গোল্ডেন ডোরাডো আর পিরাপুটাঙ্গা

fishkeeping simplified

গোল্ডেন ডোরাডো আর পিরাপুটাঙ্গা

লকডাউনের বাজার, আপনি-আমি সবাই গৃহবন্দী, তবুও কি আর ঘরে থাকতে ইচ্ছে করে, মনে হয় না দূরের টানে কোথাও বেড়িয়ে পড়ি ? ধরুন পড়লেন, চলে গেলেন সুন্দরবন, কানহা, কাজিরাঙ্গা বা সিমলিপালে । গিয়ে দেখলেন ঝাঁকে ঝাঁকে হরিণের দল ঘুরে বেড়াচ্ছে । নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে। হঠাৎ দেখলেন তাদের মধ্যে কিছু বাঘও আছে, হরিণের দলের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হরিণরা নির্বিকার, বাঘেদের পাত্তাই দিচ্ছে না । আপনার গাইড বলছে ওগুলো সব বাচ্চা বাঘ, ছোটবেলায় হরিণের দলের সাথে ঘুরে বেড়ায়, বড় হলেই হরিণ ধরে খায়, যেহেতু গায়ের রং কিছুটা কাছাকাছি তাই হরিণরা বুঝতেই পারে না তাদের দলের সাথে তাদেরই শিকারী ঘুরে বেড়াচ্ছে।

গল্পটা শুনে আষাঢ়ে মনে হচ্ছে? মনে হচ্ছে লকডাউনে কাজকর্ম নেই বলে আজগুবি লিখছি? না মশাই না, বাঘ-সিংহের ডাঙার রাজত্বে এসব দূরতম কল্পনাতে না এলেও জলের নিচে কিন্তু হামেশাই এরকম হচ্ছে।

কোথায়? আপনি যেখানে বসে এই পোস্ট পড়ছেন সেখান থেকে প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরে ব্রাজিলে; কার্স্ট নদীতে, পান্তানাল জলাভূমিতে । স্বচ্ছ সুন্দর জলের সে সব জায়গা যেন প্রকৃতির নিজস্ব প্লান্টেড অ্যাকোয়ারিয়াম। আর সেই অ্যাকোয়ারিয়ামের বেতাজ বাদশা গোল্ডেন ডোরাডো (Salminus brasiliensis) , বিশালাকার এই সোনালী মাছ যেন জলের বাঘ। অত্যন্ত আগ্রাসী শিকারী। কিন্তু শিকার ধরার জন্য এরা গ্রহণ করেছে এক অদ্ভুত কৌশল। এদের প্রধান শিকার পিরাপুটাঙ্গার (Brycon hilarii) সাথে এদের গায়ের রঙে অদ্ভুত মিল, ছোটবেলায় এদের দুটি প্রজাতি যেন চোখে দেখে আলাদাই করা যায় না, সেই সুযোগটা নিয়েই ছোট ডোরাডোরা ঢুকে পড়ে পিরাপুটাঙ্গার ঝাঁকে, শাকাহারী পিরাপুটাঙ্গাকে দেখে অন্যান্য ছোট শাকাহারী মাছেরাও নির্ভয়ে কাছে চলে আসে, সেই সুযোগে গোল্ডেন ডোরাডোরা তাদের ধরে উদরস্থ করে । এছাড়াও ঝাঁকের নিরাপত্তার সুযোগ নিয়ে ছোট ডোরাডোরা বড় বড় শিকারীর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে। কিন্তু সুদিন তো আর চিরকাল থাকে না, একসময় গোল্ডেন ডোরাডো সাইজে পিরাপুটাঙ্গাকে ছাড়িয়ে যায়, এবং তখনই তাদের আত্মনির্ভর জীবন শুরু হয়। এবং সম্পূর্ণ রুপে ভুলে যায় অতীতের আশ্রয়দাতা পিরাপুটাঙ্গার কথা, এবং নির্দ্বিধায় ওদের শিকার করতে থাকে। এবং তখন বোধহয় পিরাপুটাঙ্গার দল বিলাপ করতে থাকে, এবং বিধাতা মুচকি হাসে ….

We are accepting the entries for IBAC

X