Fish with Gator Jaw

fishkeeping simplified

Fish with Gator Jaw

কুমিরমাছের কবলে

——————————–

আজকের এই পোস্টের সাথে হবির যোগাযোগ তেমন নেই, আবার একেবারেই যে নেই তা বলা চলেনা। আমরা যারা শখ করে বিদেশী মাছেদের পুষি (আমার মতো কেউ কেউ দেশি মাছও পোষে বটে), কেউ আফ্রিকার, কেউ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেউ বা সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার; আচ্ছা সেই আমাদের কি কোন দায়িত্ব নেই আমরা যে বাস্তুতন্ত্রে থাকি তার প্রতি???

এই পর্যন্ত পড়েই যারা ভাবছেন আমি সন্ধ্যেবেলা নীতিকথার পাঠ পড়াচ্ছি, তারা দয়া করে পুরোটা পড়ুন।

আর নিজের প্রয়োজনেই পড়ুন।তাহলে খুলেই বলা যাক ব্যাপারটা। খেয়াল করেছেন কি গত বছর দু’য়েক খবরের কাগজে আর তার থেকেও বেশী ফেসবুকের পাতায় একধরনের খবর বারবার আসছে!!!

“অমুক জায়গা থেকে উদ্ধার অদ্ভুত দর্শন মাছ”

আমি নিশ্চিত আপনাদের চোখে পড়েছে। কখনো বেলেঘাটা, কখনো বজবজ, কখনো বারুইপুর, কিংবা বরানগর কি ব্যারাকপুরে। আর ধরেই নিচ্ছি খবর হচ্ছে না আরো অনেক জায়গা থেকে। খবরের কাগজের লোকের মাথাব্যাথা নেই কি মাছ কোত্থেকে এল সেসব নিয়ে। আর না থাকাটাই স্বাভাবিক। আর ফেসবুকের লাইক, শেয়ার, ওমাগো, ছ্যা, কিউউউট এর জাঁতাকলে মোদী গান্ধী জিন্না পিষে যাচ্ছে সেখানে আর বেশি আশা নাই বা করলাম।

আপনারা যারা মাছ পোষেন, তাদের নিশ্চই বলে দিতে হবে না এটা কি মাছ!!! “গার মাছ” বা “অ্যালিগেটর গার (Alligator gar)”। কোথাকার মাছ তাও নিশ্চিত বলে দিতে হবেনা??? হ্যাঁ, মধ্য আমেরিকা। ইউনাইটেড স্টেটসের দক্ষিণ থেকে মেক্সিকো ছাড়িয়ে এদের আবাসভূমি। এবার বলুন দেখি এরা আপনার বাড়ির পাশের ঝিলে এল কোত্থেকে??? এবারো আপনি ঠিক ভেবেছেন “আমাদের মতো” কিছু শখের অ্যাকোরিয়াম প্রেমীর কাঁচের বাক্স থেকে। এই “আমাদের মতো” কথাটা আপনার গায়ে লাগছে কি??? লাগছে না??? আমার লাগছে!!! আমি নিঃসন্দেহ, আমাদের আশপাশের পুকুরে দীঘিতে খালেতে এদের আগমনে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে জানলে আপনারো লাগবে!!!

তার আগে একটু জেনে নেওয়া যাক এই মাছগুলোর সম্পর্কে। নামটা শুনেই বুঝতে পারছেন অ্যালিগেটর বা আমেরিকান কুমিরের সাথে এর একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। সম্পর্কটা এদের চ্যাপ্টা মাথা আর চোয়ালে কুমিরের মতো তীক্ষ্ণ দাঁতের সারিতে। মাথাখানা দেখলে কুমির বলে ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। গায়ের আঁশগুলোও যেন আমাদের পরিচিত মাছেদের থেকে আলাদা, কেমন যেন বর্ম মতো। আর দাঁত যারা চাক্ষুষ করেছেন তাদের নিশ্চই বলে দিতে হবেনা এরা শাকপাতা শ্যাওলার ভক্ত নয়। শিকারি!!! আদ্যপ্রান্ত শিকারি একটা মাছ। প্রধাণত জলের অন্যান্য মাছই এদের খাদ্যতালিকায় থাকলেও, সুযোগ পেলেই মুখের ভেতর এঁটে যায় এমন যেকোনো কিছুকেই পেটের মধ্যে চালান করতে দ্বিধা করেনা। সে জলের ব্যাঙই হোক, পাখিই হোক কি জলে সাঁতরানো কোন ছোট স্তন্যপায়ী। বিশেষ বাছবিচার নেই এদের। আর হ্যাঁ সাইজের কথাটা তো বলাই হলনা। ৫-৬ ফুটের গার ওদেশে খুব একটা দুর্লভ না। সত্যিকারের মনস্টার ফিশ।

