Fish in Indian Culture – Part 2

fishkeeping simplified

Fish in Indian Culture – Part 2

মৎস্যপুরাণ

এই লেখাটা যখন লিখতে শুরু করেছিলাম তখন ভাবিনি যে অারো একটা পর্ব লিখতে পারব৷ তার অন্যতম কারণ হল অামি ঠিক নিশ্চিত ছিলাম না যে লেখাটা অাপনাদের পছন্দের যোগ্য হবে কিনা! কিন্তু অামার সৌভাগ্য যে অাপনারা অনেকেই প্রথম পর্বটা পড়েছেন অার সাথে সাথে লেখাটা অারো এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছেন৷ অামি সত্যিই কৃতজ্ঞ৷

প্রথম পর্বটা অাপনারা অনেকেই পড়েছেন৷ তাও যারা কোনভাবে মিস করে গিয়ে সরাসরি এই পর্বে চোখ রেখেছেন তাদের সুবিধার্থে বলি অাগের পর্বে অামি মৎস্যের নামের পৌরাণিক ব্যাখ্যার সাথে সাথে অামাদের পুরাণে কিভাবে মৎস্যাবতারের উল্লেখ অাছে এবং কিভাবে অাজো অামাদের সমাজের পরতে পরতে এই পৌরাণিক ধারণাগুলো জড়িয়ে অাছে সেগুলো সম্পর্কে একটা ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম৷ এই পর্বে অামরা দেখব যে কিভাবে এই পৌরাণিক মৎস্যকথা অামাদের অজান্তেই হয়তো বর্তমানে অনেক প্রজাতির মাছকে,যার মধ্যে কিছু অাবার বিপন্ন প্রজাতির,রক্ষা করে চলেছে যথার্থ মৎস্যাবতারের মতো! অামরা,যারা মাছকে এবং সাথে সাথে পরিবেশকে ভালোবাসি তাদের কাছে এই তথ্য খুব একটা অজানা নয় যে বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছ বেশ সংকটের সামনে দাঁড়িয়ে৷ এর বিভিন্ন কারণ অাছে যেমন জলদূষণ,জলের সাথে বিভিন্ন ক্ষতিকারক কেমিক্যেলের মিশ্রণ,কৃষিজমিতে অত্যধিক কীটনাশকের প্রয়োগ, বিদেশী খাদ্যযোগ্য অথবা রঙিন মাছ চাষের জন্য ‘অামাছা’ নাম দিয়ে নির্বিচারে স্থানীয় মাছের বিনাশ অার সাথে সাথে তো পুকুর বুজিয়ে ঘর-ফ্ল্যাট তৈরী অাছেই৷ তো এমতাবস্থায় অামাদের মতো কিছু পরিবেশপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবক বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে এদের রক্ষা করা যায়৷ কিন্তু অামাদের অলক্ষ্যেই হয়তো খ্রীষ্টপূর্বাব্দের মৎস্যপুরাণকথারা ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় মাছকে রক্ষা করে চলেছে৷ কিভাবে? সাধারণ মানুষের মনে ওই ধর্মকথার প্রতি ভয়ভক্তিকে ভিত্তি করে৷ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে,(একটা ম্যাপের ছবি অামি লেখার শেষে দিয়েছি) বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন মন্দিরের স্বাভাবিকভাবে তৈরী হওয়া জলাশয়ে নানা প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয় পুণ্যার্জনের অাশায়৷ এইসব জলাশয়ে মাছ ধরা অপরাধ হিসাবে গণ্য হয় স্থানীয় লোকেদের মধ্যে৷ এই ধর্মভক্তির ওপর ভিত্তি করে অনেক প্রজাতির মাছ, যারা অন্য জায়গায় হয়তো বিলুপ্তপ্রায় বা সঙ্কটজনক অবস্থায় অাছে,নির্ভয়ে তাদের বংশবৃদ্ধি করে চলেছে৷ অামরা এবার নজর দেব ভারতের এরকমই কয়েকটা মন্দির সংরক্ষিত জলাশয়ের দিকে এবং দেখব সেখানে কোন কোন মাছ বেড়ে উঠছে৷

