Channa marulius (Bulls eye snakehead)

fishkeeping simplified

Channa marulius (Bulls eye snakehead)

শালমাছ

বাঙালি মাছ প্রিয় জাতি, রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া থেকে পোষাক-পরিচ্ছদ , গান-বাজনা-নাটক, গল্প-কবিতা সবেতেই নানান মাছের ছড়াছড়ি, কিন্তু সেসবের মহোৎসবে অনেক খুঁজেও পাওয়া যায় না একটি মাছের নাম, সে হল শাল বা গজাল। ইংরাজিতে যাঁকে বলে Bulls eye snakehead, ল্যাটিনে Channa marulius । মাছটি যে ছোটখাটো, পাত্তা না পাওয়া টাইপ তা কিন্তু মোটেও নয়, বরং ভীমকায় বিশালাকার বিধ্বংসী শিকারী, দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে বড় শিকারীদের মধ্যে একটি । তাহলে এতো বড় মাছ নিয়ে বাঙালি এতো উদাসীন কেন? উত্তরটা হচ্ছে ভয় এবং কুসংস্কার। যেহেতু বড় হলে এরা প্রায় ৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে এবং সেই সঙ্গে ভয়ঙ্কর আক্রমণাত্মক শিকারী তাই এদের দেখলেই লোকে ভয় পায়। মুখভর্তি ধারালো দাঁতের সারি, পিঠের রং কালচে সেইসাথে দেহের মাঝ বরাবর থেকে লেজ পর্যন্ত অনেকগুলো চোখের মতো দাগদাগ সবমিলিয়ে এক ভয়াল উপস্থিতি, তাই শহুরে সাহিত্য-কাব্যের মতো কুলীন বিষয়ে এদের প্রবেশাধিকার নেই, বরং অপদেবতা প্রবাদ-কুসংস্কারের অংশ, তাই ব্রাত্য হয়ে রয়ে গিয়েছে আম বাঙালির সাহিত্যের পাতা তো বটেই খাবার পাত থেকেও ।তবে কবি বলেছেন, “যে তোমারে ডাকে না হে তারে তুমি ডাকো-ডাকো।তোমা হতে দূরে যে যায় তারে তুমি রাখো রাখো।”তাই পাইরেটস ডেন কবির কথা শিরোধার্য মনে করে নেমে পড়েছে বিষ্যুদ্বারের হ্যারিকেনের আলো এই মাছের উপর ফেলতে, চলুন দেখে নিই এদের স্বভাব চরিত্র, হালহকিকত …• থাকে কোথায়, খায় কি ? খুব বড় ও গভীর জলাশয়, খাল-বিল, বাঁওড় এদের স্বাভাবিক আবাসস্থল । সাধারণত স্রোতহীন বা মৃদুস্রোত জলাশয় এদের পছন্দ। ভাসমান গাছপালার নীচে ওঁৎ পেতে লুকিয়ে থেকে শিকার ধরতে পছন্দ করে। দিনের বেলায় সাধারণত গভীর জলের চলে যায়, সেখানে বিশ্রাম নেয়, ভোরবেলা ও সন্ধ্যাবেলায় কুলের কাছে এসে ছোট মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড়, এমনকি সাপের বাচ্চা পর্যন্ত শিকার করে। মোটকথা মুখে যা ধরে সবই খেয়ে নেয়, এক কামড়ে গোটা মাছ দ্বিখণ্ডিত করে দিতে পারে। যে সব পুকুরে পাঁক কম, বলি বেশি স্বচ্ছ জল সাধারণত সেসব পুকুর-জলাশয়ই এদের পছন্দ। স্বচ্ছ জলে শিকারকে টার্গেট করে এরা নিজেকে জলজ উদ্ভিদের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে তারপর শিকার কাছাকাছি এলেই তীব্র গতিতে আক্রমণ করে। ভোরে ও সন্ধ্যায় বড় পুকুরে এদের মাছ ধরার কৌশল অনেকটা সমুদ্রের হাঙ্গরের কথা মনে করায় । গ্রাম বাংলায় প্রচলিত আছে কোন পুকুরে যদি একটাও শাল-বোয়াল থাকে সেখানে আর কোন মাছ থাকে না, অর্থাৎ পুকুরের সব মাছ খেয়েই সাবাড় করে দিতে পারে। তাই চাষের পুকুরে, বা