Alcolapia alcalica (soda cichlid)
সোডা সিচলিড
সুদুর আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব দিকে যেখানে আফ্রিকা মহাদেশে ভেঙ্গে দু টুকরো হতে শুরু করেছে সেখানে প্রকৃতি তার অপার বিস্ময় উজাড় করে দিয়েছে । সেই এলাকায় যেখানে ভাঙ্গন ক্রমাগত ধীর পায়ে অগ্রসর হচ্ছে সেখানেই তৈরি হয়ে একের পর এক হ্রদ । কারোর নাম টাঙ্গানিকা, কারোর নাম মালাউই কেউ বা আবার ন্যাট্রন, নাকুরু, মাগাডি ইত্যাদি । শুধু নামেই এরা আলাদা তাই নয়; এই হ্রদ গুলি আলাদা তাদের নিজস্ব ভূতাত্ত্বিক গঠনে ও জৈববৈচিত্রে । এই এলাকায় যেমন আছে গভীর স্বাদু জলের কিছু হ্রদ তেমনি পাশাপাশিই আছে ভীষণ লবণাক্ত কিছু হ্রদ । প্রকৃতিবিদের কাছে যেগুলো “সোডা লেক” নামেই বেশি পরিচিত। জীবন ধারণের জন্য ভীষণ কঠিন এই হ্রদ গুলিতে আশ্চর্যজনক ভাবে টিকে আছে কিছু বিশেষ কিছু Extreme fish, তাদের সম্পর্কে জানার আগে ছোট্ট করে একটু জেনে নেওয়া দরকার সোডা লেক গুলি সম্পর্কে …
সোডা লেক বলতে যে খুব সাধারণ লবণাক্ত হ্রদ গুলিকে বোঝায় তা কিন্তু নয়। প্রকৃতি বিজ্ঞানীদের বেঁধে দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী যে সকল হ্রদের জল Hypersaline (অতিমাত্রায় লবণাক্ত, সমুদ্রের জলের চেয়েও কখনো কখনো বেশি), PH 9 থেকে 12 এর মধ্যে এবং জলে উচ্চ মাত্রায় সোডিয়াম জাতীয় লবণ মিশ্রিত আছে তারাই সোডা লেক । অতএব সহজেই অনুমেয় এই জলে প্রাণের বিকাশ খুব সহজ নয়। কিন্তু এখানেই আশ্চর্য, বিবর্তনের আশীর্বাদে এখনেও বসবাস করে কিছু মাছ । ওদের মধ্যেই একজনকে নিয়ে আমাদের আজকের লেখালিখি “সোডা সিচলিড” ।
নামকরণ
হঠাত্ করে একটা মাছের নামের আগে ‘সোডা’ কথাটা জুড়ে রয়েছে দেখেই কৌতূহল জাগে, কেন এমন হলো ? আসলে এই মাছগুলো যে জলের বাসিন্দা তাকে জল না বলে সোডিয়ামের ( কার্বোনেট ও ক্লোরাইট) দ্রবন বলাই ভালো । তাই থেকেই এদের নামের সামনে সোডা শব্দটি জুড়ে গেছে । আর যেহেতু এরা cichlidae পরিবারে অন্তর্ভুক্ত তাই এদের নামের শেষে সিচলিড কথাটি এসে জুটেছে ।
দেখতে কেমন?
3-3.5 ইঞ্চির হলদেটে রঙের সিচলিড । পিঠের ও পায়ু পাখনা কালচে । গায়ে ছিটছিটে সাদা দাগ । পুরুষ গুলো বেশি রঙিন । স্ত্রী গুলি আকারে তুলনামূলক ছোট ।
থাকে কোথায়?
মুলতঃ আফ্রিকার রুক্ষ শুষ্ক মরু অঞ্চলের হ্রদ গুলিতে । বিশেষভাবে তানজানিয়ার লেক ন্যাট্রনের তীরে অবস্থিত অগভীর উষ্ণ প্রশ্রবণ গুলিতে; যেখানে জলের উষ্ণতা 40-42°C, pH 9.5-10.5 এবং KH 7000 এর বেশি । এই হ্রদ গুলির ধার গুলিতে জলের বাষ্পীভবনের ফলে যে ট্রোনা (Sodium Carbonate deposit) সঞ্চিত হয় তার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে এই অদ্ভুত সুন্দর মাছটি । বলাই বাহুল্য লালচে রঙের জলে যে এরকম একটি মাছ থাকতে পারে তা অনেকেরই ধারণার বাইরে ।
খায় কি?
যেহেতু Extreme environment এ বসবাস করে সেহেতু এদের খাদ্যের জন্য বেশ কষ্ট করতে হয়। উষ্ণ-ক্ষারীয় জলে যে ব্রাইন শ্রিম্প, আর্টেমিয়া এবং স্পাইরুলিনা জন্মায় সেগুলোই এদের প্রধান খাদ্য ।
বংশবৃদ্ধি করে কিভাবে?
মুলত মাউথ ব্রুডার। অর্থাত্ আর পাঁচটা আফ্রিকার সিচলিডের মতোই স্ত্রী মাছটি মুখে ডিম-বাচ্চা রেখে বড় করে। 30-50 টির মতো বাচ্চা হয় বলে শোনা যায় । দুই-তিন সপ্তাহ বাবা-মা বাচ্চাদের খেয়াল রাখে । একটি মাছ সাধারণত 2.5 ইঞ্চি সাইজের হলে প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে ।
আর কোন বিশেষত্ব আছে কি?
Extreme environment survivor ছাড়াও আরও একটি আশ্চর্যজনক বৈশিষ্ট্য এই মাছগুলির আছে । এরা বেশিরভাগ মাছের মতো রেচন পদার্থ হিসেবে অ্যামোনিয়া জাতীয় পদার্থ নির্গমন করে না । বরং উইরিয়া জাতীয় রেচন পদার্থ নির্গমন করে । যা এক কথায় unique ।
অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখা যাবে কি ?
মাছটি একদিকে যেমন প্রকৃতিতে বিরল তেমনি রঙিন মাছের বাজারেও ভীষণ দুর্লভ । ফলে বিশেষ যত্নআত্তি্ দরকার । এদের দুটি উপ প্রজাতি Oreochromis alcalius alcalicus ও Oreochromis alcalius grahami এর মধ্যে প্রথমটি অ্যাকোয়ারিয়াম ব্যবসায় কিছুটা available তাই ওদের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে তবেই মাছগুলো রাখা যেতে পারে। সাধারণত 100 লিটার জল ধরে এরকম অ্যাকোয়ারিয়ামে একটি কলোনি রাখা যায় । বায়োটোপ অ্যাকোয়ারিয়াম এদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত । কমিউনিটি সিচলিডের ট্যাঙ্কে না রাখাই সবচেয়ে ভালো ।
অ্যাকোয়ারিয়ামে খাদ্যের ব্যপারে বাছবিচার না থাকলেও প্রাকৃতিক পরিবেশ যে খাবার খায় সেগুলো দেওয়াই ভালো । তবে জলের pH ও Temperature stability ভীষণ ভাবে জরুরি । কম pH ও তাপমাত্রা একেবারেই সহ্য করতে পারে না ।
ব্যাস তাহলে আর ভাবনা কি ? পুষবেন নাকি সোডা সিচলিড ? ট্যাঙ্কে ব্রিডিং কিন্তু এখনো একটা বড় চ্যালেঞ্জ , তৈরি তো সেই চ্যালেঞ্জ নিতে ?