এই ধরণের মন্দিরের সংখ্যা কর্ণাটকে অনেক এবং তার মধ্যে অন্যতম হল তুঙ্গ নদীর ওপর শ্রীঙ্গেরী জলাশয় যেটা ওই একই নামের মঠকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে যার বয়স প্রায় ১২০০ বছর! এই জলাশয়ে প্রায় ৩৮ প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও যে মাছ সবথেকে বেশী পাওয়া যায় তা হল সহ্যাদ্রী মহাশির(Tor khudree)৷ এ বিষয়ে একটা কথা ওই দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে প্রচলিত অাছে যে বনবাসী সন্ন্যাসীদের মৃত্যুর পরে তাঁদের অাত্মা মহাশির রূপে জন্ম নেয়৷ স্বাভাবিকভাবেই ওই গোটা অঞ্চলে মহাশির মাছকে ‘মীন অবতার’ বা খুব পবিত্র মনে করা হয় এবং ফলশ্রুতি হিসাবে ওই অঞ্চলে অবস্থিত বেশীরভাগ স্যাংচুয়ারীতে মহাশির সংরক্ষিত হয় সবথেকে বেশী! এই শ্রীঙ্গেরীর পাশাপাশিই অারেকটি বিখ্যাত স্যাংচুয়ারী হল তীরাথাল্লী শহরের চিপলাগুডে স্যাংচুয়ারী৷ এটা গণপতি মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে তুঙ্গ নদী ও পশ্চিমঘাট জঙ্গলের মধ্যবর্তী স্থানে৷ এখানে প্রায় ২৭ প্রজাতির মাছ অাছে যার মধ্যে অন্যতম হল সহ্যাদ্রী মহাশির ও Puntius pulchellus, যেটি ICUN এর তালিকায় রেড লিস্টেড! কন্নড জেলার কপিলা নদীর তীরে অবস্থিত শিশিলেশ্বর মন্দিরেও এরমই এক স্যাংচুয়ারী অাছে যেটি ১৯৩০ সাল থেকে সংরক্ষিত অঞ্চল হিসাবে স্বীকৃত৷ এখানেও প্রায় ১৮টি প্রজাতির মাছের মধ্যে প্রধান হল মহাশির৷

এবার একটু নজর দেওয়া যাক উত্তর ভারতের দিকে৷ কৌশানির গোমতী নদীর ওপর অবস্থিত বৈজনাথ মন্দিরের জলাশয়ে প্রধানত দেখা মেলে হিমালয়ান মহাশিরের(Tor putitora)৷ একই অবস্থা হিমাচলের অাহল নদীর ওপর অবস্থিত মচ্ছিয়াল লেকে যেটিকে অাবার মনে করা হয় মাছেন্দ্রু দেবতার বাসস্থান!

পুর্ব ভারতের ছত্রিশগড়,ওড়িশার অন্যতম প্রধান নদী মহানদী হলেও দুষণের দিক দিয়েও সে নদী ভারতের প্রথম ১০ টি নদীর মধ্যে পড়ে৷ কিন্তু ধর্মের এমনি মহিমা যে যেসব অঞ্চলে মহানদীর তীরে মন্দির গড়ে উঠেছে যেমন,হুমা,সমলেশ্বরী ইত্যাদি মন্দির সেখানে নদীর জল পরিষ্কার এবং মহাশির থেকে বিভিন্ন পুঁটি(Rasbora, Danio, Puntius) ও কার্পের বাসস্থান৷

দুর্ভাগ্যজনকভাবে অফিসিয়ালি অামাদের পশ্চিমবঙ্গের এরম কোন মন্দির এই তালিকায় নেই৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও অামরা অামাদের চারপাশে,বিশেষ করে একটু গ্রামের দিকে কিছু মন্দির বা রাজবাড়ি দেখি যেখানে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসাবে কয়েকটি পুকুর এখনো টিকে অাছে যেখানে অামাদের মিষ্টি জলের কার্প জাতীয় মাছ যেমন কালবোস এবং অন্যান্য মাছ এখনো বংশবিস্তার করে টিকে অাছে৷ এসব পুকুরে এখনো সৌভাগ্যজনকভাবে মাছ ধরা বারণ৷ এবিষয়ে অামার একটা ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি৷ অামার দেশের বাড়ি বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদ জেলার ঠিক মাঝের সীমানায় একটা ছোট গ্রামে৷ সেখানে একটা রাজবাড়ি অাছে যা এখন ধ্বংসাবশেষে পরিণত! কিন্তু তা সত্ত্বেও এই রাজবাড়ীর মধ্যে থাকা মন্দিরের বিশাল পুকুরে অাজো মনের অানন্দে খেলা করে বেড়ায় বিশালাকায় কাতলা থেকে কালবাউস! এভাবেই অনামী অখ্যাত ছোটখাটো মন্দির, রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে নিঃশ্বাস নেওয়া জলাশয়ে মাছ বাস্তুতন্ত্রে তার ভুমিকা পালন করে চলেছে মানুষের লোভের চোখ এড়িয়ে৷ অার এভাবেই মৎস্যাবতার অাজো রক্ষা করে চলেছেন তাঁর সর্বপ্রথম অবতার রূপকে৷

অাপনারাও জানাবেন এ বিষয়ে অাপনাদের অভিজ্ঞতার কথা৷ অাপনাদের মূল্যবান মতামতের অপেক্ষায় রইলাম৷ ঘরে থাকবেন, ভালো থাকবেন সকলে৷

We are accepting the entries for IBAC

X