Anguilla anguilla(Elusive Freshwater Eels)

fishkeeping simplified

Anguilla anguilla(Elusive Freshwater Eels)

– “জলের নিচের পাঁক থেকেই এই মাছের জন্ম…”- “এই মাছটা যখন পাথরের গায়ে নিজের গা ঘষে, তখনই আরেকটা নতুন মাছ জন্ম নেয়….”- “বিশেষ বিশেষ ঋতুতে ঝরে পড়া শিশির থেকেই জন্ম এই মাছের…”ভাবছেন ভরদুপুরে মজা করছি? সে ভাবতেই পারেন। কিন্তু যদি বলি কথাগুলো বলে গেছেন অ্যারিস্টটল, প্লিনি, লিনিয়াসের মতো দিকপালরা। আর হ্যাঁ আইজ্যাক ওয়ালটন সাহেবও, সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝিই গদ্যে এবং পদ্যে যিনি একখানা গোটা বই লিখে ফেলেছিলেন মাছ ধরার কলাকৌশল নিয়ে। এবার কি একটু খটকা লাগছে যে, কি এমন মাছ যাকে নিয়ে এত্ত দেয়ালা?তাহলে চলুন যাই ঘুরে আসি ইউরোপ থেকে, আজকে সেখানকারই একটা মাছের গল্প বলবো।তার আগে বলি, বাঙ্গোশ মাছের নাম শুনেছেন? আচ্ছা যাঁরা শোনেননি তাদের বলি, বাঙ্গোশ আমাদেরই বাংলার একটা স্বল্প পরিচিত মাছ। বৈজ্ঞানিক নাম Anguilla bengalensis। বাঙ্গোশ দেখলে অবশ্য মাছের থেকে বেশি সাপ বলে মনে করাটাই স্বাভাবিক। ধারালো দাঁতে সাজানো বিশাল আকারের হাঁ-মুখটাও যথেষ্ট ভীতিপ্রদ। এই বাঙ্গোশেরই এই ইউরোপীয় তুতো ভাই Anguilla anguilla, বা ইংরেজিতে যাকে বলে European Eel, তিনিই আজ আমাদের গল্পের নায়ক, কিংবা নায়িকা!ইউরোপের বিস্তৃত অংশের নদীনালায় একসময় এদের যথেচ্ছ পরিমাণে দেখা মিলতো। দিনের বেলায় এরা পাথরের নীচে কি মাটি পাঁকের মধ্যে নিজেদের লুকিয়ে রাখে, আর মূলত রাতের বেলায় বাইরে আসে। পূর্ণাঙ্গ মিষ্টিজলের ঈল দৈর্ঘ্যে কখনো কখনো ফুট চারেকের বেশিও হয় এমন তথ্যও প্রায়ই পাওয়া যায়। মাছ, শামুকের সাথে সাথে জলে পড়া পোকামাকড়, পাখি কি ছোটো স্তন্যপায়ী যা মুখে আঁটে তাই দিয়েই এরা উদরপূর্তি করে থাকে। এরা ভেজা ত্বক দিয়ে বেশ কিছু সময় শ্বাসকার্য চালাতে সক্ষম হওয়ায় ডাঙায় উঠে খাবারের সন্ধান করাটাও এদের কাছে স্বাভাবিক। মোটকথা লম্বা সাপের মতো চেহারার মাছটা সাহেবসুবোদের দেশের বেশ পরিচিত মাছ হলেও, মুশকিলটা হল এদের বাচ্চা-কাচ্চাদের কেউ চোখে দেখেছে এমন কথা কেউ কোনোদিন হলফ করে বলতে পারতো না। এমনকি বছরের পর বছর ইউরোপের বিভিন্ন অংশ থেকে হাজারে হাজারে ঈল ধরা পড়লেও, কারোর মধ্যে স্পার্ম কি ডিমের সন্ধানটুকুও পাওয়া যেত না। তো সেখান থেকেই এদের জন্মরহস্য নিয়ে নানা মুনির নানা মত। যা অনেকাংশেই বাস্তবকে ছাড়িয়ে অতিপ্রাকৃত রহস্যের দিকে পা বাড়িয়েছে। এই রহস্য চলেছে বিংশ শতাব্দীর গোড়া পর্যন্ত। ইতিমধ্যে ডেনমার্কের তরুণ সমুদ্রবিজ্ঞানী এবং প্রাণীবিদ্ জোহানেস শ্মিড্ট বেরিয়ে পড়েছেন “থর” নামের এক গবেষণা জাহাজে চেপে। উদ্দেশ্য মূলত কড এবং হেরিং জাতীয় খাদ্যমৎসের ব্রিডিং বিহেভিয়ার নিয়ে গবেষণা। তো একদিন আচমকাই ডেনিশ গবেষকের জালে পড়লো একটি ছোট্ট প্রায় স্বচ্ছ মাছের লার্ভা, যা পরে প্রমাণিত হয় ইউরোপিয়ান ঈলের লার্ভা হিসেবে। কিন্তু ধরাটা পড়লো কোথায়? ডেনমার্কের মূল ভূখন্ডের ১৪০০ কিমি দূরে ফারো দীপপুঞ্জের পশ্চিমে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে। তাহলে কি আমাদের গল্পের নায়ক স্পনিং করতে মিষ্টি জল ছেড়ে গভীর সমুদ্রে চলে আসে? মানে যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ক্যাটাড্রোমাস (catadromous) বলা হয় ইউরোপিয়ান ঈল কি আদতে তাই?