Sahyadria denisonii (Denison’s barb)
ডেনিসনিরা কেমন আছে?
সবুজ চাদরে সারা শরীর মুড়ে পাহাড়গুলো ঘুমিয়ে আছে,এদিক- ওদিক ঢাল থেকে নিজের খেয়ালে জলপ্রপাত রা নেমে এসেছে নীচে,আস্তে আস্তে গর্জন করছে,যেন পাহাড়ের ঘুম না ভেঙে যায়!কোথাও ময়ূরের দলের নাচ,কোথাও বা হরিণের চকিত আনাগোনা।মাঝে মাঝে বনের মধ্য থেকে হর্নবিলের ডাক শোনা যাচ্ছে…
কোথায় বলুন তো?জায়গা টা ভারতের অন্যতম সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য অঞ্চল- পশ্চিমঘাট।সহ্যাদ্রি পর্বতমালা।পৃথিবীর ২৫ টা জীববৈচিত্র্য হটস্পটের মধ্যে অন্যতম। মনুষ্যপ্রজাতির লোভের শিকার হয়ে এর জীবজগতের আদ্ধেক ‘বৈচিত্র্য’ এখন অবশ্য উধাও হয়ে গিয়েছে।পশ্চিমঘাট থেকে ৩৮ টা পূর্ববাহিনী এবং ২৭ টা পশ্চিমবাহিনী নদীর উৎপত্তি হয়েছে।এইসব মিষ্টি জলের নদীতে প্রচুর মাছ।২০০৪ সালের একটি তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে,প্রায় ৩৪৫ টি প্রজাতির মাছ থাকার সম্ভাবনা এই নদীগুলিতে,যার মধ্যে ১৬% প্রজাতি সম্পর্কে বিশেষ কোন তথ্য আহরণ করা হয়নি।২৮৮ টা প্রজাতির সম্বন্ধে রেকর্ডেড তথ্য রয়েছে,যারা আবার ১২ টা অর্ডার,৪১ টা ফ্যামিলি ও ১০৯ টা জেনেরায় বিভক্ত।এদের মধ্যে আবার ১১৮ টা হল ‘এনডেমিক’ এবং ৫১ টা ‘ইউনিক’ প্রজাতি।এতগুলো মাছের ফ্যামিলির মধ্যে এই অঞ্চলে এক নম্বরে আছে ciprinidae,৪৫% মাছ এর আন্ডারে আছে।আর সবচেয়ে বড় অর্ডার হল cypriniformes,মোট মাছের ৫৭% নিয়ে বসে আছে।এই অঞ্চলের মাছেদের মধ্যে পরিচিত নাম- Denison’s Barb।বেশ ফুলবাবু টাইপের চেহারা।টর্পেডোর মতো দেখতে,সোনালি আঁশ দিয়ে ঢাকা,মাথার উপর থেকে একটা টানা লাল লাইন,ওর পাশ দিয়ে আবার একটা কালো লাইন নেমে গিয়েছে…
সাজগোজ কেউ এই মাছের কাছ থেকে শিখুক।আদরের নামও আছে চাট্টি-red line torpedo barb,Miss Kerala,roseline shark, Denison’s flying fox,Red comet barb,Bleeding eye barb।বিজ্ঞনসম্মত নাম Sahyadria denisonii।মাছটির বিজ্ঞানসম্মত নামের প্রথম অংশ টা এসেছে পশ্চিমঘাট পর্বতের আর এক নাম ‘ সহ্যাদ্রি’ থেকে।আর দ্বিতীয় অংশটা,পূর্বতন মাদ্রাজের গভর্ণর উইলিয়াম টমাস ডেনিসন(১৮৬১-১৮৬৬) কে উৎসর্গ করা।পুরনো বিজ্ঞানসম্মত নাম- 1.Labeo denisonii 2.Barbus denisonii 3.Crossocheilus denisonii 4.Puntius denisonii
Kingdom- Animalia
Phylum-Chordata
Class-Actinopterygii
Order-Cypriniformes
Family-Cyorinidae
Genus-Sahyadria
Species-Sahyadriya denisonii
বাসস্হান-কেরালা ও কর্ণাটকের বেশ কিছু নদীতে বর্তমানে এদের দেখা মেলে; বালাপত্তনম নদী,চালিয়ার নদী,কাল্লার নদী,করিয়ানগোর নদী,কুট্টিয়াদি নদী,চন্দ্রগিরি নদী,সুলিয়া নদী,কুপ্পম নদী,ইরিত্তি নদী,অঞ্জরাকান্ডিপুঝা নদী,ভবানী নদী এবং ভারতপুঝা নদী।ভৌগোলিক জায়গা টা মোটামুটি কেরালার কোট্টায়াম জেলার মুন্ডকায়ম- এর আশেপাশে,প্রায় ৮৮০৫ বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে,একটু বিক্ষিপ্তভাবে।নদীর তীরের দিকে যেখানে পাথুরে অংশ,সেখানে গাছপালার ফাঁকে এরা ঝাঁকে ঘুরে বেড়ায়।জলবায়ু,জলের প্রকৃতি-উপক্রান্তীয় অঞ্চলের মাছ।তাপমাত্রা মোটামুটি ১৮-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।জলের pH ৬.৮-৭.৮,কাঠিন্য ৫-২৫ dGH।খাদ্যাভ্যাস-সর্বভুক মাছ।ছোট গাছ,পোকামাকড় খেয়ে প্রকৃতিতে জীবনধারণ করে।বংশবিস্তার-মহিলা ডেনিসন রা একটু লম্বা,কম রঙিন আর স্হূল টাইপের হয়।উত্তর- পূর্ব মৌসুমি বায়ু যখন ভারতে প্রবেশ করে,সেই সময়টায় এরা বংশবিস্তার করে থাকে।এরা ডিম পাড়া প্রজাতি।
