্য আমেরিকান সিকলিডদের মধ্যে যে মুষ্টিমেয় সিকলিড তাদের ছোট্ট আকৃতি সত্ত্বেও সিকলিডপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হল এই ফায়ারমাউথ সিকলিড৷ এর বাসস্থানের উল্লেখ অনেকটা পূর্বকথনেই করেছি,তাও আরো নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ইউকাটান পেনিনসুলা, মেক্সিকো, গুয়াতেমালার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এদের দেখা মেলে৷ আমাদের প্রায় সবাইকেই স্কুলে পড়ার সময় সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই হতো, কোন গল্প বা কবিতার নামকরণের সার্থকতা৷ এই সিকলিডের ক্ষেত্রে বোধহয় সেই প্রশ্নের উত্তর লিখতে বসলে এক লাইনেই উত্তর শেষ হয়ে যাবে৷ কারণ এর লালচে কমলা আগুনে আভাযুক্ত নীচের চোয়ালের লম্বা অংশ যেটা প্রায় পেট অবধি বিস্তৃত, এর নামকরণ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশই রাখেনি৷ তার সাথে এদের গায়ের কালো লম্বা দাগ, পৃষ্ঠ ও পুচ্ছপাখনায় ময়ূরকন্ঠী রঙের ছিট ছিট এদের যে কোনো একুয়ারিয়ামে শো-স্টপার করে তুলতে যথেষ্ঠ৷ রঙের কথাই যখন উঠলো তখন আর এদের আকৃতির কথা বাদ যায় কেন! এরা মোটামুটি ৫-৬ ইঞ্চি মতো লম্বা হয়, মেলরা তুলনায় ফিমেলদের থেকে একটু বড়ো হয়৷
রঙ, আকৃতির পর এবার আসা যাক এদের প্রকৃতির বর্ণনায় যা এদের কাঁচের বাড়িতে রাখতে গেলে জানা একান্ত প্রয়োজন৷ এরা প্রাকৃতিকভাবে সেইসব জায়গাতে বসবাস করে যেখানে নদীর জলের স্রোত তুলনায় কম,সেটা একটু ঘোলাটে জল হলেও আপত্তি নেই৷ আর তার সাথে চাই একটু নিজেদের আড়াল করার মতো জায়গা৷ সেটা ভেজিটেশন হতে পারে অথবা কাঠকুঠো,পাথুরে গর্তও হতে পারে৷ তাহলে এদের ট্যাঙ্কে রাখতে গেলেও মোটামুটি এরম পরিবেশই রাখা ভালো৷ হয় বালির সাবস্ট্রেট দিয়ে কাঠকুঠো দিয়ে রাখা,নাহলে সেমি প্ল্যান্টেড ট্যাঙ্কে বগউড দিয়ে রাখা৷ শুধু গাছপালা থাকলে একটু মাথায় রাখতে হবে যে এরা কিন্তু মাঝেমধ্যে সাবস্ট্রেট খুঁড়ে গাছপালা এলোমেলো করে দিতেই পারে৷ এবার আসা যাক একটু টেকনিকাল ব্যাপারে৷ জলের ক্ষেত্রে এদের পছন্দ মোটামুটি ৭৫-৮৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট উষ্ঞতা আর ৬.৫ থেকে ৭.৫ পি.এইচ৷ আর এদের ভালো থাকার ক্ষেত্রে জল পরিষ্কার হওয়াটা খুব প্রয়োজন,তাই চাই হাই ফিল্ট্রেশন সিস্টেম৷ সাথে সাঁতরাবার জন্য একটু খোলামেলা জায়গা৷ তাই আকারে তুলনায় ছোট হলেও এদের তিনফুটের নীচের ট্যাঙ্কে রাখা উচিৎ নয়৷
কিন্তু এদের রাখা যাবে কাদের সাথে? অন্যান্য ওই সমআকৃতির সেন্ট্রাল আমেরিকান সিকলিডরা এর সঙ্গী হতে পারে, যেমন স্যালভিনি, কনভিক্ট এরা৷ অনেকে বেশ বড় ট্যাঙ্ক করে সেখানে বড়ো সেন্ট্রাল আমেরিকানদের সাথেও এদের রাখে,কিন্তু আমার মতে সেটা না করাই ভালো৷ খাওয়াদাওয়া নিয়েও এদের বিশেষ ঝামেলা নেই৷ একটু প্রোটিন জাতীয় প্যালেট, লাইভ, ফ্রোজেন সবই এরা বিনা বাক্যব্যায়ে উদরসাৎ করবে৷ মাঝেমধ্যে শাকসব্জি সিদ্ধও এরা অপছন্দ করে না,অন্ততঃ আমার ট্যাঙ্কে তো করতো না৷
সেন্ট্রাল আমেরিকান সিকলিড নিয়ে কথা বলবো অথচ তাদের এগ্রেসন নিয়ে কথা বলবো না,তাই কখনো হয়? হয়! তার কারণ ফায়ারমাউথ এগ্রেসিভ মাছ নয়৷ বেসিকালি এরা শান্ত এবং বেশ এডজাস্টেবল মাছ৷ এরা তখনই অশান্ত এবং টেরিটোরিয়াল হয়ে ওঠে যখন এরা প্রজননে লিপ্ত হয়৷ এদের ব্রিডিং বিহেভিয়ার জানার আগে দরকার এদের মেল ফিমেল চিহ্ণিত করা৷ মেলরা তুলনায় একটু বড়ো আকারের হয় সেটা তো আগেই বলেছি,আর একটা যেটা বলার সেটা হলো ফিমেলরা একটু কম উজ্জ্বল হয় আর ফিমেলদের পেটটা একটু গোলাকার,মানে ফিমেলরা তুলনায় একটু ছোটখাটো গোলগাল হয় আর কি৷ আর ফায়ারমাউথ কিন্তু মনোগোমাস মাছ! তারা বেশ দায়িত্বশীল স্বামী-স্ত্রী এবং পিতা মাতা৷ এরা সাধারণত কোনো ফ্ল্যাট জায়গায় ডিম পাড়ে যেমন পাথরের চাতাল, বড়ো পাতা এরম আর কি৷ স্পনিঙের সময় পুরুষ মাছ তার পার্টনারকে রক্ষার জন্য এতোটাই টেরিটোরিয়াল হয়ে যায় যে এই সময় যে কোনো আকারে বড়ো মাছকেও সে অর্ধচন্দ্র দিয়ে দিতে পারে৷ আর তার এই এগ্রেসনের ওয়ার্নিং হিসাবে সে তার লাল ফুলকা এবং নীচের চোয়ালকে ফুলিয়ে বড়ো করে নাড়াতে থাকে৷ এইসময় তার সৌন্দর্য হয় দেখার মতো৷ এরপর বাচ্ছা ফোটার পরেও তাদের বাবা মা যথেষ্ট সতর্কতা এবং যত্নের সাথে তাদের মানুষ,ইয়ে মানে মাছ করে তোলে আর কি!
ব্যাস, মোটামুটি এই মধ্য আমেরিকান আগুনকে আপনার ড্রইং রুমে আনার প্রাথমিক সুলুক-সন্ধান তো পেয়েই গেলেন৷ এবার একটু বড়ো ট্যাঙ্ক করে আপনার এবং মাছের পছন্দ মতো একটু ঘরবাড়ি সাজিয়ে একবার নিয়ে এসেই দেখুন না,পুরো আগুন লাগিয়ে দেবে জলে, কথা দিলাম৷

We are accepting the entries for IBAC

X