সেই সন্দেহই বাস্তব হল 1922 সালে, জোহানেস শ্মিড্ট তার গবেষণাপত্রে প্রকাশ করলেন মাঝসমুদ্রে একাধিক ইউরোপিয়ান ঈলের লার্ভা পাওয়া যাওয়ার কথা। এবার কোথা থেকে? ভাবলে অবাক হয়ে যাবেন ইউরোপ থেকে প্রায় 6500 কিমি দূরে আমেরিকা মহাদেশের নিকটবর্তী বারমুডা দ্বীপের কাছে সারগাসো সমুদ্রে। আটলান্টিকের এই অংশটাকে উপবৃত্তাকারে ঘিরে রেখেছে একাধিক সমুদ্রস্রোত এবং অদ্ভুতভাবে সারগাসো সমুদ্রের মাঝের অংশটা একদম স্রোতহীন, নানা রকমের সামুদ্রিক আগাছায় পরিপূর্ণ। প্রাচীনকাল থেকেই সারগাসো সমুদ্রে স্রোত এবং হাওয়ার অভাবে আটকে পড়া বানিজ্য তরীর নানা কুখ্যাত উপাখ্যান সুবিদিত। সেই সারগাসো সমুদ্রই প্রমাণিত হয় ইউরোপিয়ান ঈলের প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে। পরে একই রকম রহস্যের সমাধান হয় পৃথিবীর আরেক প্রান্তে। 1991 সালে জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া এবং সমুদ্রগবেষণাগারের গ্রাজুয়েট ছাত্র মাইকেল মিলার জাপানি ঈলের (A. japonica) লার্ভা খুঁজে পান জাপানের মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় 2500 কিমি দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে গুয়াম দীপপুঞ্জের পশ্চিমে।আরো পরে, প্রায় সাতশো ইউরোপিয়ান ঈলদের গায়ে মাইক্রোট্রান্সমিটার বসিয়ে তাদের মাইগ্রেশন রুট জানার চেষ্টা চলে। সে বিষয়ে জানা যাবে 2016 সালে প্রকাশিত ডেভিড রিঘটন এবং সহবিজ্ঞানীদের প্রকাশিত বিখ্যাত গবেষণাপত্রটি উলটে পালটে দেখলে। ইউরোপিয়ান ঈলের আরো নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা এখনো চলছে। কিভাবে তারা মিষ্টি জল থেকে বেরিয়ে সমুদ্রের নোনা জলে নিজেদের মানিয়ে নেয়? সমুদ্রের স্রোতে সাঁতার দেওয়ার জন্য তাদের দেহে কেমন পরিবর্তন আসে? কিভাবেই বা ইউরোপিয়ান ঈলের প্রাথমিক পর্যায়ের লার্ভা, যার আকৃতি একটা ছোট্ট পাতার মতো সে কিভাবে আট হাজার কিলোমিটার সাঁতরে পূর্বপুরুষের দেশে ফিরে আসে? সব প্রশ্নের জবাব এখনো মেলেনি। অনেক উত্তর এখনো লুকিয়ে আছে ইউরোপ থেকে সারগাসো সমুদ্রের মাঝের দীর্ঘ পথে।দুঃখের বিষয় ইউরোপিয়ান ঈলের পপুলেশন সম্প্রতি ভীষণভাবে ধাক্কা খেয়েছে। সমুদ্র থেকে মিষ্টিজলে ফিরে আসা মাছের সংখ্যা কমে গেছে নব্বই শতাংশেরও বেশি। কারণ হিসেবে যেমন পরিবেশের পরিবর্তনকে দায়ী করা হচ্ছে, তেমনই দায় এড়াতে পারেনা ইউওরোপের নদীপথকে অবরুদ্ধ করা শতাধিক হাইড্রোপাওয়ার প্রোজেক্ট। IUCN সম্প্রতি ইউরোপিয়ান ঈলকে Critically Endangered বা সংরক্ষণের সর্বাধিক গুরুত্বে তালিকাভুক্ত করেছে।সবশেষে বলি আমাদের দেশীয় যে মিষ্টি জলের ঈল, যার নাম বলেছিলাম বাঙ্গোশ (Anguilla bengalensis), তিনিও কিন্তু এই একই গোত্রভুক্ত মাছ। সুতরাং তিনিও যে জ্ঞাতিগুষ্টির মতো প্রজননহেতু সমুদ্র ভ্রমণে বেরোন, সে বিষয়টা নিশ্চিতরূপেই বলা যায়। কিন্তু এখনো আমাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই। আশাকরি সেই রহস্যেরও দ্রুত সমাধান হবে।

We are accepting the entries for IBAC

X