Jurassic fish – Part 5 – Feast of the Beasts

fishkeeping simplified

Jurassic fish – Part 5 – Feast of the Beasts

একবিংশ শতাব্দীর শুরু। গত কয়েক বছরে(নব্বইয়ের দশকে) জুরাসিক পার্ক এবং লস্ট ওয়ার্ল্ডের দ্বারা সবার মধ্যে জেগে উঠেছে ডাইনো প্রেম। আমি বোধবুদ্ধি জন্মানোর পর থেকেই নিজের বাড়ি এবং পিসেমশাইয়ের টিভি মিলিয়ে সিনেমাগুলি কয়েকশবার দেখে পুরো স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করেছি। এরই মধ্যে জুরাসিক পার্ক ৩ রিলিজ করল। ফিল্মের প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই আমাদের সবার প্রিয় টিরানোসরাস রেক্স কে চিরঘুমের দেশে পাঠিয়ে দিল একটি নতুন ডাইনোসর। নাম স্পাইনোসরাস। আমার এবং আরও অনেকের নতুন প্রিয় ডাইনো হয় উঠল এই স্পাইনোসরাস। যখন এদের কথা প্রথম জানি, তখন এরা ছিল বৃহদাকারের ডাইনো খাদক। সময়ের সাথে সাথে সবার প্রিয় অ্যান্টি হিরো কুমিরমুখো এই টি-রেক্স ঘাতকের ইমেজ পাল্টাতে লাগল। আমাদের ছোটবেলার প্রিয় ডাইনো এখনও পৃথিবীর দীর্ঘতম মাংসাশী ডাইনোসর হলেও, গবেষক Nizar Ibrahim দ্বারা আবিষ্কৃত অতি গুরুত্মপূর্ণ কিছু জীবাশ্মকে খতিয়ে দেখার পর এখন স্পাইনোসরাস একটি ডাইনোসর খাদক থেকে হয় গেল কুমিরবেশী মৎস্যখাদক। বেঁটে পা, হাতের লম্বা নখ, এবং পার্শ্বভাবে চ্যাপ্টা লেজসহ এই ডাইনোসরটি ওর পরিবেশের জলাধারগুলিতে মাছ শিকার করত, অনেকটা এখনকার ঘড়িয়ালের মতন। একটি ১৪ মিটারের প্রাণীর জন্য শুধু মাছ খেয়ে জীবন কাটানোটা একটু কঠিন মনে হতে পারে। তবে এসব মাছও যে-সে মাছ নয়। এ মাছগুলি আমাদের চেনা মাছের মতন হলেও আকারে ছিল বৃহৎ। এর আগে যে মাছের কথা বলেছি, সেগুলি সব ৩০-৪০ কোটি বছর আগের কিম্ভূত-কিমাকার মাছ। কিন্তু আজকের লেখার মাছগুলি অনেক আধুনিক যুগের। এ মাছের সাথে আমার আপনার ট্যাঙ্কের মাছের মিল অনেক। শুধু (স্কেল ছাড়া)ছবিতে দেখলে মনে হবে আজকের মাছেরই কথা বলছি।

আজকের গল্পের সময়কাল আজ থেকে ৯.৯ থেকে ৯ কোটি বছর আগে, স্থান বর্তমানে উত্তর আফ্রিকার মরক্কোর সীমানায় কেম কেম বেডস(Kem Kem Beds) এবং আশেপাশের এলাকাগুলি। ৯.৯ কোটি বছর আগে এই বেডস ছিল মাংসাশী ডাইনোসরদের স্বর্গরাজ্য। মাঝারি আকারের Rugops(রুগপ্স), Sauroniops, Deltadromeus থেকে শুরু করে বৃহৎ Carcharodontosaurus এবং Spinosaurus(স্পাইনোসরাস)। একটি এলাকার মধ্যে এত মাংসাশী প্রাণী থাকলে নিশ্চয়ই একরকমের খাদ্য সবাই খেত না, তা না হলে খাদ্য এবং খাদক দুজনেই খুব শীঘ্র বিলুপ্তির পথে হাঁটতে শুরু করত। এই এলাকায় তৃণভোজীদের থেকে বেশি মাংসাশী প্রাণীদের জীবাশ্ম মেলে বলে সবার খাদ্যাভ্যাস নিয়েই একটা প্রশ্ন থেকে যেত, যদি না এই খাদ্যাভ্যাসের রহস্য উন্মোচণ করত কেম কেম বেডসের মাছের জীবাশ্ম।

