Haplochromis nyererei(Nyererei Cichlid)

fishkeeping simplified

Haplochromis nyererei(Nyererei Cichlid)

হাজারো কাজের ব্যস্ততায় বিষ্যুদবারের স্পিসিস হাইলাইটের জন্য যে লেখা জমা দেওয়া দরকার সেটাই বেমালুম ভুলে গেছি। যখন টনক নড়ল তখন বৃহস্পতিবার হতে আর কয়েক ঘন্টা বাকি। তাই অগত্যা মোবাইলের কি-প্যাডে আঙুল চালাতেই হলো। কি লিখবো কি লিখবো ভাবছি, এমন সময় ভিক্টোরিয়ান ভ্যাবলাকান্তদের কথাই মনে পড়ল। যাইহোক আজ তাহলে ওদের নিয়েই শুরু করি। ওহো বলতেই ভুলে গেছি আমার আদরের ডাক ভ্যাবলাকান্ত হলেও ওদের একটা জুতসই ল্যাটিন নাম আছে, Pundamillia nyererei, আবার এখান নাকি নতুন নাম হয়েছে Haplochromis nyererei । যে যাই হোক কবি বলেছেন নামে কি এসে যায় … সে নামে আসে যাক আর না যাক, রঙে কিন্তু এসে যায়। উজ্জ্বল হলুদ বুক থেকে, টকটকে লাল পিঠ, কালচে পেট আর নীলচে মুখের এই মাছটি যেন আক্ষরিক অর্থেই আগুন। ঠিক যেমন ছিলেন স্বাধীন তানজানিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট Mwalimu Julius Nyerere , যার নামেই এদের নাম। তাই বলে পুরো তানজানিয়ায় এদের পাওয়া যায় এমন ভাবলে কিন্তু একটু ভুল হবে। ভিক্টোরিয়া হ্রদের দক্ষিণে তানজানিয়া অংশে যে অগভীর পাথুরে এলাকা আছে সেখানেই এদের বসবাস। মোট ১১টি এলাকায় এদের পপুলেশন এখনও পর্যন্ত রেকর্ড করা গেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নানসিও, রুটি, জু, মাকোবে, ইগোম্বে, অ্যাঙ্কর, পাইথন, লুয়ানসো ইত্যাদি পয়েন্ট বা এলাকা । এই পয়েন্ট গুলো থেকে যে সব নাইরেরিই পাওয়া গেছে সবাই যে আবার এক রকমের দেখতে এমন কিন্তু নয়। এই ধরুন মাকোবে পয়েন্ট, সেখানে যে নাইরেরিই পাওয়া গেছে তারা ভীষণ লাল, এদের নাম হয়েছে নাইরেরিই সুপার রেড, আবার রুটি আইল্যান্ডের নাইরেরিই রা একটু কম লাল এদের নাম হয়েছে নাইরেরিই রেড, আবার কিছু কিছু পয়েন্টে নাইরেরি এমন আছে যাঁদের দেহের উপরের অংশে লাল ব্যপারটাই নেই। অর্থাৎ এলাকা অনুযায়ী আলাদা আলাদা Variations । একই মাছের কেন এতো ভ্যারিয়েশন হয়েছে সেটা নিয়েও কিছু মাছ-পাগল জীববিদ মাথা ঘামিয়েছেন। অনেক চুলচেরা বিশ্লেষণ করে খুঁজে পেয়েছেন যে সব এলাকায় জল বেশি ঘোলা সেখানে নাইরেরিইদের লাল রং বেশি ঊজ্জ্বল। এবং যেখানে জল পরিস্কার সেখানে লালের মাত্রা কম। এবং এই লালের গুরুত্ব ওদের ব্রিডিং বিহেভিয়ারের সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ ঘোলা জলে লাল রঙের পুরুষ মাছকে সহজেই স্ত্রী মাছেরা চিহ্নিত করতে পারে। এবং যে পুরুষ যতো বেশি লাল বিয়ের বাজারে সেই পুরুষের চাহিদা তত বেশি। তবে পুরুষরা সুন্দর হলেও মোটেও কিন্তু সভ্য-ভদ্র নয়, বরং খুবই উগ্র এবং বদমেজাজি। একে অপরের সাথে মারামারি এদের খুব সাধারণ দৈনিক কাজ। এমনকি মারতে মারতে