খালে-বিলে এদের দেখলেই খুঁজে খুঁজে মারা হয়, এছাড়াও চাষের পুকুরে নিয়মিত বিষপ্রয়োগে, পুকুর শুকিয়ে সব মাছ ধরে ফেলা, বসতি ধ্বংস, জলদূষণ প্রভৃতির জন্য এদের সংখ্যা খুব কমে যাচ্ছে। পাঁচফুট শাল তো দূরের কথা দুই-আড়াই ফুটের মাছও আজকাল দুস্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে। • অ্যাকোয়ারিয়ামে গজাল : বাদামি রঙের ছোট ছোট গজালের বাচ্চা অনেকে অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখে বটে তবে কিছুতেই এরা হোম অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ নয়, বিদেশে কিছু কিছু পাবলিক অ্যাকোয়ারিয়াম , চিরিয়াখানার অ্যাকোয়ারিয়ামে এদের রাখা হলেও , অতিরিক্ত আগ্রাসী এই মাছটি ইউরোপ আমেরিকার প্রাকৃতিক জলাভূমিতে ছড়িয়ে পড়ার পর ওদের স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের হুমকি দিচ্ছে । তাই পশ্চিমের বহুদেশ এদের পোষা নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে। সাধারণত জল ছাড়া দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকার ক্ষমতা, জলের কম অক্সিজেনের মাত্রা সহ্য করতে পারা এবং ডাঙায় কিছুটা সাপের মতো হেঁটে চলে বেরানোর ক্ষমতা বহু মাছের থেকে এদের অনেক বেশি তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি করছে।তবুও বাড়িতে যদি একান্তই রাখতে চান খুব বড় ট্যাঙ্ক বা বড় চৌবাচ্চা এদের জন্য উপযুক্ত। লাফানোর দারুণ দক্ষতার কারণে শক্তপোক্ত ঢাকনা দেওয়া খুব জরুরি । এবং খাবার হিসেবে ছোট ছোট মাছ খুব উপযুক্ত। অ্যাকোয়ারিয়ামে বাচ্চা দেওয়ার কথা খুব একটা শোনা যায় না, তবে পুকুর খাল বিলে জলজ উদ্ভিদ দামের মধ্যে বাসা বানিয়ে পুরুষ ও স্ত্রী মাছ বসবাস করে ও সেখানেই ডিম পাড়ে। ডিম থেকে তিন দিনের মধ্যে ছানা বের হয়, ছানারা স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত বাবা-মা বাচ্চাদের নিয়ে চড়াতে থাকে। এই সময় এরা এতোটাই আগ্রাসী হয়ে ওঠে যে বড় সাইজের মাছ মানুষকেও আক্রমণ করতে ছাড়ে না। পুকুরে নেমে আক্রান্ত হয়ে হাত-পায়ের মাংস খুবলে নিয়েছে এমন জনশ্রুতিও আছে। মন্সটার কিপিং আজকের মাছপোষার হবিতে একটা বড় শখ বটে সেকথা চিন্তা করে এদের জনপ্রিয়তা যদি বাড়ানো যায় তবে মাছ ও মাছ পুষিয়ে উভয়েই উপকৃত হতে পারে। যেহেতু খাদ্য হিসেবে এরা তেমন জনপ্রিয় নয় তাই এদের কৃত্রিম প্রজনন বা চাষে কারোরই সেভাবে আগ্রহ নেই। তবে রঙিন মাছের জগতে একবার এদের চাহিদা তৈরি হলে এদের কৃত্রিম প্রজনন করে বংশবৃদ্ধি যেমন সম্ভব হবে তেমনি এদের সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণারও হয়তো অবসান হবে। সেই ভবিষ্যতের আশা রেখে ভারতীয় উপমহাদেশের এই ঘরোয়া রাক্ষসের সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করে আজকের লেখায় ইতি টানছি। ভালো থাকবেন । নমস্কার।

We are accepting the entries for IBAC

X