যদি টাইম মেশিনে করে ৯ কোটি বছর আগে কেম কেম বেডসের জলাধার গুলিতে যাওয়া হত, তাহলে দেখে মনে হত বর্তমান কোন মনস্টার ফিশকিপারের ট্যাঙ্কের মধ্যের দৃশ্য। লাংফিশ, সিলাকান্থ, স-ফিশ সবাই একসাথে ঘুরে বেড়াত। এমনকি Bichir(বাইকির, বাইচির, বিসির, ইত্যাদি) বা প্রচলিত ভাষায় সেনেগালের (genus: Polypterus) এক নিকট আত্মীয়, Bawitius এরও দেখা মিলত এখানে।

আমাদের মধ্যে অনেকেই সেনেগাল এবং তার বন্ধুদের রেখেছি নিজেদের ট্যাঙ্ক এ। এক-দেড় ফুটের সেনেগাল, অরনেট থেকে শুরু করে দুই ফিটের এন্ডলিচেরি অনেকের ট্যাঙ্কেই সুখে জীবন কাটিয়েছে। তবে এদের আত্মীয় Bawitius ছিল এদের চেয়ে আকারে অনেকটাই বড়, ৯ থেকে ১০ ফিটের মতন লম্বা বলে অনুমান করা হয়েছে। যদি এদের দেহের আকৃতি বর্তমানের Polypterusদের মতন হয়, তাহলে এদের এক একটাকে খেলে স্পাইনোর খিদে একটু হলেও মিটত। তবে ১০ ফিটের Bawitius এই এলাকার সবচেয়ে বড় মাছ ছিল না।

বর্তমানের living fossil শিরোপা পাওয়া Coelacanth(সিলাকান্থ, genus: Latimeria) এখন সমুদ্রের এক বিরল মাছ। প্রাচীন Sarcopterygii clade এর এই মাছ অন্য মাছেদের সাথে যতটা নিকট, তার চেয়েও বেশি নিকট লাংফিশ এবং চতুষ্পদ প্রাণীদের সাথে। সেই ৪০ কোটি বছরের ও আগে থেকে যখন মাছ ডাঙায় ওঠার চেষ্টা শুরু করছে, তখন থেকেই এরা অন্য মাছেদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। এদের এক প্রতিনিধির জীবাশ্ম মেলে কেম কেম বেডসে। Mawsonia নামের এই মাছ ছিল লম্বায় ২০ ফিটের কাছাকাছি, এবং এটা বলাই বাহুল্য যে এরা এই এলাকার বৃহত্তম মাছেদের মধ্যে একটি। এরা মিষ্টি জলের মাছ না হলেও মোহনা বা তার সমতুল্য জায়গায় বিচরণ করতো। স্পাইনোসরাসদের খাদ্যতালিকায় এদের স্থান যদিও বা থাকতে পারত, কিন্তু এই বৃহৎ প্রাণীকে আর অন্য কোন খাদকের ভয়ে থাকতে হত বলে মনে হয় না। Mawsonia ছাড়াও উত্তর আফ্রিকাতে Axelrodichthys নামের আরেকটি সিলাকান্থ ছিল। এরা ২০ ফিট লম্বা না হলেও, ১৩ ফিটের কাছাকাছি লম্বা হত।

