
Julidochromis transcriptus (Masked Julie)
অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম এখানে কিছু একটা লিখি। কিন্তু লেখা আর হয়ে উঠছিল না। তার একটা কারণ গ্রুপটায় এত্ত সুন্দর সুন্দর পোস্ট হচ্ছে, সেগুলো পড়তে পড়তেই সময় কেটে যাচ্ছে। আর অন্য কারণটা হল এই গ্রুপে করা পোস্টগুলোর মান এতটাই উন্নত যে এখানে যা হোক তা হোক করে লিখতে মন চাইছিল না। শেষে কাল বন্ধুবর পবিত্রর কাছে রীতিমতো ধমক খেয়ে লিখবো বলে মনস্থির করলাম।এবার আসি বিষয় নির্বাচন। এখানে আমার কাজে একটু সুবিধা করে দিয়েছে। একপ্রকার বলেই দিয়েছে Julidochromis transcriptus নিয়ে লিখতে। সেই দাবী মতোই আমার স্বল্প অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে ক’লাইন লিখলাম আফ্রিকাবাসী সিকলিডি পরিবারের ছোট্ট মাছটাকে রাখতে গেলে কোন দিকগুলোতে বিশেষ নজর দিতে হবে সেই নিয়ে। আশাকরি ভালো লাগবে…..
মুখোশধারী খুদে দস্যুর আস্তানা
প্রথমেই বলে নেওয়া যাক এদের আবাসস্থল সম্বন্ধে। বিশাল আকারের লেক বা স্বাদুজলের হ্রদের কথা মাথায় এলেই যে কটা নাম মাথায় ঘোরাফেরা করে তার মধ্যে আফ্রিকার টাঙ্গানিকা অন্যতম। সেই টাঙ্গানিকা হ্রদের মূলত উত্তর অংশের বাসিন্দা এই Julidochromis transcriptus রা। যতদূর মনে পড়ছে টাঙ্গানিকা হ্রদ থেকে অন্তত পাঁচ প্রজাতির Julidochromis জেনাসের সিকলিড বর্ণিত হয়েছে (অবশ্যি প্রতি প্রজাতিরই একাধিক ভ্যারিয়েশন আছে), আর সবই পরিচিত জুলি নামে। কিন্তু এখানে যাদের নিয়ে আলোচনা সেই J. transcriptus দের পোষাকি নাম মাস্কড জুলি (Masked Julie)। চোখের পাশ বরাবর কাজল কালো দাগ থাকায় অমনধারা নাম। আমার তো দেখলেই “দ্যা মাস্ক অফ জোরো”-র কথা মনে পড়ে। অবশ্য এদের গায়ের রঙ অনুযায়ী ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট জুলি (Black & White Julie) নামটাও বেশ পরিচিত।আবার ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট শুনে ঘাবড়ে যাবেন না যেন!!! বিষ্টি হলে যেমন আকাশের টক গন্ধ কেটে যায়, তেমনি যৌবন লাভ করলে জুলিদের সাদা কালো রঙে হলুদ নীলের পোঁচ পড়ে। তখন আর এদের ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট বলে অবজ্ঞা করতে পারবেন না একথা বলাই বাহুল্য।Julidochromis transcriptus রা কিন্তু আকারে ছোট। বড়জোর দু’ই থেকে আড়াই ইঞ্চি পর্যন্ত এদের দৌড়। পুরুষ মাছের থেকে মহিলা মাছগুলো আকারে সামান্য বড় কিন্তু অনেক মাছের মতো চটজলদি এদের পুং-স্ত্রী আলাদা করা যায় না।
ট্যাঙ্ক সাইজ
আচ্ছা এবার দেখা যাক এদের রাখতে হলে আপনার কাঁচ বাক্সখানা কত বড় হতে হবে। শুরুতেই ঠিক করে নিন আপনি কমিউনিটি অ্যাকোয়ারিয়ামে এদের রাখবেন, নাকি স্পিসিস ওনলি ট্যাঙ্কে। যদি কমিউনিটি ট্যাঙ্ক আপনার পছন্দ হয় তবে সেটা অবশ্যই টাঙ্গানিকান কমিউনিটি হওয়াটা উচিত। আর সঙ্গী মাছ কি থাকছে সেই বুঝে ট্যাঙ্কের সাইজ ঠিক করা উচিত। আমার কিন্তু সবসময় পছন্দ স্পিসিস অনলি ট্যাঙ্ক। সেক্ষেত্রে দুই-এক-এক ট্যাঙ্ককে এদের রাখার জন্য মিনিমাম সাইজ হিসেবে গণ্য করা উচিত।
ট্যাঙ্ক ডেকরেশন
