Paracheirodon innesi (Neon Tetra)

fishkeeping simplified

Paracheirodon innesi (Neon Tetra)

“The Swimming Gold”

তখন নতুন নতুন ভূখন্ড আবিস্কারের যুগ শেষের পথে, ইউরোপ তখন যন্ত্রসভ্যতার চরমে, পৃথিবী একটা বিশ্বযুদ্ধ সহ্য করে নিয়েছে, বিমান আবিষ্কার হয়ে গেছে। পৃথিবী হাতের মুঠোয় চলে আসছে। তবুও পৃথিবীর বহু জায়গা ইউরোপীয় সভ্যতার কাছে অনাবিষ্কৃত থেকে গেছে। ডারউইন-ওয়ালেসের অভিযান তখনও কিছু মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে । অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষায় ছুটে যাচ্ছে গহীন থেকে গহীনতর প্রকৃতির মাঝে। তেমনি একজন মানুষ আগুস্তে রাবাউট। দূর্লভ সব প্রাণী ও উদ্ভিদ সংগ্রহের আশায় চষে ফেলছেন আমাজনের বিপদসংকুল অরন্য। যেখানে তখন আক্ষরিক অর্থেই দিনের বেলাতেও সূর্যের আলো ঢোকে না। আলো আঁধারি সেই পরিবেশেই তিনি কীট পতঙ্গের পিছনে ছুটছেন। সাথী গাইড একজন আদিবাসী মহিলা। আমাজনের জঙ্গল তখন আক্ষরিক অর্থেই মৃত্যু ফাঁদ, সভ্যতা থেকে বহু বহু দূরে ওইসব জঙ্গল একদিকে যেমন বিষাক্ত সব জীবজন্তুর ঘরবাড়ি, তেমনি বহু রোগের আস্তানা, সেসব রোগের ওষুধ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি, এইসব বিপদ ঘাড়ে নিয়েই আগুস্তে রাবাউট প্রসপেক্টিং করে বেড়াচ্ছেন । আশা এমন কিছু আবিষ্কার করবেন যা তাকে ইতিহাসে অমর করে দেবে। হঠাৎ কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই সেই সুযোগ এসে গেল, গাইড আদিবাসী মহিলাটি তাকে দেখালেন এক বিশেষ ধরণের মাছ। বনের ছোট ছোট নদীগুলির কালচে রঙের হাঁটুজলে ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরছে সে মাছ, আমাজনের আলো আঁধারিতে মাছগুলো যেন জ্বলছে। মুগ্ধ হয়ে গেলেন আগুস্তে রাবাউট। এই তো তাঁর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। মনে মনে স্থির করলেন যে ভাবেই হোক এদের কয়েকটিকে ধরতে হবে। তবে মরা নয়, জ্যান্ত। মরে গেলে পাছে ওই জোনাকি মাছের রংটাই নিভে যায়। জ্যান্ত ধরে ইউরোপে পাঠাতে হবে। কিন্তু পাঠানো যাবে কিভাবে? তখনকার দিনে তো যাতায়াত ব্যবস্থা এতো উন্নত নয়, চাইলেই যেখানে সেখানে যাওয়া মুখের কথা নয়। দক্ষিণ আমেরিকার গহীন অরন্য থেকে আটলান্টিকের পূর্ব উপকূলের দূরত্ব জাহাজে মাসখানেক। ততদিন মাছগুলো কিভাবে থাকবে? কি খাবে? এই অজানা মাছগুলো সম্পর্কে তো তখন সভ্য জগতের কিছুই জানা নেই। তাছাড়া আগুস্তে রাবাউট নিজেও তো তখনও পর্যন্ত কোনদিন মাছ পোষেননি। তবে উপায়? যা হবে দেখা যাবে এই ভেবে তখনকার ঐ প্রাথমিক স্তরের পরিবহন ব্যবস্থার উপর নির্ভর করেই ১৩ টা জ্যান্ত মাছ ১৯৩৫ সালে প্যারিসে এসে পৌঁছালো। প্যারিসে J.S Neel মাছগুলো কিনলেন এবং তিনিই নাম দিলেন “নিওন টেট্রা”। হৈ চৈ পরে গেল গোটা প্যারিসে। লোকজন ভীড় করে দেখতে আসলো। তখনকার দিনের সাড়ে ছয় হাজার ডলারে নিল মাছগুলো বেচলেন Hugo Schnell এবং Walter Griem নামক দুই জার্মানকে। ১৯৩৬ সালে সেখান থেকে পাঁচটা নিয়ন প্রথম গেল আমেরিকায়। তবে আমেরিকাগামী বিমানে তখনকার দিনে জ্যান্ত জীবজন্তু পরিবহন ছিল নিষিদ্ধ। তাই চারটিকে মাছকে সংরক্ষিত অবস্থায় এবং মাত্র একটিকে বিশেষ অনুমতিক্রমে জীবন্ত অবস্থায় আমেরিকায় পাঠানো হলো। সেই একটি জ্যান্ত মাছ আমেরিকায় পৌঁছাতে তৎকালীন তিন হাজার ডলার বিমান ভাড়া পড়লো, যা ইতিহাসে সবচেয়ে দামি মাছ ট্রান্সপোর্ট হিসেবে রেকর্ড তৈরি করলো।