Trichogaster leeri(Pearl Gourami)

fishkeeping simplified

Trichogaster leeri(Pearl Gourami)

যদি প্রশ্ন করা যায়, প্রাকৃতিক ভাবে যাঁদের মধ্যে পাওয়া যায় সবচেয়ে সুন্দর গোরামী কোনটি? তবে দুটি নাম উঠে আসার সম্ভবনাই বেশি ; এক, পার্ল গোরামী, দুই গুঁড়ি খলসে। প্রথমটার বসবাস ঐ পিট সোয়াম্পে, দ্বিতীয়টা আমাদের খালে-বিলে। খালে-বিলের কথা ছেড়ে পিট সোয়াম্পের দিকে তাকালে দেখবো এই জলাভূমি গুলো গহীন অরন্যের মধ্যে শত শত বছর ধরে অবস্থান করছে, এবং বছরের পর বছর ধরে গাছের পাতা পচে পচে এই সব জলাভূমির নীচে যে কালো রঙের জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ আস্তরণ তৈরি হয়েছে তাকেই বলে পিট। এই পিট থেকেই কালচে বাদামী রঙের ট্যানিন বের হয়ে হয়ে জলের রং হয়ে যায় লিকার চায়ের মতো, অ্যাসিডিক এই জলের pH এর মাত্রা নেমে আসে ৫ এর কাছাকাছি, TDS ১০০-১৫০ ppm, তবে যেহেতু ঐ সব অঞ্চলে ঋতু পরিবর্তন হয় না তাপমাত্রা কমবেশি ২৬-২৭ ° সেঃ মধ্যে ঘোরাফেরা করে । এমন জলেই বসবাস করে ৪-৫ ইঞ্চি মাপের এই রাজকীয় গোরামি , ছাই রঙের দেহের উপর অসংখ্য মুক্তোর মতো সাদা-সাদা বিন্দু তখন ঐ আলো আঁধারি পরিবেশে জ্বলজ্বল করতে থাকে। পুরুষ মাছটি সাধারণ স্ত্রী মাছের তুলনায় একটু বড় হয়, এবং পুরুষ মাছের গলা থেকে পেট পর্যন্ত উজ্জ্বল কমলা রঙের হয়। সাধারণত পৃষ্ঠ পাখনা দেখেই স্ত্রী পুরুষ আলাদা করা যায়, পুরুষ মাছের পৃষ্ঠ ও শ্রেণী পাখনা অনেকটাই বড় হয়। সকল গোরামির মতো এদের বক্ষ পাখনা পরিবর্তিত হয়ে শুঁড়ে পরিনত হয়েছে, এবং দুই জোড়া শুঁড় এদের গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শ ইন্দ্রিয়। ট্যানিন যুক্ত কম অক্সিজেন সমৃদ্ধ জলে বসবাস করতে অভ্যস্ত বলে এদের বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে শ্বাসকার্য চালাতে দেখা যায়, এবং সেই কাজে সুবিধার জন্য এদের labyrinth organ থাকে। তবে দেখতে শান্তশিষ্ট মনে হলেও এদের আসল রূপ দেখা যায় ব্রিডিং সিজনে, মূলত বর্ষাকালে, নতুন জল পড়লেই এদের পুরুষদের মধ্যে আগ্রাসী মনোভাব চলে আসে এবং নিজস্ব টেরিটোরি দখলের জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, যুদ্ধে জয়ী পুরুষদের কপালে জোটে শান্ত-নিরিবিলি বাবল নেস্ট বানানোর জায়গা, যেখানে তাঁরা কোন ভাসমান গাছপালার ফাঁকে মনের সুখে বাবল নেস্ট বানিয়ে প্রেমিকার অপেক্ষা করতে থাকে। এসময় তাদের সাজপোশাক রঙচঙে হয়ে যায়, গলার নীচটা গাঢ় কমলা হয়ে যায়, গায়ের পার্লিং চকচক করতে থাকে, এবং ৫৬’ ইঞ্চি ছাতি ফোলাতে না পারলেও পাখনা গুলো টানটান করে রাখে, এই রকম কোন Handsome hunk কে উপেক্ষা করা কি কোন নারীর পক্ষে সম্ভব? মোটেই নয়, তাই মেয়েরা এসে যদি দেখে সুন্দর বাসা বানিয়েছে তবে প্রথম দর্শনেই প্রেম হয়ে যায়, এবং প্রনয়-পরিনয় অতিক্রম করে প্রজননে শুরু হয়। ফিমেলের দেওয়া ডিমগুলো পুরুষ মাছটি মুখে করে এনে বাবল নেস্টে জমা করে এবং জমা হয়ে গেলেই সব দায়িত্ব বাবার ঘাড়ে দিয়ে মা কেটে পড়ে। এরপর বাবাই সব ঘাত-প্রতিঘাত সামলে বাচ্চাদের প্রথমিক পরিচর্যা করে। বাচ্চার মোটামুটি সাঁতার কাটতে শিখলেই বাবাদের কাজ শেষ হয়।•অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখতে হলে : একাধিক মাছের জন্যসাধারণত মাঝারি আকারের অ্যাকোয়ারিয়াম-ই ভালো, তিন-দেড়-দেড় আদর্শ সাইজ। জলেরpH ৫.৫-৬.৫, এবং স্রোতহীন জল দরকার।HOB এদের জন্য আদর্শ ফিল্টার। খাবার দাবারে চিন্তা নেই, লাইভ ফুড পছন্দের খাবার হলেও গুঁড়ো থেকে ফ্লেক সবই খায়। তবে ভাসমান খাবারই দেওয়া উচিত, ডোবা খাবার খেতে পছন্দ করে না । ট্যাঙ্কে এদের প্রতিবেশী হিসেবে হার্লেকুইন রাসবোরা, বিভিন্ন মাঝারি সাইজের টেট্রা, মলি, প্লাটি, সোর্ডটেল প্রভৃতি আদর্শ। তবে ট্যাঙ্কে যারাই থাকুক না কেন ঘন গাছপালার ঝোপঝাড় এদের জন্য খুবই দরকারী। ভয় পেলে লাফানোর প্রবনতা আছে তাই ট্যাঙ্ক টা ঢাকনা দিয়ে রাখতেও ভুলবেন না।হবিতে যদিও মাছটা নতুন নয়, বরং বেশ পুরোনো, তবুও এদের কে এদের মতো করে পুষেছে কজন, তাই এদেকে এদের প্রাকৃতিক পরিবেশের মতো ট্যাঙ্ক তৈরি একবার পুষে দেখবেন নাকি? চেষ্টা করে দেখুন, আশাকরি পয়সা উসুল হয়ে যাবে।

We are accepting the entries for IBAC

X