Pelvicachromis pulcher (Kribensis)

fishkeeping simplified

Pelvicachromis pulcher (Kribensis)

২৩ শে জুন ১৯৯০ , নেপলসের সান পাওলো স্টেডিয়ামে ফুটবল বিশ্বকাপের নক আউট ম্যাচে মুখোমুখি দুই দেশ; আফ্রিকার ক্যামেরুন আর দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়া। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, ম্যাচের নির্ধারিত সময় গোলশূন্য । অতিরিক্ত সময়ের ১০৬ মিনিটে দুরন্ত গোল বদলি হিসেবে নামা আটত্রিশ বছর বয়সী স্ট্রাইকার রজার মিল্লার। আফ্রিকান সিংহদের আক্রমণে আহত কলম্বিয়াও কিন্তু নাছোড়, অল আউট খেলছে । গোলকিপার “স্পাইডারম্যান” রেনে হিগুয়েতাও ডি বক্স ছেড়ে উঠে এসেছেন উপরে। প্রায় মাঝমাঠের কাছাকাছি। ১০৯ মিনিটে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার লুইস কার্লোস পেরেরা বল মাইনাস করলেন হিগুয়েতাকে। দেখেই ক্ষীপ্র গতিতে ছুটে এলেন সুযোগ সন্ধানী মিল্লা, হিগুয়েতা বিপদ বুঝে মিল্লাকে ড্রিবল করতে গেলেন, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মিল্লা বল ছিনিয়ে নিয়েই সোজা দৌড় দিলেন তেকাঠির দিকে, মিল্লাকে আটকানোর প্রানপণ চেষ্টা করলেন হিগুয়েতা এবং কার্লোস পেরেরা কিন্তু সফল হলেন না, ক্যামেরুন স্কোরলাইন ২-০ করে নিল। পরে অবশ্য কলোম্বিয়ান স্ট্রাইকার বার্নার্ডো রেডিন ১১৫ মিনিটে ২-১ করেছিলেন কিন্তু তাতেও কলম্বিয়ার হার বাঁচানো গেল না। প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের কোয়াটার ফাইনালে চলে গেল ক্যামেরুন । বিশ্ব চিনল আফ্রিকার Indomitable lions দের । আট-নয়ের দশকে যাঁরা ছোটবেলা কাটিয়েছি তাঁরা হয়তো এভাবেই আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনকে চিনেছি । চিনেছি রজার মিল্লাকে যে অবসর ভেঙে ফিরে এসেও দু দুটো বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছিল। বড় হয়ে জানলাম ক্যামেরুন আফ্রিকার মিনি ভার্সন। কঙ্গো নদীর অববাহিকায় জঙ্গলে ঘেরা দেশ, যে দেশের এক জোড়া মাছ দুম করে একদিন আমার অ্যাকোয়ারিয়ামে এসে জুটবে এতোটা বোধহয় কখনো ভাবিনি। যাইহোক তিনি এলেন। যিনি এলেন তার নাম ক্রিবেন্সিস (Pelvicachromis pulcher) । তবে আর দেরি কেন শুরু করা যাক ….
ক্রিবেন্সিস আমার দেখা অন্যতম লাজুক মাছ। হ্যাবিট্যাট স্টাইলের ট্যাঙ্ক পেলে, নিজের লুকিয়ে থাকার জায়গাটা বুঝে নিলে বাকি কোনকিছু নিয়ে এরা খোঁজ খবর রাখতে পছন্দ করে না। টুক করে বের হবো, চুপচাপ খাবো , আবার নিজের জায়গায় গিয়ে বসে থাকবো এটাই বোধহয় এদের জীবনের নীতি। স্বচ্ছ স্রোতহীন জল, জলজ গাছপালার ঝোপ; ঝড়া পাতা,ডালপালা, কাঠকুটোর মধ্যে দিয়ে নিঃশব্দে চলাচলের পরিবেশ এদের থাকার পক্ষে আদর্শ । বাসার কাছাকাছি মুখ দিয়ে বালি খুঁটে খুঁটে খাবার খোঁজে আবার কেউ কাছে আসছে বুঝলেই দ্রুত নিজের বাসায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। অ্যাকোয়ারিয়ামে পিএইচ এবং TDS যদি একটু নীচের দিকে (যথাক্রমে ৫.