First Experience of Fish Breeding
আমরা যারা শখে মাছ পুষি তাদের এই মেছো হবি সংক্রান্ত সবথেকে সুখের অভিজ্ঞতার অন্যতম হল মাছকে ব্রিডিং করতে দেখা। আর জীবনে প্রথমবার কোনো প্রিয় মাছকে ব্রিডিং করতে দেখার অভিজ্ঞতা তো ভোলার নয়। আজ শুনি অভিজ্ঞ হবিস্ট পবিত্র পালের প্রথমবার রঙিন মাছের ব্রিডিং এর গল্প।
আপনারাও আপনাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন কমেন্ট সেকশনে…..
প্রথম রঙিন মাছের ব্রিডিং এর অভিজ্ঞতা :-
==================================
অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছের ব্রিডিং সব শৌখিন মানুষের কাছে একটা স্পেশাল অনুভূতি । অনেকটা ঠিক উচ্চ মাধ্যমিকে স্টার পাওয়ার মতো আনন্দের সমান । আজ সেরকমই একটা অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেবো ।
রঙিন মাছের ব্রিডিং শুরু হয়েছিল একটি খুব সাধারণ দেশী মাছ দিয়ে । মাছটির নাম খলসে । খলসে বা ডোয়ার্ফ গোরামী পশ্চিমবঙ্গের স্রোতহীন মিষ্টি জলের নদী-নালা খাল-বিলের একটি খুব পরিচিত রঙিন মাছ । যেহেতু আমাদের বাড়ি ইছামতী নদীর ধারে ফলে ছোট বেলা থেকেই এই মাছটি ধরছি, পুষছি আর খাচ্ছি । তাই বলাটাই বাহুল্য এই মাছটির ব্রিডিং করছি স্কুলে পড়ার সময় থেকে । তখন নাইন কি টেনে পরি । কাঁচের জার আর বোতলে মাছ পুষি । অ্যাকোয়ারিয়াম হয়নি । পকেটে খুচরো পয়সা নিয়ে বড়লোক । বাবার সাথে দরকষাকষি চলছে মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন হলে অ্যাকোয়ারিয়াম হতে পারে । বাবার ছেলের পড়াশোনার উপর এতটাই ভরসা যে মোটামুটি নিশ্চিত ছেলেকে অ্যাকোয়ারিয়াম কিনে দিতে হবে না । এই অবস্থায় একদিন মাথার ভুত চাপলো খলসে মাছের বাচ্চা করবো । কিন্তু করবো কিসে ! ঠাকুমার মতানুষারে চৌব্বায় মাছ তুললে চৌব্বাচ্চা এঁটো হয়ে যাবে , তাই বাধ্য হয়েই মাটির মেচলায় বাচ্চা পড়ানো হবে বলে ঠিক হলো ।
তখন গরমকাল । প্রথমে নদীর বালি ধুয়ে এনে মেচলায় দেওয়া হলো । তারপর ভোরবেলা নদীতে গিয়ে আঘাটা (যেখানে কেউ নামে না) থেকে স্বচ্ছ নদীর জল এনে মেচলায় দেওয়া হল । যাঁরা খলসে মাছ প্রাকৃতিক অবস্থায় দেখেছেন তাঁরা জানেন খলসে মাছ নদীর পাড়ে যেখানে অল্প জল সেখানে শ্যাওলা আগাছার ঝোপে লুকিয়ে থাকে । তাই জলের উচ্চতা মোটামুটি এক ফুট রাখা হল । তারপর বাঁওড় (Ox bow lake) থেকে পাতা শ্যাওলা , চিংড়িদল আর ইঁদুরকাণি পানা এনে ঐ মেচলায় পুঁতেছিলাম । তারপর এল মাছ ধরার পালা । অস্ত্র ছাঁকনি জাল । বিল থেকে ধরা হলো ফিমেল (এখানে জানিয়ে রাখি খলসে মাছ দুই প্রকার গুঁড়ি খলসে আর পাটা খলসে , আমি গুঁড়ি খলসের বাচ্চা তুলেছিলাম) । সেটাকে রাখা হলো মেচলায় । সাতদিন পর নদী থেকে ধরা মেল । (সাতদিন পর কারন আগে ফিমেল ছাড়তে হয় তারপর মেল । না হলে মেলটা ফিমেলকে মারতে পারে ) । সেটাকেও রাখা হলো ঐ মেচলাতে । খাবার বলতে মুলত ডাফনিয়া, মশার লার্ভা আর কেঁচো ।