যারা একটু দু:সাহসিক ফিশকিপার, তারা লাংফিশ পোষে বা পুষতে চায়। বর্তমান এই মাছের মধ্যে একটা প্রাগৈতিহাসিক ভাব আছে। একটু জলের বাইরে ওঠার প্রবণতা, চতুষ্পদদের পায়ের মতন চারটে জোরালো পাখনা, এবং অবশ্যই লাংফিশের লাং বা ফুসফুস। বর্তমানে ছয় প্রজাতির লাংফিশের দেখা মেলে, যা তিনটে genus(জিনাস) এ অন্তর্ভুক্ত। Protopterus এ আছে চারটে প্রজাতি, এবং Lepidosiren ও Neoceratodus দুটোতেই একটা একটা করে প্রজাতি। Neoceratodus forsteri বা Queensland Lungfish(কুইন্সল্যান্ড লাংফিশ) শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই দেখা যায়, তবে এদের আত্মীয়রা পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই ছড়িয়ে ছিল। যেমন ৯.৯ কোটি বছর আগে উত্তর আফ্রিকাতে দেখা যেত Neoceratodus africanusকে, Bawitiusএর সাথে একই জলপথে বিচরণ করতে। Neoceratodus africanus কেম কেম এবং বাহারিয়ার অন্যান্য মাছেদের মতনই ওদের বর্তমান জাতভাইদের তুলনায় আকারে বৃহৎ ছিল। ২ থেকে ১০ ফিট অবধি লম্বা হতে পারত এই মাছগুলি। বর্তমান লাংফিশদের খাদ্যাভ্যাস দেখে আমরা এটা অনুমান করতে পারি যে Neoceratodus africanusও মাংসাশী ছিল। যদি আরও অনুমান করতে হয়, তাহলে এটা ভাবা যায় যে বর্তমানের Neoceratodus forsteriর মতন এরাও পুরপুরিভাবে শুকনো ডাঙায় থাকতে পারত না, যা এখনকার আফ্রিকার লাংফিশরা(Protopterus) থাকতে পারে বলে বিখ্যাত।

এই সময়কালে উত্তর আফ্রিকার বৃহত্তম মাছের জীবাশ্ম যে প্রজাতির, তার নাম Onchopristis(অঙ্কপ্রিস্টিস)। স-ফিশের মতন দেখতে এই মাছের নাকের করাতেরই দৈর্ঘ্য ছিল ৬ ফিটের বেশি। এদের দেহের দৈর্ঘ্য ২০-২২ ফিট মতন। এই মাছটির জীবাশ্ম আফ্রিকা সহ গোটা পৃথিবীতে প্রচুর জায়গাতে মেলে। আপাতভাবে বর্তমান স-ফিশদের মতন দেখতে এই মাছ শঙ্কর মাছেদের আত্মীয়। বর্তমান স-ফিশদের মতন এরাও মাটি বা বালিতে নিজের করাতের মতন ঠোঁট দিয়ে খাবার খুঁজত বলে অনুমান করা হয়। যদি এরা প্রজননকালে পরিযায়ী হয়ে নদীর স্রোতের উলটো দিকে উঠে আসত, তাহলে এই সময়টা স্পাইনোসরাস এবং সমসাময়িক অন্যান্য মেছোদের মহভোজের সময় হয়ে যেত।

এ ছাড়াও উত্তর আফ্রিকায় আরও অনেক মাছের জীবাশ্ম পাওয়া যায়, যেমন এলিগেটর গারের পরিবারের Adrianaichthys, এবং ফলুই-চিতল-আরোয়ানা-আরাপাইমার জাতভাই Palaeonotopterus। মেনু তে এত কিছু থাকায় আমাদের সবার প্রিয় স্পাইনোসরাসের খাবার অভাব খুব একটা হত বলে মনে হয় না। আর হলেও ছোট ডাইনোসর বা কুমির ধরে খেতে ওদের খুব একটা কষ্ট হত না। মাছের সাথে সব প্রাণীর গল্পই জড়িয়ে আছে। আমরা যারা মাছ রাখার আনন্দের সাথে তাদের ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন করে সুখী হই, তাদের জন্যে সুখবর হল যে যেকোনো স্থানে, যেকোনো সময়কালে মাছেদের নিয়ে বলার মতন অনেক গল্প এবং ঘটনা আছে। সে মাছের বিবর্তনের গল্পই হোক, বা মাছের ডাঙায় ওঠার কাহিনী, কিংবা অন্য প্রাণীদের মেনুতে মাছেদের উল্লেখ। এদের গল্প লেখা শুরু করলে হাত থামতে চায় না, তবে অগত্যা থামাতে হচ্ছে কারণ এইমাত্র খেয়াল করলাম গুগল ডক্সে ফন্ট সাইজ কমানো ছিলো এবং লেখাটা বেশ বড় হয় গেছে।

We are accepting the entries for IBAC

X