পৃথিবীর ইতিহাসে তৎকালীন সবচেয়ে দামি মিষ্টি জলের মাছ তখন ইউরোপে সেলিব্রেটির মর্যাদা পেল। সবাই চায় কয়েকটি নিওন কিনতে। কিন্তু পাবে কোথায়? তখন তো আমাজনে গিয়ে মাছ নিয়ে আসা মুখের কথা নয়, রঙিন মাছ পোষার প্রযুক্তিও অনেক অনেক প্রাথমিক স্তরে। নিয়ন যেন তখন জলে সাঁতার কাটা সোনা, বহুমূল্য ও অতি দূর্লভ। স্বাভাবিকভাবেই কে আগে নিয়ন ব্রিডিং করতে পারে তা নিয়ে ইউরোপে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল । কিন্তু মুশকিল তো এখানেও, নিয়ন যদিও বা ডিম পাড়ে, ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় না। তবুও মানুষ হাল ছাড়ে না, যে ব্রিডিং করতে পারবে সোনার খনির মালিক সেই হবে। অবশেষে সাফল্য এলো, জার্মানরা সেই যুদ্ধে জিতে গেল। পি এইচ ৬.৫ এর কাছাকাছি, এবং তাপমাত্রা ২০° সেলসিয়াসের কাছাকাছি রেখেও যে সাফল্য অধরা ছিল, জার্মানরা অন্ধকার ঘরে ব্রিডিং ট্যাঙ্ক রেখে সেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেয়ে গেল। এরপর এসে গেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, জার্মান মেছো হবি আগামী ১০ বছরের জন্য বিদ্ধস্ত হয়ে পড়লো, তবে সাফল্যের যে রাস্তা তারা দেখিয়ে গেল সেই রাস্তায় নিয়নের বিশ্বজয় শুরু হলো …. এবার আসি আজকের কথায়, দক্ষিণ এশিয়া থেকে এক এক শিপমেন্টে হাজার হাজার নিয়ন কলকাতার আসছে, মানুষ ডজন ডজন কিনছে, মলি-গাপ্পির মতো পুষছে। মরছে, আবার কিনছে। এতো নিয়ন আসছে কোথা থেকে? সিংহভাগই আজও আসছে আমাজনের জঙ্গল থেকেই। আমাজন থেকে মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড ভায়া হয়ে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে। অর্ধেক মাছ জার্নিতেই মরে যাচ্ছে । এখানেই প্রশ্ন ওঠে ওখানে থেকেই যদি লক্ষ লক্ষ নিয়ন এভাবে ধরা হয়, তবে ওরা কি ওখানে বিপন্ন হয়ে পড়ছে না? কমে যাচ্ছে না সংখ্যা? উত্তর হচ্ছে “না” । আমাজনের জঙ্গল যেমন বিশাল তেমনি নিয়নের পপুলেশনও আরো বিশাল, সারা বিশ্বে রঙিন মাছ হিসেবে যার ক্ষুদ্র একটি অংশই সাপ্লাই হয়। এবং সাপ্লাই হয় বলেই ওই জঙ্গল গুলো এখনো বেঁচে আছে। যেহেতু নিয়ন ধরেই ওখানকার আদিবাসীদের জীবন জীবিকা নির্বাহ হয় তাই নিয়ন ধরার স্বার্থেই ওরা ওই জঙ্গলকে রক্ষা করে। জঙ্গল পুড়িয়ে “রোকা চাষ” করে না, সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে নিয়নই বাঁচিয়ে রাখছে একটা অঞ্চলের গোটা জঙ্গলকে। তাই বলে নিয়ন পোষা কি আজ সহজ হয়ে গেছে? উত্তর হচ্ছে একদম না। নিয়ন পোষা আজও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। কারণ স্ট্রেস। মাছটা অত্যন্ত ছোট, খুব সহজেই স্ট্রেস খায়, এবং স্ট্রেস খেলেই মরে। তাই নিয়ন পুষতে হলে চাই পরিকল্পনা অনুযায়ী ট্যাঙ্ক তৈরি । প্ল্যান্টেডে