এরপর বর্ষা এলো । একদিন দেখি জলের উপরে বুদবুদ । মা বললো দেখ তোর বাবা হয়তো থুথু ফেলেছে । বাবা বললো বিশ্বাস কর আমি কিছু করিনি ওটা মাছের কান্ড । যাইহোক পরে বোঝা গেল ওটা খলসেরই কান্ড । বুঝলাম এবার কিছু একটা হচ্ছে । আমাদের ওখানকার রঙিন মাছের দোকানদার বাবু দা কে জিজ্ঞেস করে জানলাম ওটাকে ‘বাবল নেস্ট’ বলে গোরামী প্রজাতির মাছেরা ঐ ভাবে ডিম দেয় । ফলে তখন আমার উৎসাহ দেখে কে । এরপরদিন ভোরবেলা দেখি পুরুষ ও স্ত্রী মাছটা জড়াজড়ি করছে আর জলের উপরে বাবল নেস্টের আশেপাশে খুব ছোট্ট ছোট্ট বিন্দু বিন্দু ডিম ভাসছে । তিরিশ চল্লিশ মিনিট কয়েকটি পর্যায়ে এরকম চললো । তারপর পুরুষ মাছটা ডিম গুলো মুখে করে নিয়ে বাবল নেস্টে রাখলো । এরপর শুরু হলো ফিমেলকে তাড়া করা । বগতিক বুঝে খুব সাবধানে ফিমেল তুলে দিলাম । পুরুষটা বাবল নেস্টের কাছে গিয়ে ডিম পাহারা দিতে লাগলো ।
একদিন কি দেড়দিন পরে দেখি ডিম থেকে সূক্ষ্ম সুতোর মতো কিছু বেড়িয়ে আসছে । বুঝলাম বাচ্চা । দেরী না করে মেল তুলে আলাদা একটি বোতলে রাখলাম (ফিমেলের সাথে নয়) । এর মধ্যে আমি রঙিন মাছের দোকানদারের কথা মতো কলার খোসা আলুর খোসা পচিয়ে জল তৈরি করেছি । ওই জল চামচে করে দিনে দুবার করে চার পাঁচটা দিন দিলাম । সুতোর মতো বাচ্চা ততক্ষণে একটু আধটু সাঁতার কাটতে পারে । তারপর অল্প অল্প করে ডাফনিয়া দেওয়া শুরু হলো । শুকনো খাবার গুঁড়ো করে দিলাম । 12-15 টা বাচ্চা তাড়াতাড়ি বড় হয়ে উঠলো । কিন্তু রং এলো না । তিন চার মাস পরে পুজোর সময় সম্পূর্ণ রং এলো বোঝা গেল কিছু মেল কিছু ফিমেল হয়েছে । মাঝে একবার নদীর জল এনে কিছুটা জল চেঞ্জ করে দিয়েছিলাম । বড় হওয়ার পর ভালো দুটো জোড়া রেখে বাকিগুলো আবার নদীতে ছেড়ে দিই । পরের বছর আবার নতুন মাছ ধরা , নতুন বাচ্চা তোলা , কিছু রাখা কিছু নদীতে ছাড়া এরকমই চলছে । এই আমার অভিজ্ঞতা।
এবার আপনাদের পালা, কমেন্টে শোনান আপনাদের ফিশ ব্রিডিং এর গল্প…..
বিঃদ্রঃ – একটা বিধিবদ্ধ সতর্কবাণী, যাঁরা দেশী/বিদেশী মাছের ব্রিডিং করাবেন বা করাচ্ছেন তাঁরা নিশ্চয়ই জানেন একটি মাছ বাচ্চা দিলে অনেক বাচ্চা হয় ঠিকই কিন্তু তার মধ্যে প্রচুর ছাঁট হয়ে যায় । এদের প্রকৃতিতে ছেড়ে দেবেন না । এর ফলে বিবর্তনের প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয় । Natural Selection প্রকৃতির নিজস্ব নিয়ম । আমাদের উচিত সেটিকে মান্য করে চলা ।