মেরে ফেলা নাইরেরিই সমাজে জলভাত । তবে নাইরেরিই পুরুষ মানুষ পুরুষের মতো না, ওরা খুব সুখী পুরুষ। একটা বিয়েতে আবদ্ধ থাকার বাধ্য বাধ্যকতা মোটেও এদের নেই। পাথরের খাঁজে বা বালির মধ্যে একটা গোলাকার গর্ত খুঁড়তে পারলেই হলো, একাধিক ফিমেল সেখানেই আসবে, উনি লেজ নাচিয়ে পাখনা ফুলিয়ে নেচে-কুঁদে মহিলাদের ইমপ্রেস করবেন। তারপর ইমপ্রেস হয়ে গেলে যা করার করবেন। এরপর পুরুষদের সব দায়িত্ব শেষ। যেহেতু মাউথ ব্রুডার তাই বাচ্চা প্রতিপালন মা-ই করবে।এতদূর পড়ে যদি মনে হয় নাইরেরিই দের জীবন সহজ তা কিন্তু মোটেই নয়। নাইরেরিইরা কিন্তু আজ নিজভূমে পরবাসী । সৌজন্যে মানুষের অপদার্থতা, ভিক্টোরিয়া হ্রদে বিশালাকার নাইল পার্চ ছেড়ে, রাক্ষুসে তিলাপিয়া চাষ করে, কচুরিপানায় ভরিয়ে, শহরের ময়লা আবর্জনা ফেলে কম অত্যাচার এদের উপর করেনি। তবুও আজ যে ওরা টিকে আছে তার একটা বড় কারণ সারা বিশ্বের মাছ পাগল লোকেরা, আর ক্যাপ্টিভ ব্রিডিং। তাই যখনই এদের পুষবেন জানবেন এদের কিন্তু ভবিষ্যত আপনার হাতেই। আপনি চাইলেই এদের সহজে পাবেন না। তাই ছোট্ট কষ্টসহিষ্ণু মাছ বলে আর পাঁচটা মালাউই বা ট্যাঙ্গানিক্যান সিকলিডের মধ্যে এদের ফেলে রাখবেন না। পাথরে ভর্তি অগভীর জলের অ্যাকোয়ারিয়াম এদের আদর্শ সেট আপ। যেখানে একটি বা একাধিক প্রজাতির ভিক্টোরিয়ান হ্যাপলোক্রোমিস এদের ট্যাঙ্কমেট হতে পারে। তবে এক অ্যাকোয়ারিয়ামে একাধিক মেল রাখা খুব মুশকিল। কারণ মেল গুলি একে অপরের উপর মারাত্মক আক্রমণাত্মক। সাধারণত ২০০ লিটার বা তার বেশি জলের অ্যাকোয়ারিয়াম এদের দরকার। যেখানে পর্যাপ্ত লুকোনোর জায়গা থাকবে। এছাড়াও কয়েকটা তথ্য এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা ভালো এরা কিন্তু সর্বভূক, পোকা-মাকড়, লার্ভা, প্লাংটন, কেঁচো, ফ্লেক্স, প্যালেট, ভেজিটেবল কিছুই এরা ছাড়বে না। ২৮-৩২°c তাপমাত্রা এবং একটু ক্ষারীয় জল (pH ৭.৫-৮.৫) পেলেই এরা খুশি।পরিশেষে একটা কথা না বললেই নয়, অনেকেই এই প্রশ্ন করেন এদের কি মালাউই সিকলিডের সাথে রাখা যায় ? এক্ষেত্রে আমার উত্তর … মালাউই সিকলিডেদের সাথে এদের রাখার মূল অসুবিধা হলো এরা স্বভাব-চরিত্রে অনেকটাই মবুনাদের মতো, কিন্তু খাদ্যভ্যাসে মালাউই হ্যাপদের মতো। মবুনাদের সাথে রাখলে এদের খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা হবে। কারণ এরা অমনিভোর, আর মবুনারা হার্বিভোর । আবার মালাউই হ্যাপের সাথে এদের খাদ্যভ্যাসে মিল আছে ঠিকই কিন্তু মালাউই হ্যাপেরা শিকারী, আকারে দৈত্যাকার । ৩-৪ ইঞ্চি সাইজের নাইরেরিই কে ওরা সহজেই খেয়ে নেবে। তাই আমার মতে নাইরেরিই পুষতে হলে স্পিসি অনলিই সবচেয়ে বেটার অপশন। যাইহোক লিখতে লিখতে বেশ রাত হলো, এবার এবার থামতে হবে। কাল আবার কথা হচ্ছে।

We are accepting the entries for IBAC

X