
Fish in Indian Culture – Part 1
মৎস্যপুরাণ
অাজ যে লেখাটা লিখতে যাচ্ছি সেটা একটু অন্যরকম৷ তাই বেশ খানিকক্ষণ ভেবেও ঠিকঠাক ভূমিকা মাথায় এলো না৷ ফলে সরাসরিই শুরু করা যাক৷ অাচ্ছা,অামাদের এই যে মাছ নিয়ে এত অালোচনা,পর্যালোচনা, বই পত্র পড়া এগুলোর উৎস সন্ধানে যদি অামরা যাই একটু তাহলে কেমন হয়?! উৎস মানে একদম উৎস,সেই পুরাকালের গল্প! হ্যাঁ,গল্পই হোক না হয় একটু অাজ৷ বাস্তবে হয় কিনা,মানি কিনা এসব তর্ক বিতর্ক ছেড়ে শুধু গল্পের অাসর জমানোর মতই না হয় শোনা যাক অামাদের পুরাণে কিভাবে উঠে এসেছে এই মাছের কথা একদম সৃষ্টির অাদি পর্ব থেকে৷
“মৎস্য” কথাটার যদি উৎস বিচার করতে বসি অামরা তাহলে প্রধানত দুটো বক্তব্য উঠে অাসে ; একটা হল সংস্কৃত অভিধানের মত,যেখানে বলা হচ্ছে যে মৎস্য কথাটা এসছে ‘মৎ’ যার মানে ধর্ম বা জ্ঞান, অার ‘স’ যার মানে সমবেত, এই দুই শব্দের মিলনে৷ অাবার নিরুক্ত বেদাঙ্গ মতে ‘মৎস্য’ কথাটির অাদি অর্থ জলে ভাসমান! অামার গোদা মাথায় যদিও মনে হয় দ্বিতীয় মানেটাই বেশী প্রাসঙ্গিক৷
যাক,এবার অাসা যাক সেই গল্পে যেখানে অামাদের মৎস্য অবতারকে প্রথম দেখা যায়,মানে অাক্ষরিক অর্থে অবতার রূপে দেখা যায়! শুক্ল যর্জুবেদে এ বিষয়ে যে কাহিনীটা অাছে সেটা হল এক সকালে রাজা মনু কে এনে দেওয়া চানের জলে মনু প্রথম মাছ দেখতে পান৷ সেই মাছ মনুকে সতর্ক করে যে ভবিষ্যতে এক মহা বিপদ অাসতে চলেছে এবং অাজ মনু তাকে বাঁচালে ভবিষ্যতে মাছ ও তাকে বাঁচাবে৷ মনু তো সেই ঈশপের গল্পের সিংহের মতোই প্রথমে পাত্তা দেয়নি,নেহাৎ দয়াপরবশ হয়েই অামাদের বেশীরভাগ শখের বেট্টা পুষিয়েদের মতো একটা জারে সেই মাছকে রাখে৷ কিন্তু এ মাছ তো সে মাছ নয়! এ তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে৷ তারই নির্দেশ মতো এরপর মনু পুকুর খুঁড়ে তাকে রাখে৷ অার তারপর সেই লেজেন্ডারী সাইজ হয়ে গেলে তাকে ছেড়ে দিয়ে অাসেন সোজা সমুদ্দুরে৷(এবার মিঠা জলের মাছ কিভাবে নোনা জলে মানালো,কতদিন সিজন করেছিল এজাতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে এ অধম অপারগ!) অবশেষে এল সেই দিন যেদিন ইঁদুর,থুড়ি মাছের রিটার্ন দেওয়ার সময় হল৷ পৃথিবী বন্যায় ভেসে গেল৷ কিন্তু নারায়ণ মৎস্য অবতার হয়ে এলেন মনু সহ অারো সাত মহাত্মাকে বাঁচাতে৷ তাদের নৌকাকে তিনি তাঁর মৎস্যরূপের শিং এর(হ্যাঁ,ছিল একটা) সাথে বেঁধে নিয়ে চললেন নিরাপদ স্থানে৷ এবার অনেকেই মনে করেন যে এই বিক্ষুব্ধ জলরাশি হল অামাদের জীবনের মায়া ও মোহ যা অামাদের পরীক্ষা নেয়৷ অার ওই মৎস্য হল অামাদের অাত্মার রূপক! মানে শুদ্ধ মন ও চিন্তা অামাদের জীবনের খারাপ সময় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে৷ দেখুন, এতক্ষণ যে গল্প বল্লাম সেটা অাপাতদৃষ্টিতে অবিশ্বাস করাই যেতে পারে,কিন্তু এর ভিতরকার শিক্ষাটা কিন্তু অাজকের দিনেও,বিশেষ করে অাজকের দিনে বড্ডো প্রাসঙ্গিক,এটা অনস্বীকার্য!
