Protomelas taeniolatus(Red Empress Cichlid )
মাছ পোষাপুষির সাথে আপনার যদি দূর দূর পর্যন্ত কোন সম্পর্ক না থাকতো তাহলে “মালাউই” কথাটা শুনে আপনি কি ভাবতেন? নিশ্চয়ই ভাবতেন আফ্রিকার গরীব একটা দেশ যেখানে মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে হয় চাষবাস করে নয়তো নায়াসা হ্রদে মাছ ধরে। দেশটা শুধু যে গরীব দূর্বল অর্থনীতি, অশিক্ষা অপুষ্টির মতো হাজারো সমস্যায় ভুগছে তাই শুধু নয়, ভুগছে আরো একটি ভয়াবহ সমস্যায়, অনিয়ন্ত্রিত যৌনতা এবং ফলাফল হিসেবে HIV আক্রান্তদের রমরমা নিয়ে। বলা হয় নায়াসা হ্রদের মাছই এইসব সমস্যার মূলে। তবে নায়াসার তীরের বিবর্ণ সেসব গল্পে না ঢুকে বরং আজ আমরা ঢুব দেবো নায়াসার অগভীর জলে । পাথরের মাছেদের রঙিন জগতে। বেশ তাহলে আর দেরি কেন, চলুন যাই সেঙ্গা, সেখান থেকে বোটে চেপে নামালেঞ্জে আইল্যান্ড।নামালেঞ্জের জলে যদি একবার নেমে পড়তে পারেন তবে দেখবেন জলের নিচে চারিদিকে শুধু পাথর আর পাথর । নানান প্রজাতির ছোটখাটো রঙিন মাছ পাথরের গা খুঁটে খুঁটে শ্যাওলা খেতে ব্যাস্ত। হঠাৎ আপনার চোখ পরে যাবে একটা ঊজ্জ্বল নীলচে মাছের দিকে, ইঞ্চি ছয়েকের মাছটি যেন কালার বোম্ব। মাথাটা টার্কিশ নীল, ঘাড়ের কাছটা ধাতব নীলচে হয়ে দেহের মাঝামাঝি হলুদের উঁকি দিয়ে লেজের দিকটা ঊজ্জ্বল লাল। চলাফেরায় অভিজাত্যের ছোঁয়া, যদিও আশেপাশের মবুনাদের সাথে মিশে পাথরের গা থাকে শ্যাওলা খুঁটে খাচ্ছে তবুও গড়নটা কখনোই ওই মবুনাদের মতো নয়। ওই হচ্ছে নায়াসা হ্রদের বিখ্যাত সেই মাছ যার নাম রেড এম্প্রেস সিকলিড (Protomelas taeniolatus)
আচ্ছা এমন মাছকে কি ঘরে এনে পুষতে ইচ্ছা করে না? করেই তো, সেইজন্যই তো ছোটখাটো হ্যাপলোক্রোমিস গোত্রীয় এই মাছটি মেছোদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। ইউরোপে সিলেক্টিভ ব্রিডিং করা হচ্ছে বহুদিন ধরে। তৈরি হয়েছে সুপার রেড, অলবিনো ভ্যারাইটি। মাছের বাজারে সেসব একেবারে হটকেক।তা এই হটকেক মাছের চাহিদা কিরকম? চাহিদা বিস্তর, রাখতে হবে বিশাল বড় ট্যাঙ্কে অন্ততঃ ৩৫০-৪০০ লিটার জল ধরে এরকম একটা ট্যাঙ্কে ২-৩ টি পুরুষ, এবং ৮-১০ টি স্ত্রী মাছের কলোনি রাখা যেতে পারে। নামে হ্যাপ হলেও এরা কিন্তু বেশ শান্তশিষ্ট হ্যাপি মাছ, অন্যান্য প্রিডেটর হ্যাপ বা পিককের সাথে রেখেছেন কি মারধোর খেয়ে রঙ চটিয়ে কালো হয়ে বসে থাকবে । ইয়োলো ল্যাব বা ইয়োলো টেল এসিইর মতো দুধেভাতে মবুনা যদিও বা এদের সাথে চলতে পারে, এ্যাগ্রেসিভ মবুনা নৈব নৈব চ । তবে বেশি