বিভিন্ন প্রজাতির দেশি পুঁটি

fishkeeping simplified

বিভিন্ন প্রজাতির দেশি পুঁটি

“লিখিব পড়িব মরিব দুঃখে, মৎস্য মারিব খাইব সুখে”

মধ্য যুগের এই বাংলা প্রবাদটি অক্ষরে অক্ষরে সত্যি করে এবং ‘লিখিয়া পড়িয়া’ বিন্দুমাত্র সুখ না পেয়ে ছেলেবেলা থেকেই মৎস্যের পিছনে ছুটে চলেছি । তবে ছোটাছুটিই সার হয়েছে, রাঘব বোয়াল তো কিছু মারিনি, মেরেছি কিছু চুঁনোপুঁটি। আজ তাদেরই গল্প। তবে আর দেরি কেন, শুরু করে দিই …

পুঁটি একটি আদ্যপান্ত বাঙালি এলেবেলে মাছ, শুধু খাওয়ার মাছ নয় রঙিন মাছ হিসেবেও এদের দেশ-বিদেশে বেশ কদর। পুকুর, নদী, খাল, বিল যেখানেই দেখবেন স্বচ্ছ টলটলে জল সেখানেই জানবেন ঝাঁকে ঝাঁকে এদের রাজত্ব।

চকচকে, চনমনে এই দেশি মাছটি Cyprinidae (Sub family: Barbinae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এবং মূলত দুটি গণে বিভক্ত, Puntius ও Pathia

পুন্টিয়াস ও পেথিয়া মিলে আমাদের রাজ্যের গোটা বারো-তোরে রকমের পুঁটি রয়েছে। যাদের মধ্যে কয়েকটি হল ….

Pethia phutunio (ফুটানি পুঁটি)

P. canius (কেনি পুঁটি)

P. gelius (গিলি পুঁটি)

P. aurea (অরা পুঁটি)

P. conchonius (কাঞ্চন পুঁটি)

Puntius sarna (সর পুঁটি)

P. saphore (জাত পুঁটি)

P. guganio (মলা পুঁটি)

P. ticto (তিঁত পুঁটি)

P. terio (টেরি পুঁটি)

P. vittatus (সবুজ দাগের পুঁটি)

P. chola (চোলা পুঁটি)

P. cosuatis (কোসা পুঁটি)

তবে নামে যতোই আলাদা হোক না কেন, স্বভাবে কিন্তু এরা মোটামুটি ভাবে সবাই কমবেশি aggressive, ঝাঁকে থাকে এবং শ্যাওলা, পোকা মাকড় খেতে ভালোবাসে। জলজ গাছপালার দাম, ঘন ঝোপ এদের খুব পছন্দের। সাধারণত বর্ষার শুরুতে পুঁটি মাছেরা ডিম পাড়ে এবং বাচ্চারাও ছোট থেকেই ঝাঁক বেঁধে ঘুরতে থাকে। সাধারণত পুঁটি মাছ অগভীর জলে দিনের বেলা বেশি ঘোরাঘুরি করে, রাতে জলজ গাছপালার মধ্যে ঢুকে নিজেদের শিকারী মাছদের থেকে রক্ষা করে।

কিছু কিছু পুঁটি মাছের ক্ষেত্রে Sexually Dimorphism দেখা যায়, এবং প্রজনন ঋতুতে পুরুষ মাছ কে দেখতে স্ত্রী মাছের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয় । যেমন Puntius sophore দের পুরুষ মাছের প্বার্শরেখা লাল হয়ে যায়, Pethia conchonis এর পুরুষরা উজ্জ্বল কালচে বাদামী রঙের ব্রিডিং ড্রেসে চলে যায় ইত্যাদি। সাধারণত বর্ষার নতুন জলে একটি স্ত্রী পুঁটি কয়েক শো ডিম পাড়ে, এবং এক বা একাধিক পুরুষ মাছেরা সেই ডিমকে নিষিক্ত করে। জলজ গাছপালার মধ্যে ডিম ছড়িয়ে রেখে পুঁটি মাছের ঝাঁক চলে গেলে ওই নিষিক্ত ডিম থেকে দু-তিনদিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়, এবং তারা স্বাধীন ভাবে নিজেদের ঝাঁক তৈরি করে ঘুরে বেড়ায়। একাধিক প্রজাতির পুঁটি শৈশব বা কৈশোরে একটি বড় ঝাঁক তৈরি করে ঘুরছে এমন ঘটনাও বিরল নয়।

পুঁটি যেহেতু স্বচ্ছ জলের মাছ ও বেশি অক্সিজেন যুক্ত জলে বেঁচে থাকতে অভ্যস্ত তাই নদী/জলাভূমি দূষণের প্রভাবও এদের উপর পড়েছে সবচেয়ে বেশি। মানুষের জলাশয় হারিয়ে যাওয়া, জলাশয়ের গুনগত মানের ক্রমাবনতি এই ছোট্ট বাঙালি মাইনর কার্প দের কোনঠাসা করে দিচ্ছে। আগ্রাসী বিদেশী মাছের সামনে এরা কমতে কমতে হারিয়ে যেতে বসেছে। সর পুঁটি, কোসা পুঁটির মতো মাছ অতি দুর্লভ হয়ে উঠেছে। তাই এখনই ওদের জন্য এখনই কিছু না করলে ভবিষ্যতে সরষে পুঁটির ঝোল বা পুঁটি মাছের টকের গল্প শুনে আফসোস করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

We are accepting the entries for IBAC

X