তো আমাদের কোনো শখের হবিস্ট আদর করে পুষলেন এদেরই কাউকে। পুষতে গেলে কি চাই??? একটা অ্যাকোরিয়াম, চারফুট হলেই কলকাতায় আপনি যথেষ্ট বড় ট্যাঙ্কের মালিক, পাঁচ ফুটিয়া হলে আপনাকে ঠেকায় কে??? আর তার বড় হলে তো আপনি রাজা!! সব নীতিশাস্ত্রের ওপরে!! আর দুটো টপ ফিল্টার, একটা এয়ার পাম্প। ব্যাস গল্প শেষ। খাওয়ানো দাওয়ানো চলতে থাকলো, দামী ফিশফুড সাথে সাথে জ্যান্ত মাছের ভোগ চড়ানো। বেশ লাগে কাঁচঘরের মধ্যে লাইভ শিকারদৃশ্য দেখতে। তো সেই অভাগা যখন রাম খ্যাঁটন দিতে দিতে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলো তখন হবিস্টের কপালে চিন্তার ভাঁজও তত বাড়তে থাকলো। আর যে ধরেনা। ট্যাঙ্ক যে ফেটে যায় যায়!! এর সাথে অবশ্য সেই সব বঞ্চিত হবিস্টরাও আছেন যারা পড়াশোনার জানার বিন্দুমাত্র ধার ধারেন না। কোন মাছ বাড়িতে ঠাঁই পাবে তার বিচার করেন মাছের “কিউটনেস” দিয়ে। সুতরাং দুফুট ট্যাঙ্কে দুটো গার এই পরিস্থিতি পূর্ববর্ণিত ঘটনা পরম্পরাকে আরো আরো তরান্বিত করে থাকে। এর পর “স্পেস প্রব্লেমে কম দামে সেল” আর “তুই নিলে নিয়ে নে” এইসব পেরিয়ে “দে পাশের পুকুরে ছেড়ে”। খালে বিলে বেশীরভাগ গারের জীবন ইতিহাস যে এই পথেই চলেছে সেটা বোধকরি একপ্রকার নিশ্চিত।

এখন মুশকিলটা হল, পুকুর খালে বিলে গিয়ে পড়া মাছটা মনের সুখে আমাদের দেশি মাছেদের গুষ্টিনাশ করতে থাকলো আর মনের সুখে বাড়তে থাকলো। এদের আদি বাসভূমির পরিবেশের সঙ্গে আমাদের দেশের পরিবেশ কিন্তু খুব একটা আলাদা নয়। আর আমাদের বাংলার প্লাবনভূমি (floodplains) তো একরকম এদের কাছে স্বর্গরাজ্য। আর এরা ভীষণ রকমের ক্ষমতা আছে যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার। সে মিষ্টিজল হোক কি খাঁড়ির জল। এই ধরণের বিদেশী প্রজাতি অন্য কোন বাস্তুতন্ত্রে (ecosystem) ঢুকে পড়লে তাদের Invasive Alien Species বলা হয়। আর এরা যদি শিকারি হয় এবং food chain এর ওপরদিকে থাকে তাহলে তো গল্প আরো জমে গেল!!! দেশি বাস্তুতন্ত্রের দফারফা। একেই চাষের মাঠে দেওয়া পেস্টিসাইড দেশি মাছেদের পপুলেশন কমাতে কমাতে “প্রায় নেই” করে দিয়েছে, সাথে নিয়মিত পুকুর বোজানো এবং আরো চোদ্দটা মাথাব্যথা। এবার বিদেশি শিকারির উপদ্রব!!!

আবার কি ভাবছেন? কয়েকটা তো ঢুকেছে, কি আর এমন হয়েছে। বাচ্চাকাচ্চা তো আর দেয়নি!!! হ্যাঁ ওটাই একমাত্র আশার আলো। স্ত্রী অ্যালিগেটর গার প্রজনন দশায় পৌঁছাতে অনেক সময় নেয়, পুরুষগুলো বরং সময় নেয় অনেক কম। আর আগেই বলেছি বাংলার প্লাবনভূমি এদের প্রজননের জন্য আদর্শ। জাপানে ঠিক এমনই পরিস্থিতি হয়েছিল। ওরা তড়িঘড়ি ব্যান করে দিয়েছে গারফিশ। অন্ধ্রপ্রদেশ তেলেঙ্গানা কিন্তু ভুগছে অলরেডি, এবার আমাদের পালা হতেই পারে।

এখনো সময় আছে শুধরে যান। ভালো মতো না জেনে কোনও মাছ কিনবেন না। শুধু অ্যালিগেটর গারের কথা বললাম (অ্যালিগেটর গারের সদৃশ একাধিক প্রজাতি কলকাতায় বিকোয়, একত্রে অ্যলিগেটর গার বললাম), সাথে আছে রেড টেল ক্যাটফিশ (Red tail catfiah), শোভেল নোজ ক্যাটফিশরা (Shovel Nose Catfish)। দয়া করে কেনার আগে বারবার ভেবে দেখুন আপনার ট্যাঙ্ক এদের জন্য যথেষ্ট তো??? আপনি রাখতে পারবেন তো??? মুহূর্তের শখ মেটাতে গিয়ে বড় কোন ক্ষতি ডেকে আনছেন না তো??? নিজে বুঝুন। অন্য হবিস্টকে বোঝান।

কলকাতার আশপাশে বারুইপুর, বরানগর আর ব্যারাকপুর থেকে পাওয়া কিছু অ্যালিগেটর গারের ছবি থাকলো সাথে।

We are accepting the entries for IBAC

X