Hemichromis sp.(Red Jewel Cichlid)

fishkeeping simplified

Hemichromis sp.(Red Jewel Cichlid)

কঙ্গো, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ও দীর্ঘতম নদী। প্রতি সেকেন্ডে যে নদীতে বয়ে যায় ৪২ হাজার ঘন মিটার জল, তবে গহীন অরন্যে ঢাকা এই নদী দিয়ে শুধু যে জল বয়ে গেছে তা কিন্তু নয়, বয়েছে রক্ত। কালো মানুষের লাল রক্ত। আর সেই জলেরই রক্তের মতো লাল একটি সিকলিড নিয়ে আজকের গল্প। সালটা উনবিংশ শতকের শেষভাগ, আবিস্কারের যুগ, এক্সপ্লোরার স্ট্যানলি চষে বেড়াচ্ছেন আটলান্টিক উপকূল। আফ্রিকার মাঝামাঝি এসে খেয়াল করলেন বিশাল এলাকা জুড়ে বেড়িয়ে আসছে বাদামি রঙের জল, এদিকে ইউরোপীয়ানদের পা খুব একটা পড়েনি, চারপাশে অভেদ্য অরন্য, অরন্যের ভিতরে ছোট ছোট আদিবাসীদের গ্রাম। সেই সব এলাকা শুধু যে দুর্ভেদ্য তাই নয়, সাথে আছে ম্যালেরিয়া, স্লিপিং সিকনেসের মতো ভয়ঙ্কর সব রোগের প্রাদুর্ভাব। তবুও স্ট্যানলি নাছোড়, এগিয়ে চললেন। ক্রমে ক্রমে নতুন দেশ আবিস্কারের এই খবর পৌঁছে গেল বেলজিয়ামে। বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড ওই এলাকায় উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করলেন, নাম দিলেন কঙ্গো ফ্রি স্টেটস। নামেই ফ্রি, আসলে চলতো রমরমা কৃতদাস, আইভরি আর রবারের ব্যাবসা। পান থেকে চুন খসলেই প্রান যেত কৃতদাসদের। “বুচার অব আফ্রিকার” এই দেশে, এই নদীতেই সেই সময় আবিস্কার হয়েছিল একটি রক্তের মতো লাল মাছের। পরবর্তীতে যা জনপ্রিয় হয়েছিল রেড জুয়েল সিকলিড নামে। তবে রেড জুয়েল সিকলিড বলতে কিন্তু একটা মাছকে বোঝায় না, আসলে অনেকগুলো মাছের সাধারণ নাম ইংরাজি নাম ওটা। ল্যাটিনে সবাই হেমিক্রোমিস গোত্রের, কেউ Hemichromis bimaculatus, কেউ Hemichromis lifalili, কেউ Hemichromis guttatus. তবে নাম যাই হোক স্বভাব চরিত্র, আচার আচরণ, খাদ্যাভ্যাস অনেক কিছুই একই রকম।কঙ্গো নদীর অববাহিকার অরন্যের মধ্যে যে ছোটো ছোটো নদী সেখানেই এদের দেখতে পাওয়া যায় । পোকামাকড়, মাইক্রোওয়ার্ম এসব খেয়ে টিকে থাকে। তবে ছোটো নদীতে থাকলেও এদের দরকার যথেষ্ট অক্সিজেনযুক্ত জল। সাধারণত অগভীর পরিস্কার জলই এদের পছন্দ । আফ্রিকার বৃষ্টি অরন্যে বেশিরভাগ নদীর pH সাতের নীচে, TDS ১৫০-২০০ কাছাকাছি এবং ঐ অঞ্চলের ঋতু পরিবর্তন খুব একটা হয় না। ফলে সারাবছরই উষ্ণ (২৬-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং আর্দ্র (২৫০-৩৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত) । এই পরিবেশ যেমন একটি সিকলিডের পক্ষে বেঁচে থাকার জন্য উপযোগী