Gymnocorymbus ternetzi ( Widow Tetra)
আমাদের ছোটবেলায় গ্রাম মফস্বলের দিকে রঙিন মাছ পোষার তেমন কোন চল ছিল না, দু একজন অতি শৌখিন লোক কলকাতা থেকে অ্যাকোয়ারিয়াম, পাম্প, মাছ-গাছ-পাথর আনিয়ে ছোটখাটো অ্যাকোয়ারিয়াম করতো বটে তবে সেসব ছিল হাতেগোনা সংখ্যায় । যখন কটা লোকের বাড়িতে টিভি আছে সেটাই গুনে গুনে বলা যেত তখন অ্যাকোয়ারিয়াম করা বিরাট শৌখিনতার পরিচয় ছিল। আমাদেরও সেসময় হাতে পয়সা-কড়ি থাকতো না, দু একটা রঙিন মাছ কেনার ইচ্ছা হলেও খুব সহজে সেই ইচ্ছা পূরণ হতো না। দামি মাছের মধ্যে অ্যাঞ্জেল, গোল্ডফিশের খুব কদর ছিল। তখন সবাই ওদের পুষতে চাইতো। আর আমরা যারা নতুন শুরু করেছি খাল-বিল-নদী-নালা থেকে পুঁটি-খলসে-নয়না-বাতাসি ধরেই ধরেই পুষতে হতো। কালে ভাদ্রে মলি,গাপ্পি, ফাইটারের ফিমেল কেনার পয়সা হতো, সেসব মাছ কিনলে আলাদাই লেভেলের যত্ন-আত্তি হতো, মাঝে-মাঝে যত্নে চোটে মাছই উল্টে যেতো। তখন নব্বইয়ের দশক, সেই সময়ে আমি হাতে পেলাম এমন একটা মাছ যে যত্ন-আত্তির চোটেও মরলো না, টিকে থাকলো। তাদের গল্পই আজ বলবো, যাঁদের নাম উইডো টেট্রা, পরে বড় জেনেছিলাম এদের আরো নাম আছে কেউ বলে ব্ল্যাক টেট্রা, কেউ বলে ব্ল্যাক স্কার্ট টেট্রা, কেউ কেউ আবার বলে পেটিকোট টেট্রা। যে নামেই পরিচিত হোক না কেন ল্যাটিনে বলে Gymnocorymbus ternetzi। প্রথম দর্শনে মাছটাকে আমার বেশ কিউট লেগেছিল, ঠিক যেন গরীবের অ্যাঞ্জেল অ্যাঞ্জেল একটা ফিল আছে। চনমনে স্বভাবের মাছটা একঝাঁক রাখলে বেশ হুটোপুটি করে ঘুরে বেড়ায়, খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চাপ নেই, ড্রাই ফুড থেকে শাক-পাতা, কেঁচো কিছুই ‘খাবো না’ বলেনা। সবমিলিয়ে সস্তায় পুষ্টিকর একটা সাদাকালো মাছ । এলিট না হলেও গ্ল্যামারাস বটেই ।
এরপর ইছামতি দিয়ে বহু জল গেছে, আমরাও বড় হয়েছি, ছোট মফস্বল এখন শহর হয়েছে, টেট্রা তো দূরের কথা বিদেশী ফার্মের ডিসকাসও এখন available হয়েছে। তবুও মাছটার প্রতি একটা ভালোবাসা থেকেই গেছে। সেই ভালোবাসা থেকেই আবার এই উইডোতে ফিরেছিলাম, বছর কুড়ি পরে। ততদিন জেনে গেছি এরা দক্ষিণ আমেরিকার পান্তানালের মাছ, ঘন গাছপালার ঝোপঝাড়ে আলো-আঁধারিতে এতে বসবাস। পান্তানালের বিস্তৃর্ণ অগভীর জলে ঝাঁকে ঝাঁকে এরা ঘুরে বেড়ায়। মোটামুটি ফুট তিনেকের একটা ট্যাঙ্কে গাছের ডালপালা শিকড় দিয়ে ভর্তি করে, তার মধ্যে ডজন খানেক মাছ রেখে স্পট লাইট দিলেই কেল্লা ফতে। চকচকে সিলভার আঁশ আর কালো পাখনার মাছ জলে আগুন ধরিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। স্টেবল ট্যাঙ্কে এদের দেহের মাঝামাঝি দুটো কালো বার ফুটে ওঠে এবং শ্রেণী পাখনা কুচকুচে কালো হয়ে যায়। মোটামুটিভাবে ৬.৫-৭ pH, <১০০ TDS এবং ২৪-২৬° সেঃ তাপমাত্রা এদের জন্য আদর্শ। গাছপালার সাথে যেহেতু কোন শত্রুতা নেই তাই এদের গাছপালা ভর্তি ট্যাঙ্কে রাখতেও কোন অসুবিধা নেই। বরং সবুজের কনট্রাস্টে রংটা বেশি ভালো খোলে। অনেকেই এদের ব্ল্যাক ওয়াটারে রাখতে পছন্দ করে, সেখানেও স্বচ্ছন্দে থাকতে পারে।
আজকাল এদের অনেক ভ্যারাইটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, প্রথাগত ভেইল টেল, অলবিনো ভ্যারাইটি তো আগেও ছিল এখন লাল, নীল, হলুদ, কমলা নানা রকম ফ্লুরোসেন্ট কালারেও বাজারজাত করা হয়েছে। তাছাড়া এই মাছটি আকছার ফিশ ডাই-এরও শিকার হচ্ছে। সব মিলিয়ে ট্রাডিশনাল উইডো টেট্রাই আজকাল বরং একটু কম দেখা যাচ্ছে। প্রথাগত উইডো টেট্রাদের মতোই এদের মেল-ফিমেল ছোটবেলায় বোঝা যায় না, বড় হলে অবশ্য মেয়েদের পেটের দিকটা একটু মোটাসোটা হয়, এবং ছেলেদের তুলনায় সামান্য আকারে বড় হয় । সাধারণত এরা ঝাঁকে ব্রিডিং করে, এবং এগ স্ক্যাটারিং করে। প্যারেন্টাল কেয়ার করে না। ব্রিডিং-এর পর তিন-চার দিনে বাচ্চারা ফ্রি সুইম করতে পারে। মোটামুটি এটুকু বলেই আজকে শেষ করছি আজকের স্পিসিস হাইলাইট।