মাস্কড জুলিরা কিন্তু লেকের কম নাব্যতার পাথুরে জায়গার মাছ। পাথরের খাঁজে ফোকরের মধ্যে ঢুকে থাকতে বেশ পছন্দ করে। সামান্যতম ভয় পেলে বা তাড়া খেলে সেঁধিয়ে যায় সুবিধামতো ফাটলে। ট্যাঙ্ক ডেকরেশনের সময় এই ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। সেই বুঝে যথেষ্ট পরিমাণে পাথর দিয়ে আড়াআড়ি ফাটল তৈরী করতে পারলে এদের রাখার কাজ অনেকটাই সোজা হয়ে যায়। অনেকে মাটির ভাঁড়, টবের ভাঙ্গা টুকরো এইসব ব্যবহার করেন, কিন্তু আমার মতে তাতে ন্যাচারাল ফিলিংটা কমে যায়।এর সাথে সাবস্ট্রেট হিসেবে বালি। পাতি সিমেন্ট মাখার বালিও চলতে পারে, তবে আমার পছন্দ সাদা মার্বেল ডাস্ট। তবে যাই হোক সাবস্ট্রেট ভালো করে ধুয়ে তবেই ব্যবহারের কথা ভাবা উচিত।
ভালো রাখার কেমিস্ট্রি
এখন ট্যাঙ্কের সাইজ ঠিক রেখেও, ট্যাঙ্ক ডেকরেশন যথাযথ রেখেও একাধিক লোকের J. transcriptus ট্যাঙ্ক ঘেঁটে যেতে দেখেছি। তাই জেনে নেওয়া দরকার এদের ভালো রাখতে গেলে আর কোন কোন জায়গায় উন্নতি করা দরকার। প্রথমেই আসি জলের কথায়। এরা যথেষ্ট ক্ষারীয় জল, যার pH সূচক 8 এর ওপর তেমন জলেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। এদের চটক দেখতে হলে জলের এই রসায়নগুলো মাথায় রাখতে হবে। এরপর আসে ফিল্ট্রেশন। স্টেবল ট্যাঙ্ক ছাড়া জুলিদের রাখার কথা না ভাবাই ভালো। ফিল্ট্রেশন তাই হতে হবে বেশ ভালো মানের। একটা ভালো হ্যাং অন ব্যাক ফিল্টারে (HOB) কাজ চলে যাবে। তার থেকে ওপরে উঠতে চাইলে ক্যানিস্তার আছে। তবে ফিল্টার মাত্রই সেটা যে ২৪ ঘন্টা ননস্টপ চলবে এটা আশাকরি আর বলে দিতে হবে না। খেয়াল রাখার আর একটা জিনিস হল ফিল্ট্রেশন ভালো করতে গিয়ে জলের স্রোত যেন খুব বেশি না হয়। সময় দিন ট্যাঙ্ক সাইক্লিং এর, ট্যাঙ্কে ভারসাম্য আসুক, তারপর না হয় জুলিদের নতুন ঘরে ছাড়বেন।
সব সেট তাহলে? এরপর চিন্তা এরা খাবে কি? মাস্কড জুলি স্বভাবে সর্বভূক। নিজস্ব পরিবেশে পোকার লার্ভা, ছোট শামুক, প্ল্যাঙ্কটন এদের খাদ্যতালিকায় স্থান নেয়। আপনাকে এমন খাবার খাওয়াতে হবে যাতে এই মিশেলটা বজায় থাকে। মোটামুটি একটু ভালো মানের প্রোটিন বেসড ফ্লেক কি ফ্রোজেন ফুড এদের যথেষ্ট পছন্দের। আর খাবার ব্যাপারে এরা যথেষ্ট হ্যাংলা, সুতরাং সমস্যা কিছু নেই।সবশেষে আসে জল পালটানোর গল্প। এখানেও কিন্তু transcriptus আপনাকে অনেকটাই নিষ্কৃতি দেবে। এদের ওয়াটার চেঞ্জ করতে হয় ন্যূনতম। সপ্তাহে ১০-১৫% ওয়াটার চেঞ্জ এদের জন্য যথেষ্ট। তবে আমার মতে প্রতিবার ওয়াটার চেঞ্জের সময় সাবস্ট্রেটের বালিটা একটু সাইফোন করে দেওয়া ভালো এবার একটা কথা বলে নিই। আপনি ট্যাঙ্গানিকান সিকলিড করতে চান, কিন্তু ইন্টারনেটে প্রয়োজনীয় টেম্পারেচার ২৬°-২৭° দেখে ইতস্তত করছেন। আমিও করেছি একসময়। কিন্তু আমার প্রায় দু’বছরের ট্যাঙ্গানিকান অভিজ্ঞতা বলছে এদের চাপ হয়না কলকাতার গরমকালে। আমার ঘরের টেম্পারেচার যখন ৩৭°-৩৮° তখনও শুধু ট্যাঙ্কের সারফেস লেভেল বরাবর একটা হাইস্পিড ফ্যান চালিয়ে টেম্পারেচার ৩২°-৩৩° এ নামিয়ে রাখা গেছে। আর তারা যে ভালোই থেকেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।তাহলে আশা করছি Julidochromis transcriptus রাখতে আর কোনো অসুবিধা হবে না৷ যারা দু’ফুটের ট্যাঙ্কে কি করবেন ভাবছেন, তারা কিন্থ এই টাঙ্গানিকান অপশনের কথা ভেবে দেখতে পারেন।আর কি কোনো দিক বাদ পড়লো? কমেন্টে আমাকে জানালে তার জবাব দেবার চেষ্টা করবো।সাথে কিছু রিসেন্ট ছবি দেবার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ট্যাঙ্কের লাইটটা বিগড়ানোয় পুরানো ছবিই দিতে হচ্ছে। পরে সময় সুযোগ পেলে না হয় নতুন ছবি দেওয়া যাবে……