Nimbochromis livingstonii
ইংরাজিতে একটা কথা আছে Love me or hate me but you cannot ignore me, লিভিংস্টোনিদের সাথে আমার সম্পর্ক এরকম। শুধু আমার নয়, কম-বেশি সবাই যাঁরা মালাউই হ্যাপ পছন্দ করে তাদের সবার অবস্থা মোটের উপর এক, কারণ এই এক নচ্ছার মাছ যে আপনার আফ্রিকান ট্যাঙ্কের জন্য ১০ ইঞ্চির মূর্তিমান বিভীষিকা। চরম আগ্রাসী, মারাত্মক মারামারিবাজ পালোয়ান হ্যাপ, যে আপনার অ্যাকোয়ারিয়ামের সব মাছকে ইচ্ছা মতো শাসাবে, এবং ছোট মাছ পেলে ধরে ধরে খাবে। তবে এতো কিছুর পরও ওকে আপনার ভালো লাগবে। কারণ, ও ইচ্ছা মতো রঙ বদলাবে, এই এখন জংলা তো কিছুক্ষণ পরেই নীল রঙের হবে । কখনো দেখবেন পাথরের উপর মরার মতো শুয়ে আবার দেখবেন বালির উপর চুপচাপ বসে। ঠিক যখন ভাববেন ও অসুস্থ বা মরে গেছে, তখনই কোন ছোট মাছ সামনে গেলেই তীব্র গতিতে বিশালাকার মুখ খুলে আক্রমণ করে দেবে। এবং মজার ব্যাপার হলো যে অ্যাঙ্গেলে মাছটি শুয়ে থাকবে ঠিক সেই অ্যাঙ্গেলেই স্পিড অ্যাক্সিলারেট করে ল্যাটেরাল মুভমেন্ট করবে। তাই এই রকম যার অদ্ভুত অদ্ভুত সব বিহেভিয়ার, তাকে কি আপনি ভালো না বেশে পারবেন?তবে এই রকম বিহেভিয়ারের পিছনে আছে আরও মজার একটা গল্প। স্বদেশে কালিঙ্গোনো নামে পরিচিত এই মাছটি পাওয়া যায় মূলত তিনটি জায়গায়, লেক মালাউই, লেক মালোম্বে এবং সিরে নদীতে। যেখানে জলজ ঘাসের গোড়ায়, ভ্যালিসনেরিয়ার জঙ্গলে বা পাথরের খাঁজের মধ্যে এরা শিকারের আশায় ঘাপটি মেরে পড়ে থাকে। এবং নিজের মুখের চেয়ে চেয়ে আকারে ছোট যে কোন মাছকেই নির্দ্বিধায় আক্রমণ করে।যেহেতু এরা Ambush hunter তাই এদের গায়ের জংলা রং এদের camouflage হতে সাহায্য করে। তবে শিকার ধরার ড্রেস দেখে যেহেতু কোন মহিলা আকৃষ্ট হতে চাইবে না এবং শিকারকালীন পোশাক আর কোন মহিলার সাথে ডেটে যাওয়ার পোশাক যেহেতু এক হতে পারে না, তাই এরা যথেষ্ট ফ্যাশন সচেতন। কোন মহিলাকে ইমপ্রেস করতে হলে এরা নিজেদের গায়ের রং দ্রুত বদলে ম্যাট সি ব্লু করে নেয়। এবং কোন মহিলা সেই রং দেখে আকৃষ্ট হলেই ব্রহ্মার জানা গোপন কর্মটি শুরু হয়ে যায়। তবে অন্যান্য মালাউই হ্যাপের মতো এরা কিন্তু কলোনিতে থাকে না। পুরুষ লিভিংস্টোনিরা ভবঘুরে শিকারী। মহিলারা মাউথ ব্রুডার। এবং এরাই সেই সব হাতেগোনা হ্যাপেদের মধ্যে একটা যাঁরা এখনও বহু জেনারেশনের captive breeding এর পরেও ফ্রাই রিলিজ ও রি-হোল্ডিং বিহেভিয়ারটা ট্যাঙ্কের মধ্যেও করে। ছোট বাচ্চাদের মা দেড় থেকে দুই সপ্তাহ নিজের মুখে রেখে মালাউই পিসিভোর দের থেকে রক্ষা করে, তারপর বাচ্চাদের রেখে আসে ভ্যালিসনেরিয়ার বনে, সেখানে পাথরের খাঁজে বা গাছের আড়ালে লুকিয়ে এরা শুরু করে স্বাবলম্বী শিকারী জীবন। তবে শুধু লেকের গল্প বললে তো আর মেছোদের মন ভরবে না, ট্যাঙ্কের কথাটাও তো বলা চাই, তাই এইবেলা বলে রাখি যদি Baddest, nastiest, big guy দের রাখতে চান এবং সঠিক বিহেভিয়ার দেখতে চান তবে কিছু মিনিমাম ৬-৮ ফুটের ট্যাঙ্ক চাই যেখানে অন্তত ১ টি মেল পিছু ৫-৬ টি ফিমেল রাখতেই হবে। খাবারের ব্যাপারে মাংশাসী এই মাছটি ট্যাঙ্ক মেট হিসেবে লার্জ মালাউই হ্যাপেদের সাথেই বেশি হ্যাপি। তবে হ্যাপেরা রাক্ষুসে বলেই যে এদের যা খুশি খেতে দেওয়া যায় এমনটা কিন্তু মোটেই নয়। বিশেষত Terrestrial protein এদের পেটে সহ্য হয় না। ছোট ছোট মাছ চলতেই পারে, সাথে ভালো কোয়ালিটির সিকলিড ফুড অবশ্যই কাম্য। জলের pH ৭.৫-৮.৫ হলেই এদের চলবে TDS ৫০০ হলেও অসুবিধা নেই। এদের স্পিশি অনলি অ্যাকোয়ারিয়াম করলেই এদের বিহেভিয়ার সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা যায়। ট্যাঙ্কের একটা অংশে পাথর অন্য অংশে বালি দিলে নিজের প্রাকৃতিক বাসার স্বাদ এরা পায় এবং এদের স্বভাব চরিত্র বেশ খোলতাই হয় । ভ্যালিসনেরিয়ার সাথে এদের যেহেতু একটু নাড়ির টান থাকেই তাই এদের ঘন ঝোপঝাড় এরা বেশ উপভোগ করে। অন্যান্য মালাউই হ্যাপেদের মতো গাছের সাথে এদের দুশমনি নেই বললেই চলে। সেদিক দিয়ে এরা বেশ ব্যাতিক্রমী বলাই চলে। তবে হ্যাপ ট্যাঙ্ক নিয়ে কথা হবে আর ফিল্ট্রেশন নিয়ে কথা হবে না এরকম কি করে হয়? মালাউই হ্যাপ মানেই ফিল্ট্রেশন নিয়ে হুলস্থুল কান্ড । বড় জায়গায় অল্প মাছ আর হিউজ ফিল্ট্রেশন ( মোট জলের পরিমাণের ১০-১২ গুন) একান্ত জরুরি বিষয় । সাথে সপ্তাহ ৫০% জল পরিবর্তন। এত কষ্ট যদি পোষায় তবে করেই ফেলতে পারেন একটা লিভিংস্টোনি ট্যাঙ্ক। আফ্রিকার বিখ্যাত অভিযাত্রী ডেভিড লিভিংস্টোনের নামাঙ্কিত একটা মাছ আপনার বাড়িতে ছানাপোনা দিয়ে সংসার পেতেছে, এ দৃশ্য দেখিয়ে বন্ধু মহলে কলার তোলাই যায় …