রাখুন বা জিওগ্রাফিক্যালি কারেক্ট ট্যাঙ্কে; ট্যাঙ্ক স্টেবল না হলেই নিয়ন মরবে। ভালোভাবে ব্যালেন্স হয়েছে এমন স্টেবল ট্যাঙ্ক যেখানে ওয়াটার প্যারামিটার সহজে নরচর হবে না এটাই ওদের বাঁচিয়ে রাখার সিক্রেট । যদি আপনার ট্যাঙ্ক তাই হয় তাহল আর কোন চিন্তা নেই। আপনি নির্দ্ধিধায় মাছ ছাড়ুন। মাছ ছাড়ার পর একবার যদি দিন দুয়েক কাটিয়ে ফেলতে পারে তবে আপনি নিশ্চিন্ত। কারণ প্রথম ৪৮ ঘন্টাতেই সবচেয়ে বেশি মাছ মরার সম্ভবনা । তবে কতগুলো সতর্কতা অবশ্যই অবলম্বন করুন, নিওন ছাড়ার সময় ফিল্টারের ফ্লো কমিয়ে দিন এবং আলো বন্ধ করে রাখুন। এরফলে অনেক কম স্ট্রেস খাবে। এছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এদের সবসময় বড় বড় ঝাঁকে কিনুন কমপক্ষে এক ডজন, বড় ট্যাঙ্ক হলে বেশ কয়েক ডজন। এতে এদের স্ট্রেস লেভেল অনেক কমে যায়, লং টার্মে মাছ মরার সম্ভবনাও কমে যায়। এমনিতে একবার টিকে গেলে নিয়নরা যথেষ্ট হার্ডি মাছ, সহজে মরার সম্ভবনা খুব একটা নেই ।এবার আসি খেতে দেওয়ার প্রসঙ্গে, খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে বাছবিচার না করলেও আমার ব্যক্তিগত মতে নিয়নের জন্য বেস্ট খাবার কেঁচো এবং ফ্রোজেন ব্লাড ওয়ার্ম। ব্রাইন স্রিম্প, ফ্লেক এগুলো মাঝে মাঝে চলতেই পারে। কিন্তু ফ্লোটিং প্যালেট কখনোই নয়। আমার অবজারভেশন ফ্লোটিং প্যালেটই এদের ডাইজেস্টিভ সমস্যার একটি বড় অনুঘটক। তাছাড়া কটন মাউথ ফাঙ্গাস, নিয়ন টেট্রা ডিজিস, ব্লোট ইত্যাদি এদের বড় শত্রু। মুশকিল হচ্ছে এসব রোগের যদিও চিকিৎসা আছে, কিন্তু ওইটুকু ছোট মাছের ক্ষেত্রে সেই চিকিৎসা পদ্ধতি আপনি সহজে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন না। এদের সহজে কোন কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারবেন না। এই সব কারণেই নিয়ন পোষার জন্য দরকার সতর্কতা। এদের Prevention দরকার, Cure কঠিন তাই । সেজন্যেই আবার বলছি সাইকেলড্ স্ট্যাবল ট্যাঙ্ক ছাড়া নিওন বেশিদিন রাখা অসম্ভব।এই পর্যন্ত পড়ে যদি আপনি ঘাবড়ে না যান আর আর ভাবতে থাকেন কিভাবে একটা ডেডিকেটেড নিওন টেট্রা ট্যাঙ্ক করবো তবে আর দেরি না করে গুগলে গিয়ে একবার Paracheirodon innesi লিখে সার্চ করে দেখুন, দেখবেন অজস্র আর্টিকেল, অজস্র ভিডিও, ট্যাঙ্ক আইডিয়া, বিশ্বের সেরা সেরা অ্যাকোয়ারিস্টদের লেখা ব্লগ। যেখানে এদের আকার-আকৃতি, গড়ন, নড়ন-চরনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেওয়া । বোধহয় এরাই সেই ট্রপিক্যাল মাছ যাঁদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি ডকুমেন্টেশন হয়েছে। তাই কত বড় ট্যাঙ্কে কটা রাখতে হবে, কার সাথে থাকবে, দিনে কবার খেতে দিতে হবে জাতীয় সাধারণ ইনফরমেশনে ঢুকে আর লেখাটা ভারী করতে ইচ্ছা করছে না, ওগুলোর জন্য উইকিপিডিয়াই করে খাক, আমরা এখানেই থামি, ধন্যবাদ।

ঋণ স্বীকার :১) উইকিপিডিয়া ২) সিরিয়াললি ফিস ডট কম ৩) অ্যাকোয়ালগ ডট ডি৪) দ্যা ট্রপিক্যাল অ্যাকোয়ারিয়াম : জিনা স্ট্যানফোর্ড৫) ইউ এস ফিস এন্ড ওয়াইল্ডলাইফ

We are accepting the entries for IBAC

X