মাছ রাখতে চাইলে চাই বেশি জায়গা এবং অত্যন্ত ভালো ফিল্ট্রেশন। জলের অবস্থার অবনতি এরা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। আবার প্রকৃত ঊজ্জ্বল রং দেখতে চাইলে চাই ক্রিস্টাল ক্লিয়ার জল। তাই সবমিলিয়ে ফিল্ট্রেশন এই মাছ রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় ফ্যাক্টর। যেহেতু এরা অগভীর পাথুরে এলাকার মাছ তাই বড় বড় পাথর দিয়ে অ্যাকোয়ারিয়াম সাজানোই ভালো। সাথে একটুখানি ফাঁকা জায়গা যেখানে বালির স্তরের উপরে এরা ব্রিডিং বিহেভিয়ার দেখাতে পারে, সাধারণত পুরুষ মাছটি পাথরের ফাঁকে বালি সরিয়ে একটি অবতল গর্ত তৈরি করে বাসা বাঁধে সেখানেই স্ত্রী মাছটির সাথে প্রজননে মিলিত হয়, মিলনের পর স্ত্রী মাছটি নিষিক্ত ডিম মুখের মধ্যে নিয়ে দিন পনেরো পর্যন্ত তা দিতে থাকে, তারপর বাচ্চার ফ্রি সুইমার হলে পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ছেড়ে বড় করতে থাকে। এই সময় বাচ্চারা বিপদ বুঝলেই দ্রুত মায়ের মুখের মধ্যে ঢুকে পড়ে। অ্যাকোয়ারিয়ামে এই জিনিস লক্ষ করা এক বিরল অভিজ্ঞতা।
•• খাওয়া-দাওয়া : খাওয়ার ব্যাপারে সর্বভূক এই মাছটি প্যালেট, ফ্রোজেন, ফ্লেক্স, লাইভ, অ্যালগি সবই খায়, তবে প্রোটিনের পরিমাণ কম হলে এবং নিয়মিত ভেজিটেবল ডায়েটে রাখলে এরা সবচেয়ে ভালো থাকে। স্পাইরুলিনা বেসড ভেজ ওয়েফার জাতীয় খাবার তাই এদের জন্য একটি আদর্শ সাপ্লিমেন্ট ফুড হতেই পারে।•• জলের অবস্থা : অন্যান্য মালাউই হ্রদের সিকলিডের মতোই এরা একটু ক্ষারীয় জল পছন্দ করে, ৭৫০-৮০০ পিপিএম TDS এবং ৭.৫-৮.৫ pH মাত্রার জল এদের বিশেষ পছন্দ। ২৬-২৮° সেঃ তাপমাত্রা এদের জন্য আদর্শ।
•• Sexual dimorphism : পুরুষদের ঊজ্জ্বল রঙের তুলনায় স্ত্রী বিবর্ণ রূপালী রঙের ।দেহের মাঝ বরাবর এবং উপরের অংশে ভাঙা ভাঙা কালো টানা দাগ থাকে।ছোটবেলায় বাচ্চাদের রং মেয়েদের মতোই থাকে, পরিনত বয়সে শুধুমাত্র পুরুষরাই ঊজ্জ্বল রং ধারণ করে। সবচেয়ে শক্তিশালী পুরুষদের রং সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল হয়। Namanleje ছাড়াও Ndiwe , Boadzulu ইত্যাদি ইত্যাদি অঞ্চলেও রেড এম্প্রেস পওয়া যায়, তবে এদের রঙে কিছুটা পার্থক্য হয়, বুনো মাছেরা কেউ নামালেঞ্জের মতো লাল নয়, বরং কিছুটা নীলাভ ও সবুজাভ । আফ্রিকান লেক সিকলিড যদি আপনার প্রিয় হয়, আর এই লেখা যদি আপনার ভালো লাগে, তবে আর দেরি কেন, পুষে ফেলুন একটা কলোনি, বানিয়ে নিন একটা বড় ট্যাঙ্ক। আর ঘর আলো করুক নায়াসার লাল সম্রাজ্ঞী।