সৌন্দর্যই ধ্বংসের কারণ?International Union for Conservation of Nature( IUCN) ডেনিসন বার্ব কে ‘বিপন্ন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।১৯৯০-এর দশক থেকে অ্যাকোয়ারিয়ামের পোষ্য মাছ হিসেবে হ্যান্ডসাম ডেনিসন- এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।এইসময় Dawkinsis জেনাসের কিছু মাছের সাথে এদের হাইব্রিড করানো হত।এমনকি,সিলেকটিভ ব্রিডিং- এর দ্বারা সোনালি রং-এর মাছ-এর ও জন্ম দেওয়া হয়েছিল।১৯৯৬ সালে রেকর্ড পরিমাণে ধরা এবং রপ্তানি করা হয় এই মাছ।১৯৯৭ সালে ‘Aquarama’ (world exhibition on Ornamental Fish)-এ ‘New Species Category’ তে ডেনিসন বার্ব তৃতীয় স্হান অধিকার করে।কেরালা রাজ্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ‘ রপ্তানি দ্রব্য’ -তে পরিণত হয়,সরকারিভাবে।২০০৭-০৮-এ ভারত থেকে মোট রপ্তানিকৃত রঙিন মাছের ৬০-৬৫% ছিল ডেনিসন বার্ব,যার আর্থিক মূল্য ছিল ১.৫৪ মার্কিন ডলার।এছাড়া,কেরালার স্হানীয় মানুষ এই মাছ খেয়েও থাকেন।
এই মুহর্তে ডেনিসনদের সামনে একাধিক বিপদ।১. পশ্চিমঘাটের বাস্তুতন্ত্র সামগ্রিকভাবে বিপন্ন।২. আশপাশের অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য ব্যবহৃত দূষিত সার এবং নদীতে পড়া গার্হস্হ্য আবর্জনা এদের যথেষ্ট ক্ষতি করছে।৩. অ্যাকোয়ারিয়াম ব্যবসার জন্য বাচ্চা মাছ দেদার ধরা হচ্ছে।৪. জৈব বিষাক্ত পদার্থ প্রয়োগ করে উক্ত অঞ্চলে মাছ ধরা হয়!ফলত,গত ১৫ বছরে ডেনিসনদের সংখ্যা প্রায় ৭০% কমে গিয়েছে এবং কমার হার বেশ দ্রুত।সংরক্ষণ উদ্যোগ-কেরালা সরকার ডেনিসন দের দেদার শিকার এবং ব্যবসার উপর রাশ টানতে চাইছে।অক্টোবর- মার্চ মাসে,এদের প্রজনন ঋতুতে এদের ধরা নিষিদ্ধ।কতটা মাছ ধরা হবে,তাও বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।ডেমিসনদের থাকার জায়গা কে স্যাংচুয়ারি হিসেবে ঘোষণা করার কথা ভাবা হচ্ছে।প্রাকৃতিক এলাকার বাইরে এদের প্রজননও করানো হচ্ছে।ইন্দোনেশিয়া আর সিঙ্গাপুর থেকে কৃত্তিমভাবে এদের প্রজনন করিয়ে রপ্তানি করা হচ্ছে বেশ কিছু বছর ধরে।তবে,কোন প্রজাতিভিত্তিক সংরক্ষণ উদ্যোগে যথেষ্ট গড়িমসি আছে।Indian Wildlife Protection Act -এও ডেনিসন রা আদৌ ঢুকবে কিনা কেউ জানে না।সুতরাং দেখে যান।কোনদিন হুট করে শুনবেন,রিও- র স্পিক্স ম্যাকাওদের মতো ডেনিসনরাও আর নেই,মানুষের সভ্যতার মুকুটে আরও একটা প্রজাতি ধ্বংসের পালক যোগ হবে।
পুনশ্চঃ ডেনিসন বার্ব- এর আত্মীয়স্বজন,প্রতিবেশি অনেকেই আজ বিপন্ন,কেউ বা ভালনারেবল।কয়েকটা মাছের কনসার্ভেশন স্ট্যাটাস সঙ্গে দিলাম।তথ্যসূত্রঃ1.”Distribution, endemism and threat statusof freshwater fishes in the Western Ghatsof India”Neelesh Dahanukar, Rupesh Raut and Anuradha Bhat2.”Population Structure of Denison’s barb, Puntius denisonii (Pisces: Cyprinidae): A Species Complex Endemic to the Western Ghats of India”Lijo John, Reynold Peter and Gopalakrishnan 3.iucnredlist.org4.seriouslyfish.com5.wikipedia.orgছবিঃগুগল্ ইমেজ,তথ্যসূত্র দ্রষ্টব্য।