তেমনি বংশবিস্তারের জন্যেও খুব আদর্শ। তাই এদের বংশবিস্তার হয় খুব দ্রুত । পাঁচ থেকে সাড়েপাঁচ ইঞ্চির এই ছোট্ট মাছটি সাধারণত নিজেরাই নিজেদের সঙ্গী নির্বাচন করে এবং সারাজীবন একসাথে থাকে। একত্রে পাতা, কাঠের টুকড়ো , পাথরের খোদল ইত্যাদিকে অবলম্বন করে বাসা বানায়, ডিম পাড়ে, এবং একসাথে বাচ্চা লালন পালন করে । বাচ্চাদের জন্ম দেওয়ার সময়ই এদের গায়ের রং রক্তের মতো লাল হয়ে যায়, এবং পুরুষ মাছের গায়ে ফুটে ওঠে অসংখ্য মুক্তোর মতো উজ্জ্বল নীল রঙের পার্লিং , স্ত্রীর গায়ের রং পুরুষদের তুলনায় গাঢ় হয় বটে , কিন্তু পার্লিং ততটা হয় না। তবে দুজনেই একসাথে যে রং দেখায় তা চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বিশেষত একে অপরের ইমপ্রেস করানোর জন্য পাখনা ফুলিয়ে নাচ দেখার মতো বিষয়। •• অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখতে হলে : একজোড়া মাছের জন্য নূন্যতম ৫০ লিটার জল ধরে এরকম অ্যাকোয়ারিয়াম যথেষ্ট। সাবস্ট্রেট হিসেবে সুক্ষ বালিই সবচেয়ে ভালো। সাথে কিছু ডালপালা, পাথর ইত্যাদি দিয়েও সাজানো যেতে পারে। খাবারের ব্যাপারে যেহেতু বাছবিচার করে না তাই ড্রাই থেকে লাইভ সব ধরনের খাবারই সোনামুখ করে খায়। অ্যাকোয়ারিয়ামে নিজেদের পছন্দমত জায়গা দখল করে সেটিকে হিংসাত্মক পদ্ধতিতে দখল করার ব্যাপারে এদের সুনাম সুবিদিত। তাই ছোট সাইজের কোন সমমেজাজি রিভার সিকলিডই এদের উপযুক্ত পার্টনার, তবে কমিউনিটিতে রাখতে হলে অনেক বড় ট্যাঙ্ক দরকার সেটা বলাই বাহুল্য। তাছাড়াও প্রতিষ্ঠিত জোড়ার মাসে দু মাসে বাচ্চা দেওয়ার অভ্যাস একসাথে আনন্দ ও দুঃখ দুইয়ের কারণই হতে পারে। যেহেতু এরা নিরক্ষীয় অঞ্চলের মাছ তাই ঋতু পরিবর্তনের অভ্যাস থাকে না, সেজন্য এখানকার শীতকাল ওদের জন্য কষ্টের। শীতকালে হিটার ব্যবহার তাই খুব জরুরি। অ্যাকোয়ারিয়াম ট্রেডে মাছটি দীর্ঘদিন ধরে আছে, এবং আমাদের হবিতে দায়িত্বজ্ঞানহীন লোকের সংখ্যা কম নয় তাই পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই আজ এরা ইনভেসিভ প্রজাতি এবং স্থানীয় মাছের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। উত্তর আমেরিকার কিছু দেশ তো বটেই এমনকি দক্ষিণ ভারতেরও কিছু জায়গাতেও এদের প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা তথ্যবদ্ধ করা গেছে। তাই সাধু সাবধান। এই পর্যন্ত বলে আমার কথা থামালাম, এবার কমেন্ট সেকশনে আপনার বলার পালা, আরও কিছু জিজ্ঞাস্য থাকলে কমেন্ট করতেই পারেন , তালি ও গালি উভয় স্বাগত। ধন্যবাদ।

We are accepting the entries for IBAC

X