channa andrao
লালচ্যাং
ওই যে আগের দিন বললাম দেশি তে নেশা বেশি, কথাটা কিন্তু নেহাত মিথ্যা নয়! সত্যি সত্যি দেশের মাটি আর দেশের জলে যে কি পরিমান টান আর নেশা থাকতে পারে তা দিন দিন শখের কাজ বাক্সে দেখতে পাচ্ছি। সেই ছোট থেকে বাড়ির পাশে খাল বিল নদী ঘুরে যাদের সাথে পরিচয়, আজ সুযোগ পাচ্ছি তাদের কাছ থেকে দেখার আর জানতে পারার। বেশ কিছু দিন ধরে মন চাইছিল একটু অন্য কিছু করার, একটু আলাদা কিছু। তুলনা মূলক বড়ো শিকারী মাছ নিয়ে ভাবতে ইচ্ছা করছিল, কিন্তু পকেট ও একটা ব্যাপার। তাই পাশের পাড়ার থেকে নজর ঘোরালাম নিজের বাড়ির দিকে। আর কি, বেশি দেরী হলো না তাদের সন্ধান পেতে। সেই শিকারীরা আমার দেশের জল থেকে উঠে এল এক্কেবারে আধার কার্ড নিয়ে আর বংশ পরিচয় নিয়ে। চ্যাং, গেচুয়া, উল্কো, শাল, শোল, ল্যাঠা আর ও কত যে রয়েছে তার হিসাব আমার কাছে নেই। আর কি, খাবার থালায় না রেখে বরং কাকে যে ঘরে আনবো ঠিক করে ফেললাম আর একটু পড়াশোনা করেই। যাদের বরন করে ঘরে আনলাম তারা হলেন এক লাল চ্যাং (channa andrao) দম্পতি। আজ তাদের নিয়েই লিখতে বসা।Channa পরিবারে বামন দের মধ্যে সবচেয়ে ছোট প্রজাতি হল চ্যাং( channa andrao)। মূলত ভারতের বাসিন্দা এই মাছের ঠিকানা ব্রহ্মপুত্র নদী ও তার পার্শবর্তী জলাশয়। একটা সময় গ্রাম বাংলায় বেশ সুনাম ছিল এনার, কিন্তু সময়ের সাথে অনেকেই ভুলতে বসেছে, তার প্রধান কারন খাদ্য হিসাবে সংগৃহিত এই মাছ তার বড়ো ভাইবোন শাল শোল দের সাথে পাল্লা দিতে পারেনি।আকারে বামন হলেও আদতে তো এনারা দানবেরই বংশধর, তার ওপর অসাধারণ রং, প্যাটার্ন, চালচলন আর শিকারী আগ্রাসন আন্তর্জাতিক শখের বাজারে বেশ উচু স্থানেই জায়গা করে দিয়েছে ওদের। ওপর আর নিচের পাখনায় উজ্জ্বল নীল আভা, তার সাথে শরীরে লাল ছোপ প্রচন্ড রকম আকর্ষণীয়। পালন করার পরে জানতে পারি রং বদলাতেও বেশ পটু, বিশেষ করে যখন পুরো শরীর কালচে নীল রং এ ঢেকে যায় তখন আর নজর ফেরানো যায়না। শরীর শক্ত আঁশ দিয়ে সুরক্ষিত, তার সাথে পিচ্ছিল লালায় আবৃত। মূলত জলের মধ্য আর নিম্ন ভাগে চলাফেরা করা মাছ আর সময় সময় ওপরে আসে অক্সিজেন নিতে। নিজস্ব মতে বলতে পারি বুদ্ধিমান মাছ, পালনকর্তার ইঙ্গিত বোঝার ক্ষমতা রাখে, সবচেয়ে বড়ো কথা পোষ মানানো সম্ভব। খাবার খাওয়ানো উপভোগ করা কিংবা শুধুই বসে বসে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকলেও মন ভরে না। প্রচন্ড রকমের আগ্রাসী মাছ, যদিও খাতায় কলমে চান্নাদের মধ্যে সবচেয়ে শান্ত। নিজের এলাকায় অন্য কাউকে পছন্দ করে না, আবার নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য দিকে যাওয়ার খুব আগ্রহ আপাতত দেখতে পাইনি। খুব বেশি করে বার বার একটাই উপাধি দিতে ইচ্ছা করে- “the dwarf titans”এবার আসি এদের কি ভাবে রাখবো সেই আলোচনায়, সবার আগে মাথায় রাখতে হবে dwarf channa হলেও এদের কিন্তু মোটেই ছোট জায়গা দিলে চলবে না। কম করে ২×১×১ ফুট ট্যাঙ্ক হওয়া আবশ্যক, তবে আমার মতে ২.৫×১.৫×১ ফুট বা তার বেশি হলে ভালো হয়। জলের উচ্চতা ততটা প্রয়োজনীয় নয়। তবে মাছটি স্বভাবত লাফ দেওয়ায় সিদ্ধহস্ত তাই শক্তপোক্ত ঢাকনা ব্যাবহার করা উচিত। তার সাথে ভাসমান জলজ গাছের জঙ্গল বেশ পছন্দ এদের।চান্নারা মূলতঃ কম আলো পছন্দ করে, এদের ক্ষেত্রেও ব্যাপার টা একই রকম। আলোর তেজ কম হলে রং এর খেলা বেশ জমিয়ে তোলে।সাবস্ট্রেটে নরম মাটি আর পরে থাকা পচা পাতা থাকলে বেশ খুশি। আর চাই লোকানোর প্রচুর জায়গা।খাবার বলতে এনাদের মুখে যা আঁটে তাই খেতে রাজি। ব্লাড ওয়ার্ম, মিল ওয়ার্ম, টিউবিফেক্স, চিংড়ির টুকরো, ছোট মাছ এমন কি ড্রাই প্যালেট পর্যন্ত খেয়ে নিতে অরুচি নেই। সবচেয়ে ভালো লাগে, খাবার দেখতে পেলে নাচানাচি আর জল উথাল পাথাল করা।ব্যাস আর কি, চলছে নতুন দম্পতির পরিচর্যা আর পর্যবেক্ষন। প্রতি দিন নতুন কিছু লেখায় আমাদের শখের মাছ পোষা। যদি কেউ রাখতে চান তবে একটু পড়াশোনা আর অনেকটা ভালোবাসা নিয়ে নেমে পড়ুন। হতাশ হবেন না এই ক্ষুদে দানবদের রেখে। আর pirets den তো আছে সবার সুবিধার্থে।