অামরা অাবার মাছের গল্পেই ফিরি! অাসল গল্পটা বলা হয়েই গেছে অবশ্য৷ অামাদের অতি পরিচিত মহাভারতেও এই গল্পের উল্লেখ অাছে যেখানে মার্কন্ডেয় মুনি জেষ্ঠ্য পান্ডব যুধিষ্ঠিরকে এই গল্প শোনাচ্ছেন৷ অার শুধুমাত্র অামাদের মহাভারতেই কেন,জেনেসিসের নোয়ার অার্ক এর গল্পও অামাদের জানা৷ বাইবেলের জোনাহ অার তিমি মাছের গল্পেও অামরা সেই মাছের দেখা পাই৷ তাই এই গল্প শুধু অামাদের ওদের না,অামাদের সবার অার শিক্ষাটাও সবার জন্য৷
অাশ্চর্য্যের ব্যাপার হল শুধুমাত্র প্রাচীন ভারতেই যে মাছকে কোন জনপদের নাম বা রাজকীয় শীলমোহরে ব্যবহার করা হত তা নয়, ভারতে এখনো মাছকে কেন্দ্র করে পুজোঅাচ্চা চলে! এমনকি মাছের মন্দিরও অাছে ভেট দ্বারকা,নাগালাপূরম অার অামাদের টেক সিটি ব্যঙ্গালোরেও,মৎস্য নারায়ণ মন্দির৷ এছাড়াও শিখদের গোল্ডেন টেম্পল হোক বা বৌদ্ধদের খেচিপেরি লেক, সব জায়গাতেই মাছকে পবিত্র বলে গণ্য করা হয়৷ অালোয়ারে প্রতি বছর নভেম্বরে মাছ উৎসব হয়,অামাদের ‘দীপুদা’র দীঘাতে,গোপালপুর ইত্যাদি উপকূলীয় অঞ্চলে এখন রমরম করে পালিত হয় সামুদ্রিক মাছ উৎসব৷ এইভাবে শুধুমাত্র গল্পকথায় নয়,অামাদের জীবন-জীবিকা, পাপ-পূণ্য, ঐতিহ্য, সভ্যতা, ভালোলাগা, শখ সমস্ত কিছুর সাথেই অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে অাছে মাছ৷ তাই মাছকে ভালোবাসুন,পুরাকালের কথার মত মাছও অাপনাকে সেই ভালবাসা শতগুণে ফিরিয়ে দেবে৷
সাথে কিছু ছবি রইল গুগল থেকে ডাউনলোড করা৷ অার যদি লেখাটা পড়েন,একটু মতামত দেবেন,একটু অন্যরকম লেখা তো,তাতে একটু উৎসাহিত হই অার কি! তবে বেশী উৎসাহিত হয়ে পড়লে অাবার একটা পর্ব লিখেও ফেলতে পারি,ফলে সাধু সাবধান!! সাবধানে থাকবেন,ভাল থাকবেন সকলে নতুন বছরে!



