Rocio octofasciata (Jack Dempsey Cichlid)
১৯১৫ সাল, ২০ বছরের একটি ছেলে নেভেদা মরুভূমি অতিক্রম করে হেঁটে হেঁটে গোল্ডফিল্ডে আসছে । উদ্দেশ্যে একটি বক্সিং ম্যাচ। না, খেলা দেখা তার উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্যে খেলা দেখানো। প্রতিপক্ষ “ওয়ান পাঞ্চ হ্যানকক” । যাঁর একটা পাঞ্চেই নাকি বাঘা বাঘা সব বক্সার নক আউট হয়ে যায়। যাইহোক খেলা শুরু হল, কিন্তু খেলা হলো মাত্র ১৫ সেকেন্ড। কারণ নতুন ছেলেটার “একটা” পাঞ্চেই হ্যানকক কুপোকাত। একই পরিনতি হ্যানককের ভাইয়েরও। দর্শকরা হতবাক। ছেলেটা ২০ ডলার নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল ম্যাচটা জিতে আরও আড়াই ডলার নিয়ে চলে গেল । যে ছেলেটা চলে গেল তার নাম উইলিয়াম হ্যারিসন ডেম্পসি। পরবর্তীত আমেরিকা তথা পৃথিবীর মুষ্টিযুদ্ধ ইতিহাস তাকে চিনেছিল ‘জ্যাক ডেম্পসি’ নামে। জ্যাক ডেম্পসি মানেই তীব্র আক্রমণ। জ্যাক ডেম্পসি মানেই ভীষণ আক্রমণাত্মক একটা সেন্ট্রাল আমেরিকান সিকলিড, এতো অ্যাগ্রেসিভ ঠিক যেন মনে হয় বক্সার জ্যাক ডেম্পসি, সেই থেকেই এই নাম । আরো একট নাম আছে, সেটা বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন, ল্যাটিনে Rocio octofasciata। ছিটছিটে নীল রঙের শক্তপোক্ত গড়নের এই মাছের বাড়ি মেক্সিকো এবং হন্ডুরাসে। সেখানকার স্রোতহীন বা মৃদু স্রোতের নদী-নালা, খাল-বিল-জলায়। সেখানকার নদী-নালায় পাথরের খাঁজে, গাছের গুঁড়ির আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। খাবারের সন্ধানে ছাড়া চট করে বেড় হয় না। জলজ গাছপালার ঝোপঝাড়ে জোড়া বেঁধে নিজের মতো থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু ভুলেও কেউ যদি ওদের বাসার ধারেকাছেও গেছে তবে তাকে মেরে ছাল তুলে দিতে পারে। এমনিতে লাজুক আবার মারকুটে এরকম কম্বিনেশনের মাছ পোষাটাও তাই একটা অনন্য অভিজ্ঞতা। মোটামুটি একটা ফুট তিনেকের ট্যাঙ্ক থাকলে একজোড়া মাছ পোষাই যায়, বালি পাথর, ডালপালা দিয়েও সাজাতে পারেন এসব ওদের খুব পছন্দ । ভ্যালিসনেরিয়া, লুডুইগিয়া, স্যাজিটেরিয়া ইত্যাদি জাতীয় সস্তা-সুন্দর গাছপালা রাখলেও কোন ক্ষতি নেই, গাছের উপর খুব একটা চাপ নেবে না। বরং লুকানোর জায়গা বেশি পাবে। সারাদিন গাছের ঝোপে বসে থাকবে ।খাবার দিলে টুক করে বেরিয়ে এসে খাবে। একটু ভালো আলো, পরিস্কার টলটলে জল আর নিয়মিত নানারকম আমিষ খাওয়া-দাওয়া, ব্যাস এটুকুই এদের চাহিদা । যেহেতু ট্রপিক্যাল অঞ্চলের মাছ তাই মোটামুটি ২৭-২৮°সেঃ তাপমাত্রা, ৫০০-৫৫০ টিডিএস, আর ৭-৭.৫ পি এইচ ওদের জন্য যথেষ্ট । খুব বেশি জলের স্রোত যেহেতু পছন্দ করে না তাই বায়ো স্পঞ্জ বা HOB জাতীয় ফিল্টার ওদের জন্য আদর্শ। মাছটা যেহেতু ৮-১০ ইঞ্চি বড় হয় এবং ভীষণ মারকুটে তাই এদের সাথে আর কাউকে না রাখাই ভালো, জোড়া বাধলে ব্রিডিং সিজনে অত্যন্ত টেরিটোরিয়াল হয়ে পড়ে তখন সব মাছকেই একধার থেকে পেটাতে শুরু করে। প্রজনন মৌসুমে চ্যাপ্টা পাথরের টুকরো পরিস্কার করে মা-মাছ সেখানে ডিম পাড়ে, বাবা ডিম পাহারা দিতে থাকে। ডিম ফুটে ছানা বের হলে নিজেরাই বাচ্চাদের পরিচর্যা করে। এই সময় বাবা-মায়েরা খাবার চিবিয়ে গুঁড়ো করে বাচ্চাদের খেতে দেয়। বাচ্চারা স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত দল বেঁধে বাবা-মায়ের পেটের নীচে ঘুরতে থাকে। এদের গায়ের রং মেটে, তার উপর ঊজ্জ্বল নীলাভ-সবুজ রঙের অসংখ্য বিন্দু, ঠিক যেন ময়ূরের পেখম। এদের একটা ন্যাচারাল জেনেটিক মিউট্যান্টও আছে যাদের গায়ের রং আরও ঊজ্জ্বল ধাতব নীল। তাদের আবার ইলেকট্রিক ব্লু জ্যাক ডেম্পসি বলে। তাঁদেরও অ্যাকোয়ারিয়ামের শখের বাজারে বিপুল জনপ্রিয়তা। তবে মিউট্যান্টরা সাইজে একটু ছোট হয়, এবং একটু দূর্বল প্রকৃতির হয়, তাই এদের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। তবে নরম্যাল পুষুন আর মিউট্যান্ট, জ্যাক ডেম্পসিরা কিন্তু বেশ স্লো গ্রোয়ার, বড় হতে সময় লাগে । ততদিন ধৈর্য ধরে পুষতে হবে। তবে একবার পুরোপুরি রং নেওয়া শুরু হলে সব মাছ ছেড়ে এদের দেখতে হবে। তবে এখানেই শেষ করলাম আজকের লেখা, হয়ে যাক এক জোড়া জ্যাক ডেম্পসি?