৫-৬, ১৫০-২০০) থাকে তবে এদের আসল সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে যাবে । মেয়েদের পেটের নীচের অংশ গাড় বেগুনিভ গোলাপি রঙ চকচক করে। এই রং দেখেই বোধহয় পুরুষরা নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না, মেয়েদের ইমপ্রেস করার জন্য নানারকম অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে। সাধারণত এরা মনোগ্যামাস, মানে একবার জোড়া বাঁধলে চিরদিনই তুমি যে আমার,যুগে যুগে আমি যে তোমারই …
তারপর একসাথে বাসা তৈরি, ডিম পাড়া, একসাথে বাচ্চাদের মানুষ করা । ছোট বাচ্চারা বাবা মায়ের পেটের নীচে থেকে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।
এই একটি সময় ক্রিবেন্সিস একটু অ্যাগ্রেসিভ হয়ে পড়ে । অন্যান্য ছোটখাটো মাছকে নিজের বাচ্চাদের থেকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। তবে ট্যাঙ্ক যদি একটু বড় হয় তবে এসব সমস্যা খুব একটা হয় না। মোটামুটিভাবে একটা ২৪×১২×১২ ইঞ্চির ট্যাঙ্কে একজোড়া ক্রিবেন্সিস খুব ভালোভাবে থাকতে পারে। তবে ভুললে চলবে না এরা আফ্রিকার নিরক্ষীয় অঞ্চলের মাছ যেখানে সারাবছর ২৬-২৭°C তাপমাত্রা এবং বছরে ২৫০-৩০০ সেমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। তাই এরা সারাবছর গরম আবহাওয়ায় থাকে এবং সারাবছর ধরে বৃষ্টির পরিস্কার জল পেয়ে অভ্যস্ত। তাই নিয়মিত (সপ্তাহ ২ দিন) সামান্য জল পরিবর্তন (১০-১৫%) এদের জন্য বেশ উপকারী । সেইসাথে ভালো ফিল্ট্রেশন সিস্টেমও এদের জন্য খুব জরুরি বিষয় । মোটামুটিভাবে HOB এদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ফিল্টার, স্পঞ্জ চলতে পারে, কিন্তু IPF, Overhead এর মতো হাই ফ্লো বেসড ফিল্টার কখনোই এদের জন্য নয়।
খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে ক্রিবেন্সিসদের ঝামেলা নেই বললেই চলে। সবই খায়। তবে জ্যান্ত খাবার বেশি পছন্দ । মোটামুটিভাবে সপ্তাহে দু তিনদিন পোকামাকড়, কেঁচো, ফ্রোজেন ব্লাড ওয়ার্ম এসব দিলে তো কথাই নেই। বাকি দিনগুলো ফ্লেক, প্যালেট, সিঙ্কিং এসব চলতেই পারে।
ছোটখাটো হার্ডি টেট্রা যেমন সার্পে , ব্ল্যাক নিয়ন, হকিস্টিক, কঙ্গো টেট্রা ইত্যাদি এদের ভালো ট্যাঙ্ক মেট। এরা মোটের উপর পিসফুল সিকলিড হলেও অন্যান্য ডোয়র্ফ সিকলিড যেমন রেমিরেজি, আকারা বা অ্যাপিস্টোগ্রামাদের সাথে না রাখাই ভালো , কারন দিনের শেষে সব সিকলিডই একটু হলেও টেরিটোরিয়াল।
ক্রিবেন্সিসরা বিগেনার ফিস এবং ভালোই হার্ডি তাই এটুকু প্রাথমিক ইনফরমেশন হলেই শুরু করে দেওয়া যায় ক্রিবেন্সিস ট্যাঙ্ক । তারপর ভালোমন্দ, সুবিধা অসুবিধায় সবসময়ই পাইরেটস ডেন তো রইলই। সেই ভরসা নিয়েই শেষ করলাম এখানে। ধন্যবাদ।

We are accepting the entries for IBAC

X