Brachyplatystoma rousseauxii (Silver Dorado)
Eliud Kipchoge, Arctic Tern, Silver Dourado যদি এই তিনটি নাম আপনার পরিচিত হয় তবে এদের একাসনে বসালে আপনার মনে প্রথম কি আসবে?
ঠিক ধরেছেন, এরা তিনজনেই লম্বা দূরত্বের দৌড়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন প্রথম দুজনের আলোচনা এই গ্রুপে অপ্রাসঙ্গিক, তৃতীয়জনের গল্প নিয়েই আজকের লেখা।
মাইগ্রেটরি মাছের নাম বললেই যাঁদের নাম মনে আসে তাঁদের মধ্যে ইলিশ, স্যামন, ইল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এদের কথা কমবেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু সিলভার ডোরাডো ক্যাটফিসের (Brachyplatystoma rousseauxii) কথা এত কম জানা যায় কেন? কারণ এরা পৃথিবীর একটি মাত্র নদীব্যবস্থায় বসবাস করে। এবং সেই নদী ব্যবস্থার অধিকাংশই গহীন অরন্যে ঢাকা। হ্যাঁ ঠিকই আন্দাজ করছেন আমাজনের বৃষ্টি অরন্য, যে অরন্য এখনও মানব সভ্যতা থেকে লুকিয়ে রেখেছে তাঁর অসংখ্য রহস্য । তাই হয়তো পৃথিবীর মিষ্টি জলের মাছেদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূরত্বের মাইগ্রেশনের রেকর্ড থাকলেও এদের কথা সেভাবে শোনা যায় না। ওদেশে ফুডফিস হিসেবে প্রচলিত হলেও আমাজন-অরনিকোর এই গোলিয়াথ কিন্তু আজও মেছো হবিতে সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি। এটা শুনে যদি ভাবেন এদের সৌন্দর্য কম তবে কিন্তু ভীষণ ভুল ভাবছেন। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই মাছটি উজ্জ্বল চকচকে ধাতব রূপালি রঙের এবং সেই সাথে সোনালী আভা যুক্ত। টর্পেডো আকৃতির শক্তিশালী চেহারা, ততোধিক শক্তিশালী চোয়াল। মন্সটার কিপারদের জন্য এককথায় লুফে নেওয়ার মতো। তবে এইভাবে অশ্রুত থাকার কারণ কি? কারণ এদের বিশাল সাইজ, বিশাল বড় হ্যাবিট্যাট, মাইগ্রেটরি স্বভাব ও বিশাল বড় পাবলিক মন্সটার ট্যাঙ্কের চাহিদা। এমনি এমনি কি আর এদের আমাজনের থ্রি গোলিয়াথের মধ্যে একটা হিসেবে গন্য করা হয়!
তবে দৈত্য হয়েও এরা যে নিরাপদ তা কিন্তু একেবারেই নয়, মানুষের অত্যাচারে আজ এরা আজ বিপদাপন্ন । জঙ্গল কেটে সাফ করা, হ্যাবিট্যাট নষ্ট করা, কৃষিক্ষেত্র সম্প্রসারণ, অত্যাধিক শিকার এসব তো ছিলই, এর সাথে শুরু হয়েছে নতুন বিপদ, ড্যাম। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন আমাজন বেসিনের উপর তৈরি ছোট বড় সব বাঁধ, যা এদের মাইগ্রেশনের তথা জীবনচক্র সম্পন্ন করার প্রধান বাধা। নদীর উচ্চ অববাহিকার ছোটছোট চেক ড্যাম গুলি যেমন এদের ব্রিডিং গ্রাউন্ড গুলিকে যেমন বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে, তেমনি নিম্ন অববাহিকার বড় বড় ড্যামগুলো এদের নার্সারি এবং রেয়ারিং গ্রাউন্ডে যেতে বাধা দিচ্ছে, ফলে মাইগ্রেশন চক্র অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। দ্রুত কমছে জনসংখ্যা। দাবি উঠেছে সংরক্ষণের। দাবি উঠছে প্রাকৃতিক আবাসস্থল ফিরিয়ে দেওয়ার। সাধারণত আমাজন-অরিনকো বেসিনের উপরের অংশে আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চলের ঝোড়া-ঝিরি গুলোই এদের প্রধান ব্রিডিং গ্রাউন্ড, সেখানে পূর্ণ বয়স্ক মাছেরা ডিম পাড়ে, ডিম পারার পর সেই ডিম প্রায় মাসখানেক ধরে ভাসতে ভাসতে পুরো আমাজন অতিক্রম করে মোহনায় চলে আসে, এখানেই বাচ্চারা প্রচুর পরিমাণে প্লাংটন, ক্রিল ইত্যাদি খেয়ে বড় হতে থাকে, দের থেকে দুবছর পর এরা যাত্রা শুরু করে স্রোতের বিপরীতে আমাজন বেসিনের উপরের দিকে। যেতে যেতে পথেই কাটিয়ে ফেলে আরো দু-তিন বছর। এই পর্যায়ে এদের গায়ের রং উজ্জ্বল রূপালী থেকে সোনালী আভা আসতে শুরু করে, যৌবনপ্রাপ্ত হলে আস্তে আস্তে উঠে যায় আবার সেই আন্দিজের মাথায়, যেখানে ওদের জন্ম হয়েছিল। এভাবেই চলতে থাকে ওদের জীবন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী অববাহিকাকে একজীবনে দুবার অতিক্রম করার রেকর্ড স্পর্শ করে।
•• অ্যাকোয়ারিয়ামে পুষতে হলে : আচ্ছা মন থেকে বলুন তো এমন এক মুক্ত বিহঙ্গকে কাঁচের বাক্সে বেঁধে রাখতে কখনো আপনার ভালো লাগবে? ইচ্ছা করবে যাঁর ম্যারাথন জেতার কথা তাঁকে পাড়ার মাঠে এলেবেলে করে রাখতে? জানি করবে না তাই এই নিয়ে লিখবোই না, আর এটাও জানি এতেই পাইরেটসরা খুশি হবে। কারণ পাইরেটসরাও তো মুক্ত বিহঙ্গ, বাঁধা পড়তে জানে না।